রাঙামাটি, ১১ জুন (জাস্ট নিউজ) : টানা বর্ষণে সড়ক ও পাহাড়ে ধস, ফাটল এবং গাছ উপড়ে পড়ার ঘটনায় আতংক ছড়িয়ে পড়েছে পার্বত্য শহর রাঙামাটিতে। রবিবার সকালে ভারি বৃষ্টিপাত হয়। এরপর থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও সন্ধ্যা নাগাদ তীব্রতা বাড়ায় শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধস, ফাটল এবং গাছ ও বিদ্যুতের পিলার উপড়ে পড়ার খবর আসতে থাকে। সেই থাকে বাড়তে থাকে বৃষ্টির তীব্রতাও।
শহরবাসীকে নিরাপদে সরিয়ে নিতে রাতেই মাঠে নামেন রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ, নেজারত ডেপুটি কালেক্টর তাপস শীলসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা। সঙ্গে ফায়ারসার্ভিসের কর্মীরাও।
রবিবার সকাল থেকেই শহরজুড়ে দফায় দফায় মাইকিং করা হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী মানুষদের সরে যেতে। কিন্তু এই আহ্বানে সাড়া দিয়েছে খুব কম মানুষই।
ফলে সন্ধ্যা থেকেই কার্যত বিদ্যুৎবিহীন শহরে পরিণত হওয়া রাঙামাটির বিদ্যুৎ কখন আসবে জানাতে পারেননি দায়িত্বশীল কর্মকর্তরা।
বিদ্যুত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সবুজ কান্তি মজুমদার জানিয়েছেন, টানা বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা বিপাকে পড়েছে। তারা চেষ্টা করছেন দ্রুত শহরে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করতে।
রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক দিদারুল আলম জানিয়েছেন, শহরের চম্পকনগর, আনসার ক্যাম্প এলাকা, উন্নয়ন বোর্ড এলাকাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে সড়ক ও ভবনের পাশের মাটি সরে পড়া, সড়কের উপর গাছ উপড়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে। গাছ কেটে সড়িয়ে নেওয়ায় এখন সড়ক যোগাযোগ স্বাভাবিক আছে।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ বলেছেন, ‘চারদিক থেকে আতংক এবং টানা বৃষ্টির কারণে আমিও ঘরে বসে থাকতে পারিনি। শহরবাসীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ এবং তড়িৎ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আমার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং কর্মকর্তা কর্মচারীরা সকাল থেকেই রাত অবধি মাঠেই আছে। আমি নিজেও রাতে বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি। মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নেব।’
রাত পৌনে ২টার সময়ও বৃষ্টি হচ্ছিলো শহরে। তবে তীব্রতা ছিলো সন্ধ্যার পরের চেয়ে কিছুটা হলেও কম। কিন্তু ভয় এবং উদ্বেগ নিয়ে রাত জেগেই ছিল শহরবাসী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সতর্কতামূলক নানান পরামর্শ ও পোস্ট দিচ্ছিলেন সবাই। স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের নিষ্ক্রিয়তায় ক্ষোভও প্রকাশ করছিলেন অনেকেই।
২০১৭ সালের ১২ জুন সকাল থেকে মধ্যরাত অবধি টানা ভারিবর্ষণের কারণে সৃষ্ট পাহাড় ধসে রাঙামাটি পৌর এলাকা এবং জেলার কাউখালি, কাপ্তাই, জুরাছড়ি ও রাজস্থলী উপজেলায় অন্তত ১২০ জনের প্রাণহানি ঘটে। এদের মধ্যে ছিলেন পাহাড়ধসে মাটি পড়ে অচল হওয়া রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক চালু করতে যাওয়া ৫ সেনা কর্মকর্তা ও জওয়ান। টানা ১৭ দিন সারাদেশের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিলো পার্বত্য শহর রাঙামাটির।
(জাস্ট নিউজ/জেআর/১০২০ঘ.)