শিক্ষক সংকট : শূন্যই থাকবে ৬৬ হাজার পদ

শিক্ষক সংকট : শূন্যই থাকবে ৬৬ হাজার পদ

দীর্ঘ অপেক্ষার পর বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) প্রকাশ করে ৫ম গণবিজ্ঞপ্তি। প্রতিষ্ঠানটি শূন্য পদের ভিত্তিতে ৯৬ হাজার ৭৩৬ শিক্ষকের চাহিদা প্রেরণ করে। কিন্তু বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রার্থী না থাকায় প্রায় ৬৬ হাজার শিক্ষকের পদ পূরণ হবে না। শিক্ষক চাহিদা বিপুল হলেও বয়সের কারণে আবেদন করতে পারছেন না চাকরিপ্রত্যাশীরা। চাকরির আবেদনে যাদের ৩৫ বছরের কম তারাই আবেদন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে শুধুমাত্র ৩৫ বছর না হওয়া ১৬তম এবং ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন সনদধারীরা আবেদন করতে পারবেন।

আগামী ১৭ই এপ্রিল থেকে শুরু হবে আবেদন। গণবিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, দেশের স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৪৩ হাজার ২৮৬ পদে এবং মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানে ৫৩ হাজার ৪৫০ পদে শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হবে। আবেদন চলবে ৯ই মে পর্যন্ত। পদ ফাঁকা থাকা সত্ত্বেও বয়সে ছাড় মেলেনি প্রার্থীদের। এনটিআরসিএ কর্তৃক বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত গণবিজ্ঞপ্তিতে বয়সের ছাড় দেয়া হয়।

করোনাকালীন সময়ে দেয়া হয়েছিল ৩৯ মাসের ছাড়। দ্বিতীয় গণ বিজ্ঞপ্তিতে বয়সের ছাড় ছিল ৬ মাস, তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে ১৫ মাস। এ ছাড়া ৩টি বিশেষ গণবিজ্ঞপ্তিতে যথাক্রমে ৭, ১১ এবং ২৫ মাস ছাড় ছিল। করোনার কারণে কালক্ষেপণ না হওয়া সত্ত্বেও মিলেছিল এই সুবিধা।

সর্বশেষ চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি ও সেসিপ গণবিজ্ঞপ্তিতে করোনাকালীন বয়সের ছাড় ছিল ৩৯ মাস। অথচ করোনার কারণে ভুক্তভোগী ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধন প্রার্থীগণের মেলেনি বয়সে ছাড়। আইনে আছে শিক্ষক হিসেবে নিবন্ধন ও প্রত্যয়নের জন্য প্রার্থীদের যোগ্যতা নিরূপণ ও এ বিষয়ে প্রদানের উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষ প্রতি পঞ্জিকা বর্ষে অন্তত একবার পরীক্ষা গ্রহণ করিবে। এই নিয়ম অনুযায়ী চললে আরও অন্তত চারটি গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হতো। আর শূন্য থাকতো না শিক্ষকের এতগুলো পদ।

২০২১ সালে ১৬তম শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষার চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। এতে মোট ১৮ হাজার ৫৫০ জন প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়েছেন। উত্তীর্ণদের মধ্যে ৮০ ভাগ নিবন্ধনধারীরই চাকরি হয়েছে। আর ২০২৩ সালের ২৮শে ডিসেম্বর ১৭তম শিক্ষক নিবন্ধনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করে। এতে উত্তীর্ণ হন ২৩ হাজার ৯৮৫ জন। তবে উত্তীর্ণদের মধ্যে অনেকেরই বয়স ৩৫ বছর অতিক্রম হয়ে গেছে। ফলে দুটি পরীক্ষায় ৩০ হাজারের মতো প্রার্থী ৫ম গণবিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করতে পারবেন। ফলে ৬৬ হাজারের বেশি পদে আবেদন করার মতো প্রার্থীই পাবে না এনটিআরসিএ।

২০২২ সালে ৬৮ হাজার ৩৯০ জন শিক্ষক নিয়োগের চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছিল এনটিআরসিএ। সে সময়ও মাত্র ২৭ হাজার ৭৪ জন নিয়োগ পেয়েছিলেন। বাকি সব পদ শূন্য ছিল। এর আগে ২০২১ সালের ৩০শে মার্চ তৃতীয় ধাপে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ৫৪ হাজার ৩০৪ জন শিক্ষক নিয়োগে তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। সেবার সুপারিশ পেয়েছিলেন ৩৪ হাজার ৭৩ জন।

এ বিষয়ে এনটিআরসিএ’র সচিব ওবায়দুর রহমান বলেন, অনেক পদ শূন্য থাকলেও আমাদের প্রার্থী নেই। এজন্য হয়তো পদ ফাঁকা থাকবে। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই।

বেসরকারি এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক শূন্যতারোধে ও মসৃণভাবে পরিচালনার জন্য গঠন করা হয়েছিল এনটিআরসিএ। কিন্তু তারা শিক্ষক শূন্যতা পূরণে বারবার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। চাকরিপ্রত্যাশীরা বয়স ছাড়, গণবিজ্ঞপ্তিসহ নানা কারণে করে আসছেন আন্দোলন। তবে এনটিআরসিএ থেকে সুফল না আসায় বন্ধ করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। শিক্ষক নিবন্ধন সনদের পরিবর্তে সরাসরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ পদ্ধতি শুরুর পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে সরকারি কর্ম কমিশনের আদলে গঠিত একটি কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে বর্তমানে আইন তৈরির কাজ চলছে। ২০০৫ সাল থেকে শিক্ষক নিয়োগের জন্য নিবন্ধন সনদ দিয়ে আসছে এনটিআরসিএ। প্রথম দশকে শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডি ও ম্যানেজিং কমিটি। তবে ২০১৫ সালের ৩০শে ডিসেম্বর এতে পরিবর্তন আসে। সনদ দেয়ার পাশাপাশি নিয়োগের জন্য সুপারিশের ক্ষমতা দেয়া হয় এনটিআরসিএকে।