দালালের ফাঁদে যুবকরা নিঃস্ব

দালালের ফাঁদে যুবকরা নিঃস্ব

দালাল চক্রের ফাঁদে পড়ে শেরপুর সদর উপজেলার কুঠরাকান্দা গ্রামের ৩২ যুবক মালয়েশিয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করার অভিযোগ উঠেছে। এরই মধ্যে পাচারের স্বীকার চার যুবক নিজ পরিবারের সহায়তায় দেশে ফিরে এসেছেন। তারা হলেন-কুঠারাকান্দা গ্রামের সাজিবুর রহমান ও সুজন মিয়া, জঙ্গলদী গ্রামের হাসু এবং সাপমারি গ্রামের তৌহিদুল ইসলাম। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী সাজিবুর রহমান ২৮ মার্চ শেরপুর মানবপাচার ট্রাইব্যুনাল আদালতে পাচারকারী চক্রের মূলহোতা আলামিনসহ তার পরিবারের পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আলামিনের সহযোগীরা শুক্রবার রাতে ভুক্তভোগী ওই যুবকের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। ঘটনার পর থেকে মামলার বাদী সাজিবুর শেরপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তার শরীরে বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে।

এদিকে বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেতে সরকারের কাছে আকুল আবেদন জানিয়েছে বাকি ভুক্তভোগীদের পরিবার। মামলার বিবরণ ও ভুক্তভোগীদের পরিবার জানায়, কুঠরাকান্দা গ্রামের সবজি ব্যবসায়ী আরশাদ আলীর দুই ছেলে অভিযুক্ত আল-আমিন ও আরমান আলী বেশ কয়েক বছর আগে মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান। কিছু দিন পর দেশে ফিরে তারা মালয়েশিয়ায় একটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন বলে প্রচার করেন। পাশাপাশি অভিযুক্ত আল-আমিন ব্রেক্স ইনফিনিটি এসডিএন বিএইচডি নামের একটি কোম্পানির পরিচালক পরিচয়ে ভিজিডিং কার্ড দেখিয়ে গ্রামের সহজ-সরল মানুষের বিশ্বাস অর্জন করে। পরে নিজ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে মোটা অঙ্কের বেতনে কিছু লোক নেবে বলে জানায়। এতে ওই গ্রামের সহজসরল ৩২ যুবক জমিজমা বিক্রি করে, এমনকি বিভিন্ন এনজিও থেকে ধার করে প্রতিজন সাড়ে ৪ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা তুলে অভিযুক্ত আল-আমিন ও তার পরিবারের হাতে দেন।

২০২৩ সালের জুন থেকে জুলাই মাসের মধ্যে তাদের মালয়েশিয়া পাঠায় অভিযুক্ত আল-আমিন। মালয়েশিয়া যাওয়ার পর ভুক্তভোগীরা জানতে পারেন তাদের বিল্ডিং নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়েছে এবং সেখানে তাদের মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে তাদের বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। পরে সেখানে নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে দু-মাস কাজ করার পর তাদের কাজও বন্ধ হয়ে যায়। পরে অভিযুক্ত আল-আমিন তাদের জানান, মালয়েশিয়ায় বর্তমানে কাজ নেই। তাদের কিছু দিন বসে থাকতে হবে। থাকা-খাওয়া বাবদ তাদের কাছে আরও এক লাখ টাকা দাবি করে। এ ঘটনায় যারাই প্রতিবাদ করে তাদের ওপর নির্যাতন চালায় আল-আমিন ও তার চক্রের সদস্যরা।

ভুক্তভোগী সাজিবুর অভিযোগে জানায়, মালয়েশিয়ায় একটি ছোট কক্ষে বন্দিদশায় অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে। তার সঙ্গে সেখানে পাচার হওয়া ৩২ যুবক ছিল। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ব্রেক্স ইনফিনিটি এসডিএন বিএইচডি নামে কোম্পানিটি মূলত একটি রিক্রুটিং এজেন্সি। যার পরিচালক বাপ্পি চৌধুরী। যিনি বর্তমানে মালয়েশিয়ায় বসবাস করেন। তিনি জানান, অভিযুক্ত আল-আমিন এই এসেন্সির কেউ না।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত আল-আমিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে মালয়েশিয়া যোগাযোগ করলে তিনি ভুক্তভোগীদের মালয়েশিয়া আনার কথা স্বীকার করলেও তাদের ফ্যাক্টরিতে চাকরি দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, ৩২ জনকে নির্মাণ শ্রমিক হিসাবে আনা হয়েছে, তবে প্রত্যেকের কাজ থেকে সাড়ে ৪ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেন এবং তিনি স্বীকার করেন বর্তমানে কোনো কাজ না থাকায় তাদের কাজ দিতে পারছেন না। এজন্য তাদের একসঙ্গে রাখা হয়েছে এবং খাবারের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। নির্যাতনের অভিযোগ অসত্য বলে দাবি করেন। শেরপুর সদর থানার ওসি (তদন্ত) মো. শফিকুল ইসলাম জানান, মানবপাচারের বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ পেয়েছি এবং মামলার বাদীর ওপর হামলার ঘটনায় হাসপাতালে খোঁজখবর নিয়েছি। আমাদের তদন্ত চলছে, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।