পুনঃনির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নামছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বাম জোট

পুনঃনির্বাচনের দাবিতে আন্দোলনে নামছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও বাম জোট

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ‘ভোট ডাকাতি ও কারচুপি’র অভিযোগ তুলে ফল প্রত্যাখ্যান করা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও গণতান্ত্রিক বাম জোট নামছে এবার আন্দোলনে। সদ্য অনুষ্ঠিত সরকার নিয়ন্ত্রিত একাদশ নির্বাচনের পর রাজনৈতিকভাবে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে জোট দুটি। মাঠের কর্মসূচিতে জনগণকে সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জোটগুলোর শীর্ষ নেতারা। ইতোমধ্যে উভয় জোটই ঘোষণা করেছে নানা কর্মসূচি।

পুনঃনির্বাচনের দাবিতে কয়েক দিনের মধ্যেই নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে পৃথকভাবে মামলা করবে জোট দুটি। এ ছাড়াও জাতীয় সংলাপ এবং পুনঃনির্বাচন দাবিতে জনমত গঠনে দেশব্যাপী সফর করবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা আর বাম জোট আগামীকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রার্থীদের নিয়ে করবে গণশুনানি।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, ইতোমধ্যে ৩টি কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কর্মসূচি বাস্তবায়ন হওয়ার পর পুনরায় কর্মসূচি দেয়া হবে। অবাধ নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে পুনরায় নির্বাচনের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা লাগাতার আন্দোলন করে যাব।

গণতান্ত্রিক বাম জোটের সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশবাসীকে বঞ্চিত করা হয়েছে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের অধিকার থেকে। ভুয়া ভোটে যাদের নির্বাচিত বলে ঘোষণা করা হয়েছে তাদের সবাইকে জনগণ ভুয়া প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচনা করছে। জনগণের কাছে যারা জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে দাবি করছেন তাদের কোনো বৈধতা নেই। এ প্রহসনের নির্বাচনের ফলাফল বাতিল করে অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নিরপেক্ষ সরকার গঠন করে গোটা নির্বাচন ব্যবস্থার আমূল সংস্কার আনার ও নতুন নির্বাচন করার দাবি জানাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, শুক্রবার আমাদের প্রার্থীদের নিয়ে প্রেসক্লাবে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। প্রার্থীদের শুনানি শেষে তাদের কাছ থেকে মতামত নেয়া হবে পরবর্তী করণীয় কি হতে পারে। তাদের ওপর নির্ভর করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হবে। আমরা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করে যাব।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সূত্র জানায়, মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর বেইলি রোডে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের বাসায় জোটের স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে ‘ভোট ডাকাতি ও কারচুপি’র অভিযোগ এনে দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ জন্য চলছে আইনি প্রস্তুতি। এ ছাড়াও নির্বাচনের সময় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও প্রশাসনের হামলায় আহত নেতাকর্মীদের দেখতে প্রতিটি জেলা সফর এবং আগামী ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে সিলেটের বালাগঞ্জে নির্বাচনী সহিংসতায় নিহত নেতার বাড়িতে স্বজনদের খোঁজখবর নিতে যাবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা। পাশাপাশি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করার জন্য জনমত সৃষ্টি করতে দেশব্যাপী গণসংযোগ করবেন ফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা।

জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌরসভায় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে ভোট ডাকাতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিবাদ করতে উৎসাহিত করবেন তারা। ঢাকায় করা হবে দেশের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে জাতীয় সংলাপ। সংলাপের এখনো তারিখ চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে ১৬ থেকে ১৮ জানুয়ারি এ সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে পারে।

জোটের এক শীর্ষ নেতা জানান, এ কর্মসূচি দিয়েই শেষ নয়। এগুলো বাস্তবায়ন হওয়ার পর আমরা আরো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ঘোষণা করব। ইতোমধ্যে আমরা বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচনে সীমাহীন কারচুপির অভিযোগগুলো জানিয়েছি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা লাগাতার আন্দোলন করব।

অপরদিকে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিকল্প শক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে বাম ঘরানার ৮টি রাজনৈতিক দলকে নিয়ে গঠন করা হয়েছিল গণতান্ত্রিক বাম জোট। সর্বশক্তি নিয়ে ১৪৭টি আসনে লড়াই করে একটি আসনেও জয়ী হতে পারেননি জোটের কোনো প্রার্থী। তারাও নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ ও কারচুপির নির্বাচন আখ্যা দিয়ে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মুখে কালো কাপড় বেঁধে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। সে কর্মসূচিতে জোটের নেতারা দাবি করেন, নির্বাচনে দেশব্যাপী ভোটারদের মধ্যে ভোট নিয়ে যেটুকু আগ্রহ তৈরি হয়েছিল তা পুরোপুরি নষ্ট করে দেয়া হয়েছে। দলীয় সরকারের অধীনে বাংলাদেশে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশে অবাধ নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের যে কোনো অবকাশ নেই তা আরেকবার প্রমাণ হয়েছে। তাই এই নির্বাচনের ফলাফল গ্রহণযোগ্য হবে না। কারণ এই নির্বাচনে জনগণের মতামতের কোনো প্রতিফলন ঘটেনি।

জোটটির একাধিক সূত্র জানায়, পুনরায় নির্বাচনে দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন করে যাবে। আগামীকাল শুক্রবার বিভিন্ন আসনে লড়াই করা ১৪৭ প্রার্থীকে ঢাকায় জরুরিভাবে ডাকা হয়েছে। এসব প্রার্থীদের নিয়ে সকাল ১০টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকার ভোটের আগের এবং পরের সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরবেন। নির্বাচনে কোনো প্রার্থী কী ধরনের সমস্যায় পড়েছিলেন এবং ভোটাদের কী ধরনের মনোভাব ছিল তা গণশুনানিতে জানতে চাইবেন জোটের শীর্ষ নেতারা।

সূত্র আরো জানায়, প্রার্থীদের ঢাকায় আসার সময় একটি প্রতিবেদনও নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। সেখানে ভোটে অনিয়ম-কারচুপির প্রমাণ, প্রতিটি কেন্দ্রের ভোটের হিসাব, নেতাকর্মী ও এজেন্ট গ্রেফতার তালিকা ও নির্বাচনী সহিংসতায় আহত ও নিহতদের তথ্য দিতে বলা হয়েছে। প্রার্থীদের শুনানি শেষে তাদের কাছ থেকে মতামত নেয়া হবে পরবর্তী করণীয় কি হতে পারে। তাদের ওপর নির্ভর করে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হবে।

একে/