আলোচনা সভায় বক্তারা

দেশের অবস্থা অত্যন্ত উদ্বেগজনক

দেশের অবস্থা অত্যন্ত উদ্বেগজনক

বর্তমান দুঃশাসনের অবসান ঘটিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হলে গণভ্যুত্থান ঘটাতে হবে। দেশের অবস্থা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। দুর্নীতি, লুটপাট, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজী, ধর্ষণে দেশের স্বাধীনতা আজ বিপন্ন হতে চলেছে।

শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘এ ব্যাটল ফিল্ড ফ্রিডম ফাইটার অফ ১৯৭১’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও পেশাজীবী নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।

বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে ও কল্যান পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ১৮ জন সাবেক সেনা কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করে তাদের বক্তব্যে দেশের সার্বিক অবস্থা নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন বলেন, আজকে বাংলাদেশের বর্তমান যে পরিস্থিতি সেটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। আমরা সাদাচোখে একটি গৃহযুদ্ধের পদধ্বনি শুনতে পাচ্ছি। যদি এই দেশ আফগানিস্থান হয়, যদি গৃহযুদ্ধ হয় তাহলে এর জন্য দায়ী থাকবে আওয়ামী লীগ সরকার। তাদের অত্যাচার, অনাচার, ব্যাঙ্ক লুট, গুম, খুন, নির্যাতন, দুঃশাসনের কারণে মানুষ অতিষ্ঠ।

তিনি বলেন, এখন পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। সাধারণ মানুষের কোনো স্বাধীনতা নেই, কোনো মর্যাদা নেই। এই সরকার জাতিকে বিভক্ত করেছেন, শিক্ষার্থীদের নষ্ট করেছেন। তারা সমাজ ব্যবস্থায় ধ্বংস নামিয়ে দিয়েছেন, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ধ্বংস করেছেন। দেশের গণতন্ত্র বিলুপ্ত করেছেন। সাধারণ মানুষের জন্য কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। শুধু একটি দলের নেতাকর্মীদের জন্য সুযোগ সুবিধা রাখা হয়েছে। এই দুঃশাসনের অবসান হওয়া প্রয়োজন।

সরকার প্রধানের কাছে আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশকে যদি গৃহযুদ্ধের হাত থেকে রক্ষা করতে চান, তাহলে অবিলম্বে পদত্যাগ করে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন। দেশে কতটুকু কি উন্নয়ন করেছেন তার জবাব জনগণ দেবে।

তিনি বলেন, প্রেসক্লাবের মতো জায়গায় বক্তব্য দিয়ে সরকারের পতন ঘটবে না, দুঃশাসনের অবসান হবে না। তাই এই ভয়াবহ অবস্থা থেকে মুক্তি চাইলে আগামী দিনে যে ডাক দেয়া হবে তার সঙ্গে রাজপথে নেমে আসুন। এই দুঃশাসন থেকে মুক্তি চাইলে গণভ্যুত্থানের বিকল্প নাই।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেন, সরকার প্রতিশোধ আর আর প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে। এ জন্য খালেদা জিয়া আর তারেক রহমানের বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র করছে। তারা মুক্তিযুদ্ধকে অপমান করেছে, মুক্তিযোদ্ধাদের অবজ্ঞা করছে। যারা ওই সময়ে মুক্তিযুদ্ধ করে নাই তারা এখন যুদ্ধ নিয়ে কথা বলছে। চেতনার কথা বলছে। আর আমাদের মতো মুক্তিযোদ্ধাদের বেইজ্জতি করছে।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, এই সরকার ক্ষমতায় থাকলে মহান বিজয়ের প্রকৃত স্বাদ কখনোই দেখা যাবে না। দেশে গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার নেই। এই সরকারের বিচার করলে তাদের অস্তিত্ব থাকবে না। কারণ তারা বাঘের পিঠে উঠেছে।

তিনি বলেন, দেশের এই অবস্থা থেকে মুক্তি চাইলে সবার মাথা এক করতে হবে। সেটা সব দলের ঐক্য হলেও হবে তা নয়। কারণ ওই ঐক্য এক যুগে হয়নি, সামনেও হবে না। মুক্তিযুদ্ধের সময়েও হয়নি। কবে রাজনৈতিক দলগুলো ঘুম থেকে উঠবে, কবে নেতা সামনে আসবে, সেদিনের অপেক্ষায় থাকা যাবে না। আন্দোলন শুরু করতে হবে।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, স্বাধীনতার ৪৯ বছর অতিক্রম করছি। এই যুদ্ধ ছিলো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য, দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য। এখন দেশে যত উন্নতি, সব মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের সব অর্জন আজও সম্ভব হয়নি বলে দুঃখ লাগে।

ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন বলেন, বাংলাদেশে ভয়ভীতি বিরাজ করছে। সরকার লুটপাটতন্ত্র চালু করেছে। এর মধ্যেও সবাই সত্য বলতে শিখুন, মিথ্যাকে পরিহার করুন। মানুষের মুক্তি মানেই গণতন্ত্রের বিজয়। কিন্তু আমরা এখন যে বিজয় দিবস পালন করছি সেটা আমাদের বিজয় নয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্ণর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের জন্মের আগে পাকিস্তান আমলে বঞ্চনা দিয়ে আমাদের পথ চলা শুরু। এটা উপর ভিত্তি করেই কিছু অর্থনীতিবীদরা কথা বলতে শুরু করে। এরপরই দেশের অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম দরকার হয়ে পড়ে। স্বাধীকার আন্দোলনের দানা বাঁধে ১৯৫২ সালে। সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি আর রাজনৈতিক স্বাধীনতার জন্য দেশের স্বাধীনতা অর্জন হয়েছিলো। কিন্তু বর্তমানে দেশের অনেক কিছুতে সেই অর্জন প্রতিফলিত হচ্ছে না।

সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান এভিএম ফখরুল আজম বলেন, স্বাধীনতার মূল চেতনা গণতন্ত্র। বাক স্বাধীনতা আজ সঙ্কুচিত। দেশকে গড়তে হলে নতুন প্রজš§কে জাগরণ সৃষ্টি করতে হবে। নতুন করে দেশকে গড়ে তুলতে হবে। এই আন্দোলনে আমি আপনাদের সঙ্গে আছি।

অনুষ্ঠানে বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ড. এহসানুল হক মিলন, নিলোফার চৌধুরী মনি, বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক আহমেদ খান, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি কামালউদ্দীন সবুজ, সাবেক রাষ্ট্রদূƒত আশরাফ-উদ-দৌলা, এবি পার্টির আহ্বায়ক সোলাইমান চৌধুরী, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ব বিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. আবদুল লতিফ মাসুম, ডুয়েটের ড. আব্দুল মান্নান, শিক্ষাবীদ এস এম নজরুল ইসলাম, এশিয়ান ইউনিভার্সিটির প্রফেসর আব্দুল্লাহ এম তাহের, ডা. রিফাত লুসি, ড. ইশারফ হোসাইন, মেজর জেনারেল (অব.) ফজলে এলাহী আকবর, ব্রিগেডিয়ার (অব.) হাসান নাসির, কর্নেল (অব) ইশহাক, লে কর্নেল (অব.) কামাল আহমেদ, মেজর (অব.) ডা. এ ওয়াহাব মিনার, মেজর (অব.) মো. ইমরান, ব্যারিস্টার মেজর (অব.) সারোয়ার হোসাইন, মেজর (অব.) মুরাদ হামিদ খান, মেজর (অব.) সাঈদুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন (অব.) ড. কামরুল আহসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।