তাবিথের ওপর হামলা: ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে ম্যাজিস্ট্রেট-ওসিকে নির্দেশ

তাবিথের ওপর হামলা: ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে ম্যাজিস্ট্রেট-ওসিকে নির্দেশ

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের ওপর হামলার ঘটনায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল কাসেম।

মঙ্গলবার রাতে এ সংক্রান্ত নির্দেশনার চিঠি উত্তর সিটির ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমরান শাহরিয়ার ও দারুস সালাম থানার ওসি তোফায়েল আহমেদকে পাঠানো হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে আবুল কাসেম বলেন, ‘বিএনপি প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছি এবং কী ব্যবস্থা নেওয়া হলো, সে বিষয়ে আমাকে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য বলেছি। আর আগে হামলার ঘটনায় অভিযোগের পরও কেন ব্যবস্থা নেওয়া হলো না, সে বিষয়ে জানাতে এবং মঙ্গলবারের হামলার ঘটনায় ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের জানানোর জন্য দারুস সালাম থানার ওসিকে চিঠি দিয়েছি।’

এর আগে গতকাল সন্ধ্যায় নির্বাচনী প্রচারণায় হামলার কথা উল্লেখ করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। অভিযোগে পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার জন্য সংশ্লিষ্ট দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) সাময়িক বরখাস্ত ও প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।

চিঠিতে তাবিথ আউয়াল অভিযোগ করে বলেন, ‘২১ জানুয়ারি ২০২০ মঙ্গলবার সকাল ১০টা হতে আমি সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬-এর বিধান পালন করে নির্বাচনী প্রচারণা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর সাধারণ ওয়ার্ড এলাকা তথা কোটবাড়ী, ব্লজারপাড়া, হরিরামপুর, গোলারটেক, জহুরাবাদ ইত্যাদি এলাকায় পথসভা ও ঘরোয়া সভা অনুষ্ঠান ও গণসংযোগে যাই। প্রচারণাকালে আমার সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় নেতাকর্মী-সমর্থকও ছিলেন। এই পথসভা, ঘরোয়া সভা অনুষ্ঠান ও গণসংযোগ পূর্বনির্ধারিত ছিল, যা পূর্বদিন আইনানুগভাবে সংশ্লিষ্ট দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসারকে লিখিতভাবে অবহিত করেছি।’

চিঠিতে তাবিথ বলেন, ‘আমার পূর্বনির্ধারিত পথসভা, ঘরোয়া সভা ও গণসংযাগে অনুষ্ঠানে আমার নির্বাচনী প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আতিকুল ইসলামের কতিপয় উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মী-সমর্থক এবং সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের ঠেলাগাড়ি প্রতীকের কাউন্সিলর প্রার্থী মজিব সারোয়ার মাসুম উপস্থিত থেকে স্বয়ং অতর্কিতে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার ওপর এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ওপর জঘন্যভাবে আক্রমণ করে। এই ঘটনায় আমি ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও এতে আমিসহ শারীরিক নির্যাতনে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে আমার নেতৃবৃন্দ ও কর্মী-সমর্থকরা আহত হয়। এ নির্যাতন ও আক্রমণের সময় পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিষ্ক্রিয় থাকে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা যদি আইনানুযায়ী আরো সক্রিয় থাকত, তাহলে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।’

তাবিথ বলেন, ‘উচ্ছৃঙ্খল নেতাকর্মী-সমর্থকদের শারীরিক নির্যাতন, নিপীড়ন ও জঘন্য আক্রমণসহ এ ধরনের কার্যক্রম সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা, ২০১৬-এর ৭ বিধির (গ) উপবিধির বিধান চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে বলে মনে করি। সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে এ সংক্রান্ত ফটোক্লিপিং এতদসঙ্গে সংযুক্ত করা হলো।’

চিঠিতে তাবিথ বলেন, ‘দারুস সালাম থানাধীন এলাকায় গত ১২ জানুয়ারি ২০২০ বেলা আনুমানিক ১১টায় একই কায়দায় আমার ওপর ও আমার কর্মী-সমর্থকদের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের লোকজন অতর্কিতে আক্রমণ করে ও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এতে আমাদের পক্ষের অনেক লোকজন আহত হয়। আমাদের লোকজনকে যেসব উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিবর্গ আহত করেছে, সেসব উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তিবর্গের বিরুদ্ধে কোনো মামলা না হয়ে বরং আমার আহত কর্মী-সমর্থকদের নামে উল্টো মামলা দিয়ে পুলিশ অহেতুক হয়রানি করছে।’

‘এ বিষয়েও আমি গত ১২ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে রিটার্নিং অফিসারসহ সংশ্লিষ্টদের বরাবর অভিযোগ জানিয়ে প্রার্থী হিসেবে আমার নিরাপত্তা প্রদানের অনুরোধ করি। এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নাই বিধায় পুনরায় এ ধরনের কার্যক্রমের পুনরাবৃত্তি ঘটেছে।’

ওসির প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে তাবিথ চিঠিতে বলেন, ‘এই এলাকায় এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ও পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার জন্য সংশ্লিষ্ট দারুস সালাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত ও প্রত্যাহারের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো।’

এমজে/