ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল-ভাইস প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

ঝালকাঠি এন এস কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল-ভাইস প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ

 

ঝালকাঠি, ৩০ জুলাই (জাস্ট নিউজ) : ঝালকাঠি জেলার বাসন্ডায় অবস্থিত এন এস কামিল মাদরাসার (নেছারাবাদ কামিল মাদরাসা) প্রিন্সিপাল এবং ভাইস প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের অনিয়মের অভিযোগ করেছেন ওই মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

অভিযোগ রয়েছে- সম্প্রতি ওই মাদ্রাসার দাখিল আলিমসহ বিভিন্ন শেণীতে অধ্যয়নরত প্রায় ২০ জন ছাত্রকে বিনা কারণে বহিষ্কার করা হয়েছে। ছাত্র গুলো এখন পরীক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে।

বহিষ্কার হওয়া ছাত্র এবং একাধিক শিক্ষকদের অভিযোগ, প্রিন্সিপাল এবং ভাইস প্রিন্সিপাল ‘তাদের যখন যা খুশি তাই করেন’। কোন কারণ ছাড়াই তারা তাদেরকে (ছাত্রদের) বহিষ্কার করেছে। এর আগেও ওই মাদ্রাসা থেকে কয়েকজন ছাত্রকে ‘কোন কারণ ছাড়াই’ বহিস্কার করা হয়েছে এবং তাদের পরীক্ষা দেয়ারও সুযোগ দেয়া হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষক এবং ছাত্ররা জানায়, মাদ্রাসাটি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত সহস্রাধিক ছাত্রকে বিভিন্ন সময়ে অযৌক্তিকভাবে কোন কারণ ছাড়াই বহিষ্কার করা হয়েছে। বহিষ্কার হওয়া ছাত্ররা বিভিন্ন ধরনের হয়রানির স্বীকার হয়েছেন।

ছাত্রদের কেন বহিষ্কার করা হয়েছে? তা জানতে এন এস কামিল মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আবু জাফর সালেহীর সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি ছাত্রদের এ বিষয়ে কিছুই জানি না, এসব বিষয় সব কিছুই ভাইস প্রিন্সিপাল দেখেন।

ছাত্রদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ আছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, না এমন কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নেই। তবে কিছু ছাত্রকে সন্দেহ করা হয়েছে যে তাদের সাথে শিবিবের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততা থাকতে পারে।

ছাত্ররা ছাত্র শিবিরের রাজনীতি করে আপনাদের কাছে এমন কোন প্রমাণ আছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এমন কোন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই। তবে দেশের অস্থির পরিবেশে ক্যাম্পাসে যাতে ঝামেলা না হয় সেজন্য শিবির সন্দেহ হওয়ায় তাদেরকে বহিষ্কার করা হতে পারে। এটা ভাইস প্রিন্সিপালই ভালো বলতে পারবেন।

কাউকে শিবির সন্দেহ হলেই কোন প্রমাণ ছাড়া বহিস্কার করা হবে- এমন কথা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালায় বলা আছে কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিমালায় এ ধরণের কথা বলা নেই।’

এসময় তিনি বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন জানিয়ে ফোনের লাইনটি কেটে দেন এরপর মাদ্রাসায় তিনি একটি ছোট মিটিং করেন। মিটিংয়ের পর তিনি প্রতিবেদককে ফোন করে বলেন, আপনি মাদ্রাসায় আসেন। এসব বিষয় নিয়ে ফোনে কথা বলতে সবাই নিষেধ করেছে। মাদ্রাসায় আসলে কথা বলবো আমি ফোনে কথা বলবো না।

এর আগে ওই মাদ্রাসার দুই ছাত্রকে শিক্ষকরা বলাৎকার করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রিন্সিপাল আবু জাফর সালেহী ঘটনাটি এড়িয়ে গিয়ে প্রতিবেদককে আবারো মাদ্রাসায় যেতে বলেন এবং ফোনের লাইনটি কেটে দেন। এরপর একাধিকবার ফোনে তার সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি আর ফোন রিসিভ করেননি।

জানা গেছে, এর আগে ওই মাদ্রাসার মাদারীপুরী হুজুর নামে পরিচিত এক শিক্ষক এক ছাত্রকে বলাৎকার করেছে। পরে ওই ছাত্র গুরুতর অসুস্থ হলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। এ ঘটনা মাদ্রাসায় জানাজানি হলে ওই ছাত্রের অবিভাবকরা ক্ষুব্দ হয় এবং অভিযুক্ত শিক্ষককে আইনের আওতায় এনে বিচার ও শাস্তি দাবি করেন। কিন্তু মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত শিক্ষকের কোন বিচার করেনি এবং শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন ধরনের ব্যবস্থাও নেয়নি।

আরো অভিযোগ রয়েছে ওই মাদ্রাসার আরো এক (সাবেক নওগাঁর হুজুর নামে পরিচিত) বেসরকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধেও বলাৎকারের অভিযোগ উঠেছিলো। তখন অভিযোগ ওঠার পরপরই ঘটনার কোন তদন্ত না করেই তাকে বহিষ্কার করা হয়। কিন্তু মাদারীপুরী হুজুর ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি খলিলুর রহমান নেছারাবাদী পীরের খুব কাছের লোক হওয়ার কারণে তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে একাধিক ছাত্র এবং শিক্ষরা জানিয়েছেন।

এদিকে মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল শহিদুল ইসলামের সাথে এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

ঝালকাঠী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আতহার মিয়াকে ফোনে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, এধরনের অভিযোগ আমি আপনার কাছে এখন শুনেছি। ছাত্রদের বিনা কারণে বহিষ্কার করা কোনভাবেই গ্রহণ যোগ্য নয়। তিনি বলেন, বিষয়টি আমি তদন্ত করে দেখবো এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

এসব বিষয়ে ছাত্ররা থানায় কোন অভিযোগ করেছি কিনা? জানতে চাইলে ঝালকাঠী সদর থানার ওসি শোনিত কুমার গায়েন বলেন, আমি এখানে নতুন এসেছি। এখন পর্যন্ত এ ধরনের অভিযোগ পাইনি। বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখবো।

এবিষয়ে জানতে মাদ্রাসার সভাপতি খলিলুর রহমান নেছারাবাদী পীরের সাথে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। পীরের পিএস ফোন রিসিভ করেই ব্যস্ততা দেখিয়েছেন।

(জাস্ট নিউজ/এমআই/১০১৫ঘ.)