খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বরিশালের সমাবেশে জনতার ঢল

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বরিশালের সমাবেশে জনতার ঢল

বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বরিশালে বিভাগীয় সমাবেশ করছে দলটি। বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩ টায় নগরের বান্দ রোডের হেমায়েত উদ্দিন কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠে এ সমাবেশ শুরু হয়। সাড়ে তিনটায় সমাবেশ শুরু হলেও বেলা দুইটার মধ্যে সমাবেশস্থলে জনতার ঢল নামে।

সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিভাগের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে ব্যানার হাতে মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করেন নেতা-কর্মীরা। তারা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

বিভাগীয় এ সমাবেশে কেন্দ্রীয় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। দলটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য বেগম সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব:) হাফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বীর বিক্রম, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর উত্তম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান ও মাহবুবুল আলম নান্নু, কেন্দ্রীয় নেতা এবিএম মোশারফ হোসেন, হাফিজ ইব্রাহিম, বরিশাল উত্তর জেলা সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চাঁন ও মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. জিয়াউদ্দিন সিকদার জিয়া প্রমুখ।

সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকার জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তারা যে বাজেট দিয়েছে তার মধ্যে সাধারণ মানুষের পকেট কাটা ছাড়া আর কোন কথা নেই। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়ছে কিন্তু তাদের আয় বাড়ছে না। অথচ সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন-ভাতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারণ, সরকার তাদের ওপর ভর করে টিকে আছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার গোটা দেশে ভয়াবহ অত্যাচার-নির্যাতন চালাচ্ছে। হাজার হাজার কথিত মামলায় বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মী আসামি। গুম হয়েছেন এক হাজার নেতাকর্মী। সরকার দেশকে বসবাসের অনুপযোগী করে ফেলেছে। তিনি আরো বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে এবং দেশকে রক্ষা করতে হলে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা কথায় কথায় উন্নয়নের ঢোল বাজাচ্ছেন। কিন্তু মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারছেন না। এখন আদালত এজলাসেও মানুষ খুন হয়। প্রশাসনকে পকেটে ঢুকিয়ে সরকার দেশকে জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। তাই সময় এসেছে আন্দোলন করার। গ্রামে গ্রামে গিয়ে সরকারের অন্যায়-অত্যাচার ও নিপিরণের বিরুদ্ধে মানুষকে সংগঠিত করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, মানুষ ভোট দিতে পারলে আর কোন দিন নৌকা ক্ষমতায় আসবে না।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘মিটিং-মিছিল, মানববন্ধন ও অনশন করে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। আমাদের ঢাকায় যেতে হবে। আমরা যদি সারা দেশ থেকে এক লাখ লোককে ঢাকায় সমবেত করতে পারি তখন আমাদের সঙ্গে ঢাকার লাখ লাখ মানুষ যোগ দেবেন। বিএনপির এ নেতা বলেন, ‘ছোট ছোট রাজনৈতিক দল নেত্রীর মুক্তি দিতে পারবে না। এজন্য বিএনপিকে একাই এগিয়ে যেতে হবে।’

মেজর হাফিজ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বলে, আমরা ১০ মিনিট রাজপথে থাকতে পারবো না। আমি বলতে চাই, আমরা যদি রাজপথে অবস্থান নেই, বরং তারা থাকতে পারবে না। আমরা তাদেরকে দেখিয়ে দেবো।’ ‘আমরা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে নামি, তাহলে আওয়ামী কালো মেঘ কেটে বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত।’ তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তাই কাল হয়েছে। বর্তমান সরকার দেশকে কারাগারে পরিণত করেছে, আমরা বৃহত্তর কারাগারে আছি।’

সমাবেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বলেন, ‘খালেদা জিয়া অচিরেই মুক্তি পাবেন। একদিকে আমরা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীরা আইনগতভাবে মামলা মোকাবেলা করছি। একই সঙ্গে আন্দোলন-সংগ্রাম, প্রতিবাদ-প্রতিরোধ করতে হবে ।’ ‘সব দিন দিন নয়, সব মামলা মামলা নয়। খালেদা জিয়াকে ‘ঠুনকো’ মামলায় যেভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে কারাগারে রাখা হয়েছে, এটা কোনো গণতান্ত্রিক দলের কাজ নয়। এই দলকে আমি জানাতে চাই যে, যেভাবে খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা হয়েছে, এভাবে অনেক নেতাকে কারাগারে রেখে লাভ হয়নি, আপনারাও তৈরি থাকবেন।’

এমআই