দিনাজপুরে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত

দিনাজপুরে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত

আয়তনের দিক দিয়ে দেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ ময়দান দিনাজপুরের গোর-এ শহীদে শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারের ঈদের জামাতে ৬ লক্ষাধিক মুসল্লি অংশগ্রহন করে বলে জানিয়েছে আয়োজক কমিটি। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন যাতে আসতে পারেন, সেজন্য ছিল দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থাও।

কঠোর নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে সকাল ৭টা থেকেই মুসল্লিরা ১৭টি প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবেশ করতে শুরু করেন মাঠে। তাদেরকে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশি করে প্রবেশ করানো হয়। সকাল ৯টায় অনুষ্ঠিত এই জামাতে দিনাজপুর জেনারেল হাসপাতাল জামে মসজিদের ইমাম শামসুল হক কাসেমি।

নামাজে ভারপ্রাপ্ত প্রদান বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম এমপি, জেলা প্রশাসক শাকিল আহমেদ, পুলিশ সুপার শাহ ইফতেখার আহমেদ।

এবার দুটি ঈদ বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা ছিল। এছাড়াও বিভিন্ন জেলা থেকেও এসেছেন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। ঈদগাহ মাঠের মুসল্লিদের জন্য ছিল কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী, আনসার, এনএসআই, ডিজিএফআইসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ইউনিটের সদস্যরা মোতায়েন ছিল। ৩০টি সিসি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার ও ড্রোনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মাঠটি পর্যবেক্ষণে ছিল। সকালে মাঠের সবকিছু তল্লাশি করে র‌্যাবের একটি ইউনিট। পরে মুসল্লিদের প্রবেশ করানো হয়।

ঈদের এই জামাতে অংশগ্রহণ করেন ভারতের গঙ্গারামপুর এলাকার ওসমান আলী বলেন, ‘আমার নিয়ত ছিল অনেক দিনের। আল্লাহ তা কবুল করলেন। আমি টিভির মাধ্যমে যখন জানতে পাই এই মাঠ সম্পর্কে, তখন থেকেই আসার কথা চিন্তা করি। গত দু’দিন আগে আমার এক আত্মীয়ের বাড়িতে ভারত থেকে এসেছি।’

কাহারোল থেকে আসা সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘৩০টা রোজা রাখার পর ঈদ নামক নেয়ামত দান করেছেন মহান আল্লাহ। এতোবড় মাঠে নামাজ আদায় করলাম, দোয়া করলাম। কার মাধ্যমে আমাদের দোয়া কবুল হয়ে গেছেন।’

বীরগঞ্জ থেকে আসা অবসরপ্রাপ্ত সমাজসেবা কর্মকর্তা জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমাদের গোর-এ শহীদ ময়দানে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছে। বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে এবং বিভিন্ন দেশ থেকে এমনকি ভারত থেকেও অনেকে এখানে এসেছেন। আমরা খুবই আনন্দিত।’

এরশাদুল ইসলাম বলেন, ‘নীলফামারী থেকে এবারই প্রথম এসেছি। এখানে এসে দেখলাম যে, দূর-দূরান্ত থেকে মানুষজন আসায় পুরো মাঠ ভরে গেছে।’

ইমাম শামসুল হক কাশেমি বলেন, ‘এখানে অসংখ্য মুসল্লি আসেন। বলা হয়েছে, যেখানে ৪০ জন মোমিন-মুত্তাকি লোক থাকেন, সেখানে কমপক্ষে একজন বা দুইজন আল্লাহ রসুলের প্রিয় বান্দা থাকেন। তাদের উসিলায় আমাদের দোয়া কবুল হয়। এখানে তো লাখ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণ হয়েছিল। আল্লাহ কারও না কারও উসিলায় আমাদের দোয়া কবুল করে নিবেন। আগামীতে এই ২২ একর মাঠ পরিপূর্ণ হয়ে পাশের যে আরও ২৫ একর মাঠ রয়েছে, সেখানেও যেন লোক সমাগম হয়ে পরিপূর্ণ হয়ে উঠে এই কামনা করি।’

ঈদগাহ মিনার ও ময়দানের পরিকল্পনাকারী ও প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম বলেন, ‘দেশের সর্ববৃহৎ ঈদের জামাত শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারে ৬ লক্ষাধিক মুসল্লি অংশগ্রহণ করেছে। আগামীতে মুসল্লির সংখ্যা আরও বাড়বে এবং গোটা বিশ্বের মুসল্লিরা এখানে আসবেন। ৬ লাখ মুসল্লির নামাজ মক্কা-মদিনার পরে এতবড় ঈদের জামাত হয় না।’

দিনাজপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গোর-এ শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ২০১৭ সালে নির্মিত ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ঈদগাহ মাঠটি ঐতিহাসিক নিদর্শন ও মনোরম কৃতির সৌন্দর্য ও নান্দনিক হিসেবে নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। এই ৫০ গম্বুজের দুই ধারে ৬০ ফুট করে ২টি মিনার, মাঝের দুটি মিনার ৫০ ফুট করে। ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহেরাব (যেখানে ইমাম দাড়াবেন) তার উচ্চতা ৪৭ ফিট। এর সঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। এছাড়া ৫১৬ ফিট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। পুরো মিনার সিরামিক্স দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলে ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে উঠে। ২০১৭ সাল থেকেই প্রতিবার এখানে ঈদের নামাজ আদায় করছেন দিনাজপুর জেলাসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা-উপজেলার ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। তবে করোনার প্রকোপের ফলে গত দুই বছরে এই মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়নি। করোনার প্রকোপ কমে যাওয়ার পর আবারও পরিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ঈদের জামাত।