এমভি আব্দুল্লাহ উদ্ধারে অভিযানের প্রস্তুতি সোমালি ও আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর, মালিকপক্ষের বিরোধিতা

এমভি আব্দুল্লাহ উদ্ধারে অভিযানের প্রস্তুতি সোমালি ও আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর, মালিকপক্ষের বিরোধিতা

বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আব্দুল্লাহ ও এর নাবিকদের উদ্ধারে অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল সোমালিয়ার পুলিশ ও আন্তর্জাতিক নৌবাহিনী। পান্টল্যান্ডের আঞ্চলিক পুলিশ বাহিনীর বরাত দিয়ে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। খবরে বলা হয়েছে, ভারতীয় কমান্ডোরা সম্প্রতি ওই এলাকায় জলদস্যুদের হাত থেকে আরও একটি জাহাজ উদ্ধার করে। এর দুই দিনের মাথায়ই এবার এমভি আব্দুল্লাহ ও এর নাবিকদের বাঁচাতে অভিযানের খবর পাওয়া গেলো। তবে এ অভিযানের বিরোধিতা করেছে এমভি আব্দুল্লাহর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কেএসআরএমের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা। তিনি পরিস্থিতিতে জোরপূর্বক হস্তক্ষেপের কঠোর বিরোধিতা করেছেন। জানিয়েছেন, তারা এ সংকটের সমাধান চান সমঝোতার মাধ্যমে।

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে তিনি বলেছেন, এক্ষেত্রে কোম্পানি কোনো সামরিক অভিযানকে সমর্থন করে না। কারণ, এর ফলে আমাদের নাবিকদের জীবন ঝুঁকিতে পড়তে পারে। তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট নৌবাহিনীগুলোকে জোরপূর্বক কোনো হস্তক্ষেপ না করার জন্য জোরালো অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ।

আলোচনা বা সমঝোতার মাধ্যমে আমরা এই সংকটের সমাধান করতে চাই।

গত ১৪ই মার্চ সোমালিয়া উপকূলের কাছে পৌঁছায় এমভি আব্দুল্লাহ। এরপর জলদস্যুরা জাহাজটির অবস্থান পরিবর্তন করে দু’বার। সূত্রগুলো বলেছে, বর্তমানে সোমালিয়ার গাদাবজিরান উপকূল থেকে প্রায় ৪ নটিক্যাল মাইল দূরে নোঙর করে রাখা হয়েছে আব্দুল্লাহকে। খবরে বলা হচ্ছে, সোমবার পর্যন্ত জাহাজটির মালিকানা প্রতিষ্ঠান বা তৃতীয় কোনো পক্ষের সঙ্গে মুক্তিপণ নিয়ে যোগাযোগ করেনি জলদস্যুরা। জাহাজ চলাচল ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সময়ক্ষেপণ অস্বাভাবিক কিছু নয়। কারণ, মুক্তিপণের পরিমাণ ঠিক করতে এবং পরিস্থিতি মূল্যায়ন করতে সময় প্রয়োজন দস্যুদের। এ জন্যই হয়তো যোগাযোগ করছে না।

দুটি নির্ভরযোগ্য সূত্র বলেছে, জাহাজটি হাইজ্যাক হওয়ার পরপরই বৃটেনভিত্তিক ইনস্যুরেন্স কোম্পানি পিঅ্যান্ডআই ক্লাব বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলা বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ক্রাইসিস ২৪’কে পরিস্থিতি মূল্যায়ন ও প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা নিতে আহ্বান জানায়। কেএসআরএমের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা ১৬ই মার্চ বলেন, তাদের আরেকটি জাহাজ এমভি জাহান মনি হাইজ্যাক হয়েছিল ২০১০ সালে। তখন প্রথম যোগাযোগ করেছিল জলদস্যুরাই। ওই বছরের ডিসেম্বরে আরব সাগর থেকে হাইজ্যাক হয়েছিল জাহান মনি।

গত ১২ই মার্চ ২৩ নাবিকসহ এমভি আব্দুল্লাহকে হাইজ্যাক করে জলদস্যুরা। নাবিকরা সবাই বাংলাদেশি। প্রায় এক দশক ধরে চুপচাপ থাকার পর গত নভেম্বর থেকে আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠে জলদস্যুরা। পরপর ২০টিরও বেশি আক্রমণ চালিয়েছে তারা। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি আক্রমণে সফলও হয়েছে।

শনিবার ভারতীয় নৌবাহিনী একটি পণ্যবাহী জাহাজ উদ্ধার করেছে। মালটার-পতাকাবাহী এমভি রুয়েন নামের ওই জাহাজটি গত ডিসেম্বরে হাইজ্যাক হয়েছিল। ভারতীয় সেনারা এর ১৭ নাবিককে মুক্ত করে এবং ৩৫ জলদস্যুকে গ্রেপ্তার করে। পান্টল্যান্ড সোমালিয়ার একটি আধা-স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল। সেখানে অনেকগুলো জলদস্যু দলের ঘাঁটি রয়েছে। ওই এলাকার পুলিশ বাহিনী বলেছে, এমভি আবদুল্লাহকে দখল করে থাকা জলদস্যুদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর অভিযানের একটি পরিকল্পনা তারা জানতে পেরেছে। সে কারণে তারা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে এবং অভিযানে অংশ নিতেও প্রস্তুত রয়েছে।

২০১১ সালের দিকে সবথেকে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠে সোমালিয়ার দস্যুরা। সে সময় তাদের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়। মুক্তিপণ হিসেবে দস্যুরা হাতিয়ে নিয়েছিল শত শত মিলিয়ন ডলার।