ট্যানারি শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২২,৭৭৬ টাকা করার প্রস্তাব

ট্যানারি শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২২,৭৭৬ টাকা করার প্রস্তাব

ট্যানারি শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২২ হাজার ৭৭৬ টাকা নির্ধারণ করার প্রস্তাব দিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। কইসঙ্গে মজুরি দেয়ার ক্ষেত্রে গ্রেডিং সিস্টেম যথাযথ করার প্রস্তাব দিয়েছে সংস্থাটি। শ্রমিকদের খাদ্যমূল্য ও মুদ্রাস্ফীতি বিবেচনায় এ প্রস্তাব দিয়েছে সিপিডি।

শনিবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে অবস্থিত সিপিডি কার্যালয়ে ‘ট্যানারি শিল্পে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ ও বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ’ বিষয়ে আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিং ও আলোচনা অনুষ্ঠানে ট্যানারি শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম এ মজুরি প্রস্তাব করে প্রতিষ্ঠানটি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা। প্যানেল আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের (বিটিএ) সভাপতি শাহীন আহমেদ, ভাইস-চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান, ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ ও সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মালেক। সূচনা বক্তব্য দেন অশি ফাউন্ডেশনের ভাইস-চেয়ারম্যান এস এম মোরশেদ। সিপিডি’র সিনিয়র গবেষক তামিম আহমেদ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, চামড়া শিল্পের শ্রমিকদের জন্য প্রথম মজুরি বোর্ড গঠিত হয় ১৯৭০ সালে, তখন ন্যূনতম মাসিক মজুরি ছিল ১১০ টাকা। এরপর ১৯৯৪ সালে, এটা নির্ধারিত হয় ১৪৪০ টাকা, ২০১১ সালে ৮ হাজার ৭৫০ টাকা এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারিত হয়।

সিপিডির গবেষণায় উঠে এসেছে, ৬৯ শতাংশ ট্যানারি মালিক ২০১৮ সালের ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন করেন না। এছাড়া প্রতিবছর শ্রমিকদের ৫ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি পাওয়ার কথা থাকলেও সেটা বাস্তবায়নের হার অনেক কম পাওয়া গেছে।

সিপিডি জানায়, অ্যাংকর মেথডে ৩৫টি ট্যানারির ওপর এই গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে ট্যানারি বা চামড়াশিল্প খাতের একটি শ্রমিক পরিবারের প্রয়োজনীয় খাবারের খরচ মাসে ২০ হাজার ৫৬৪ টাকা, অন্যান্য খরচ ১২ হাজার ৯১৪ টাকা।

শ্রমিকদের কাজের উৎসাহ বৃদ্ধির জন্য সিপিডি ৫টি গ্রেডে শ্রমিকদের পদোন্নতির সুযোগের কথা উল্লেখ করেছে।
তবে সিপিডির প্রস্তাব অনুযায়ী মজুরি বাস্তবায়ন সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ। তিনি বলেন, আগের তুলনায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে এবং রপ্তানিতে চামড়ার ইউনিট মূল্য কমেছে। এছাড়া কাঁচামাল ও গ্যাসের মূল্য বাড়ায় এ খাতে মুনাফা কমেছে। পাশাপাশি সনদ না থাকায় ইউরোপে ভালো দামে চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না তারা। সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে তারা গ্রহণযোগ্য একটি মজুরি কাঠামো নির্ধারণের চেষ্টা করবেন বলে জানান তিনি।

সিপিডি’র এই প্রস্তাবটি তাদের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে মেলেনি বলে জানিয়েছেন ট্যানারি ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আবদুল মালেক। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে এ খাতের সার্বিক অবস্থা উঠে এসেছে। আমরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ২৫ হাজার টাকা ন্যূনতম মজুরি বিষয়ে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছি। প্রস্তাবটি ইতিমধ্যে মালিকপক্ষ ও মজুরি বোর্ডের কাছে দেয়া হয়েছে।

ট্যানারি শিল্পের মজুরির বিষয়ে ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী মোল্লা বলেন, মালিকপক্ষ বলেছে- এতো পরিমাণে মজুরি দেয়া সম্ভব নয়। তবে বোর্ডে আলোচনা করে দেখা হবে মজুরি কতটা বাড়ানো সম্ভব। শিল্পের স্বার্থে মালিক এবং শ্রমিক উভয়ের কথা শুনে মজুরি চূড়ান্ত হবে। ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নে বোর্ড আম্পায়ারের ভূমিকায় থাকবে।