সারা দেশে বাস চলাচল বন্ধ, বিপাকে যাত্রীরা

সারা দেশে বাস চলাচল বন্ধ, বিপাকে যাত্রীরা

ঢাকা, ৩ আগস্ট (জাস্ট নিউজ) : দুর্ঘটনায় নরহত্যার জন্য বাসচালক ও তাদের সহকারীদের মৃত্যুদণ্ড ও যাবজ্জীবন সাজার বিধান রেখে যে সড়ক পরিবহন আইনের খসড়া করা হয়েছে। এরই মধ্যে আজ সারা দেশে বাস চলাচল বন্ধ রেখেছেন মালিক-শ্রমিকরা।

রাজধানীর কুর্মিটোলার বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের দুটি বাসের রেষারেষির কারণে দুই শিক্ষার্থীর প্রাণহানির ঘটনায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের দাবির মুখে সরকার দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা সড়ক পরিবহন আইনের খসড়াটি পাস করার কথা জানায়। এটি খুব দ্রুতই সংসদে পাস হতে যাচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

এই প্রস্তাবিত আইনের প্রতিবাদেই আজ শুক্রবার সকাল থেকে সারা দেশে বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়ার কথা জানিয়েছে বাস মালিক ও শ্রমিকরা। এ ছাড়া তারা সড়কে যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের কারণও দেখিয়েছেন।

সকাল থেকে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় বাস চলাচল বন্ধের ডাক দিয়েছে পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। ফলে পরিবহন সংকটে দুর্ভোগে পড়েছে সাধারণ যাত্রীরা।

রাজশাহীতে সকাল থেকেই সব রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়েছে। আন্দোলনের সুযোগে দুষ্কৃতিকারীরা বাস ভাঙচুর করছে। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে যানবাহন চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

দ্বিতীয় দিনের মত নৌ-মন্ত্রী শাজাহান খানের জেলা মাদারীপুর থেকে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত দূরপাল্লার পরিবহন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাস মালিক ও শ্রমিকরা।

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে সিলেট থেকে দূরপাল্লার সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। যাত্রীরা বাস টার্মিনালে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে বাস না পেয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।

লক্ষ্মীপুরে অনির্দিষ্টকালের জন্য পরিবহন ধর্মঘট ও কর্মবিরতি পালন করা হচ্ছে। বন্ধ রাখা হয়েছে দুরপাল্লাগামী ছোট বড় যাত্রীবাহী বাস। শুক্রবার সকাল থেকেই এ কর্মসূচি পালন করছেন লক্ষ্মীপুরের পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা।

এদিকে বাস বন্ধ থাকায় টার্মিনাল এলাকায় যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এ রুটে যাতায়াতকারী শত শত যাত্রীরা।

ঢাকা আরিচা মহাসড়কে পরিবহন সংকটের কারণে বাসযাত্রীরা পড়েছে চরম দুর্ভোগে। সকাল থেকে মহাসড়কে দুরপাল্লা ও লোকাল কোন বাস চলাচল না করায় বাস যাত্রীরা পড়ে চরম দুর্ভোগে। যাত্রীরা বাস না পেয়ে পায়ে হেটে গন্তব্যে পৌছানোর চেষ্টা করেছেন। বাস যাত্রীরা জানায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে গত কয়েকদিন ধরে মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কারণে তারা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।

মহাসড়কের আমিনবাজার, হেমায়েতপুর, সাভার, নবীনগর, বাইপাইল বাসষ্ট্যান্ডে সকাল থেকে যাত্রীদের চাপ দেখা গেলেও গাড়ি না পেয়ে তারা বাসষ্ট্যান্ড গুলোতেই বসে রয়েছে।

অন্যদিকে বগুড়ায় সব ধরনের বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও ট্রাক চলাচল অব্যাহত আছে বলে জানিয়েছেন ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি।

শুক্রবার সকাল থেকে হবিগঞ্জ পৌর বাস টার্মিনাল থেকে দেশের কোথাও বাস ছেড়ে যায়নি।

ময়মনসিংহ-ঢাকা মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। তবে সন্ধ্যার পর থেকে বাস চলাচল শুরু হবে বলে জানিয়েছেন পরিবহন মালিক সমিতির নেতারা।

নিরাপত্তার অজুহাতে মালিক ও শ্রমিকরা বরিশাল থেকে দূরপাল্লার সব রুটের সড়কে বাস চলাচল আজ হঠাৎ করে বন্ধ করে দেয়ায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।

সকাল থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের ভাদুঘরস্থ পৌর বাস টার্মিনাল ও পৈরতলা বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা, সিলেট, কুমিল্লা ও চট্টগ্রামে কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।

খসড়া আইনটিতে ‘দুর্ঘটনার সাজা দণ্ডবিধিতে’ বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার জন্য শাস্তি দেওয়া হবে দণ্ডবিধি অনুযায়ী। নরহত্যা হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড। হত্যা না হলে ৩০৪ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু ঘটালে ৩০৪(বি) ধারা অনুযায়ী তিন বছরের কারাদণ্ড হবে।

(জাস্ট নিউজ/একে/২০৪৮ঘ.)