টিসিবির চালে দুর্গন্ধ-ওজনেও কম, অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ

টিসিবির চালে দুর্গন্ধ-ওজনেও কম, অভিযোগ আমলে নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরীর রায়গঞ্জ ইউনিয়নে টিসিবি’র দুর্গন্ধ ও পচা চাল বিতরণ করায় সুবিধাভোগীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের দাবি, অভিযোগ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এদিকে উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার বলছেন, এসব চাল গুদাম থেকে দেয়া দেয়নি। এছাড়াও ওজনে কম দেয়ারও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্বল্পমূল্যে সাধারণ মানুষের মাঝে প্রতিমাসে একবার করে বিতরণ করা হয় ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’র পণ্য। সোমবার (২৯ এপ্রিল) নাগেশ্বরী উপজেলার রায়গঞ্জ ইউনিয়নে গত মার্চ মাসের টিসিবি’র পণ্য বিতরণ করা হয়। এবারে তিন হাজার ২৬০ জন সুবিধাভোগীর মাঝে ৩৪০ টাকায় এক কেজি চিনি, দুই কেজি মসুর ডাল ও পাঁচ কেজি করে চাল দেয়া হয়। কিন্তু যেসব চাল বিতরণ করা হয়েছে সেসব খাওয়ার অযোগ্য। এছাড়াও পণ্য ওজনে কম দেয়ার অভিযোগও ওঠেছে।

সোমবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে দেখা যায়, পরিষদ ভবন থেকে বিতরণ করা হচ্ছে টিসিবির পণ্য। একাধিক সুবিধাভোগী অভিযোগ করেন যে চাল দেয়া হচ্ছে সেগুলো দুর্গন্ধে নাকে নেয়া যায় না। কালো পোড়া রঙের চালে পাথর, ইটের টুকরা, ধুলোবালিতে ভরা। ৫০ কেজি ওজনের চালের বস্তা পাঁচ কেজি করে ১০ জন সুবিধাভোগীকে একসঙ্গে দেয়া হয়। তারা বাইরে গিয়ে মাপলে বস্তায় কম পাওয়া যায়।

টিসিবি’র পণ্য নিতে আসা ইউনিয়নের সোনাইরখামার এলাকার শাহাদত হোসেন, বড়বাড়ি এলাকার শাহজাহান আলী, পশ্চিম রায়গঞ্জ এলাকার মামুন মিয়া, সাপখাওয়া এলাকার মমিনসহ অনেকে জানান, তারা সবাই দূর-দূরান্ত থেকে টিসিবির পণ্য নিতে এসেছেন। কিছু টাকা বাঁচাতে আসলেও যে চাল দেয়া হচ্ছে তা পচা। সব পণ্যর ওজনে কম দেয়া হচ্ছে। এমন অভিযোগ সবার।

পশ্চিম রায়গঞ্জ এলাকার আলিউল মণ্ডল বলেন, আমাকে যে চাল দেয়া হয়েছে তা গরুর খাবার। পরে রাগ করে পরিবর্তন করে নিয়েছি। কিন্তু ওইগুলোও পচা।

কথা বলে জানা যায়, রায়গঞ্জ ইউনিয়নে টিসিবির পণ্য বিতরণ করার দায়িত্ব মেসার্স রাশেদ এন্টারপ্রাইজের হলেও চাল বিতরণ করছেন হাসনাবাদ ইউনিয়নের মেসার্স রুস্তম আলী প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী মো. রোস্তম আলী। তিনি বলেন, খাদ্য গুদাম থেকে যে চাল দিয়েছে সেই চাল বিতরণ করছেন তারা। রাশেদ এন্টারপ্রাইজ থেকে তিনি সাব ডিলারি নিয়ে পণ্য বিতরণ করছেন।

এ নিয়ে কথা হলে রায়গঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আরিফুজ্জামান দীপ মণ্ডল ক্ষোভ করে বলেন, এতো নিম্নমানের চাল, যা একেবারেই খাওয়ার অনুপযোগী। এরকম নিম্নমানের চাল দিলে আমদের ও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। বিষয়টি জানিয়েও কোনো কাজ হয় না। এ ডিলারের লাইসেন্স বাতিল করা দাবিও তোলেন তিনি।

এদিকে রাশেদ এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী রাশেদুল ইসলাম বলেন, তিনি নিজে তার ডিলারি পরিচালনা করেন। গুদাম থেকে পাওয়া চাল বিতরণ করছেন তারা।

তবে চাল নিয়ে কথা হলে নাগেশ্বরী উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) আশরাফুল আলম বলেন, আমি চালগুলোর ছবি দেখেছি। এসব চাল আমাদের গুদাম থেকে দেয়া হয়নি। তাহলে কি চাল বদল করে বিতরণ করা হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, তা বলতে পারবো না। তবে চাল আমাদের গুদামের নয়।

জানা গেছে, হাসনাবাদ ইউনিয়নের মো. রোস্তম আলীর মেয়েসহ পরিবারের মধ্যে পাঁচটি টিসিবি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারের নিবন্ধন রয়েছে। এছাড়া আরও পাঁচটি ডিলারি প্রতিষ্ঠানের সাব ডিলার তিনি। এ বিষয়ে আবারও কথা হয় চাল বিতরণকারী রোস্তম আলীর সঙ্গে। তিনি দাবি করেন, ওই চাল খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ডিলারের মাধ্যমে গুদাম থেকে নিয়েছি। অন্য চাল বিতরণ করার প্রশ্নই আসে না। তিনি কতটি ডিলারের দায়িত্বে আছেন জানতে চাইলে বলেন, আমার পরিবারের তিনটা। বাইরেরও তিন চারটা চালাই তাতে কি হয়েছে। কোনো সমস্যা নেই।

এ বিষয়ে নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিব্বির আহমেদ বলেন, রায়গঞ্জ ইউনিয়নে পচা চাল বিতরণের অভিযোগটি জেনেছি। আমরা চালগুলো পরিবর্তন করা চেষ্টা করছি। খাদ্যগুদামে দূর-দূরান্ত থেকে চাল আসছে। সেখানে কোথা থেকে নিম্নমানের চাল ঢুকে গেলে ফেরত পাঠানো কষ্টকর হয়ে যায়। তবে বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে দেখছি।