নোয়াখালীর চিত্রই সমগ্র বাংলাদেশের চিত্র: বিএনপি

নোয়াখালীর চিত্রই সমগ্র বাংলাদেশের চিত্র: বিএনপি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আপনি আগে নিজের ঘরকে শিক্ষা দিন। আপনার ভাই কাদের মির্জা সাহেব আপনার সম্পর্কে যে সব কথা বলেন, আপনাদের নেতাদের সম্পর্কে বলেছেন, সেটার পরে তো আপনাদের থাকার কথা না, পদত্যাগ করা উচিত। আপনারা নিজের ঘরে নিজেরা মারামারি করে, দলাদলি করে এরই মধ্যে দুজনকে হত্যা করেছেন। এর মধ্যে একজন সাংবাদিক, একজন রাজনৈতিক কর্মী। কোনো বিচার নাই। এটাই সমগ্র বাংলাদেশের চিত্র।’

আজ শুক্রবার সকালে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের জাতীয় সম্মেলনে এ কথা বলেন মির্জা ফখরুল। রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের চতুর্থ জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়। ২২ বছর পর কৃষক দলের এই জাতীয় সম্মেলন হচ্ছে। সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছিল ১৯৯৮ সালের ১৬ মে।

পরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে হবে সম্মেলনের দ্বিতীয় পর্ব কাউন্সিল অধিবেশন। এই সম্মেলনে সারা দেশ থেকে আসা সংগঠনটির ৫৪৮জন কাউন্সিলর অর্থাৎ ৭৯টি সাংগঠনিক জেলার ৩৯৫ জন এবং কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির ১৫৩ জন প্রতিনিধি অংশ নেন।

সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আওয়ামী লীগ এই দেশটাকে পৈত্রিক সম্পত্তি করে নিয়েছে। এই যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, তিনি খুব সুন্দর সুন্দর কথা বলেন, চমৎকার চমৎকার আসনে বসেন। ফিরোজা রঙের একটা আসনে বসে তিনি প্রতিদিন বিএনপির বিরুদ্ধে বিষোদগার করতে থাকেন। প্রতিদিন তিনি বিএনপিকে ধমক দেন, শিক্ষা দেন।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা দেখেছি, কীভাবে তারা আজ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে, সমগ্র দেশটাকে তাদের দলীয় সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছে এবং দেশটাকে তারা শোষণ করছে। হাজার হাজার কোটি টাকা পাঁচার করছে….। এই দেশটাকে তারা লুটেরা স্বর্গ রাজত্ব তৈরি করেছে।’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার চিকিৎসা বাংলাদেশে দিনে দিনে কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে সম্মেলনে আশঙ্কা প্রকাশ করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্মেলনে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা একটা কঠিন সময় পার হচ্ছি, একটা সংকটময় মুহূর্ত পার হচ্ছি। আমাদের দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে অন্যায় মামলায় সাজা দিয়ে আটক করে রাখা হয়েছে। তিনি অসুস্থ। এই দুই-তিনদিন আগে তার আরো ছয় মাস সাজা স্থগিত করা হয়েছে বলছে। কোথায় সাজা স্থগিত করছে?’

সরকারের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আপনারা তাকে (খালেদা জিয়া) গৃহবন্দি করে রেখেছেন। চিকিৎসার জন্য তিনি বাইরে যেতে চেয়েছেন, সেটাও আপনারা দেন নাই। আপনারা তাঁকে বাংলাদেশে রেখেই চিকিৎসা করাতে বলছেন, যেখানে দিনে দিনে তাঁর চিকিৎসা অত্যন্ত কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা অবিলম্বে দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। আমরা আর কিছু চাই না। মুক্তি দিতে হবে, নিঃশর্তভাবে মুক্তি দিতে হবে। আমাদের যেসব নেতাকর্মী বন্দি আছেন, তাঁদের সবাইকে মুক্তি দিতে হবে। আমাদের নেতা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সাহেবের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে, আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৩৫ লক্ষ মামলা আছে, সেগুলো প্রত্যাহার করতে হবে, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।’

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আপনারা অন্যায়ভাবে ক্ষমতায় বসে আছেন, দখল করে বসে আছেন। কী তফাৎ আপনাদের আর পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে, আমাকে বোঝাবেন একটু? আমি পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর সঙ্গে আপনাদের কোনো তফাৎ দেখি না। তারাও জোর করে বন্দুক দিয়ে মানুষকে মেরে ক্ষমতা দখল করে বসেছিল। আপনারা আজ সেই একই কায়দায় মানুষকে হত্যা করে, নির্যাতন করে, জোর করে ক্ষমতায় বসে আছেন।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘দয়া করে আপনাদের একদম অতীতের কথা—যখন আপনারা গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছিলেন, সেই কথা চিন্তা করে আওয়ামী লীগকে যদি বাঁচাতে চান, তাহলে অবিলম্বে যা আপনারা করেছেন, তার জন্য মাফ চেয়ে দেশের মানুষের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যবস্থা করেন। পদত্যাগ করেন, নির্বাচন দিন, নতুন নির্বাচন কমিশনের পরিচালনায় নির্বাচনে নতুন সরকার আসুক, নতুন পার্লামেন্ট আসুক।’

কৃষকদের দুরাবস্থার কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, ‘কৃষকদের সংগঠিত করতে হবে। তাদের অধিকার আদায় করতে কৃষক দলকে সক্রিয় হতে হবে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া পাঁচ হাজার টাকার কৃষক ঋণ সুদসহ মওকুফ করে দিয়েছিলেন। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ২৫ বিঘা পর্যন্ত জমির খাজনা মাফ করে দিয়েছিলেন। বিএনপি যখনই ক্ষমতায় এসেছে, তখনই কৃষকদের ঋণ সহজ করে দিয়েছে।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘এই সরকার এখন পর্যন্ত কৃষকদের জন্য এমন কিছু করেনি, যা দিয়ে তারা বলতে পারবে আমরা কৃষকদের জন্য এই এই কাজগুলো করেছি। কোভিড-১৯-এর প্রণোদনা দিয়েছে বিভিন্ন সেক্টরে, কৃষিক্ষেত্রেও দিয়েছে, কিন্তু কৃষিক্ষেত্রের টাকাগুলো তাদের নেতারা পকেটে ভরে নিয়েছেন। আড়াই হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়ার কথা ছিল, সেটাও তারা পকেটে ভরে নিয়েছেন। এই সরকার লুটেরা সরকারে পরিণত হয়েছে।’

উন্নয়নের নামে মেগা লুট হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকের পত্রিকায় দেখলাম ফাস্টেড ট্রেন, দ্রুতগামী ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার জন্য। দুটি চীনা কোম্পানি—তারা সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটে এটা করে দিতে চায়। পয়সা দেবে কে? পয়সা ওরা (চীন) এখন দেবে এবং সরকার আমাদের পকেট থেকে কেটে নেবে। আমাদের প্রশ্ন ওই জায়গায়, আপনারা যে উন্নয়ন উন্নয়ন বলে চিৎকার করছেন, এই উন্নয়নে লাভবান হচ্ছে কে? লাভবান হচ্ছে আপনাদের কিছু মানুষ, যারা কমিশন এজেন্সি করে, যারা দালালি করে, বখরা করে, শুধু আপনাদের মানুষ উপকৃত হচ্ছে, সাধারণ মানুষ কোনোভাবেই উপকৃত হচ্ছে না।’ এ থেকে উত্তরণ ঘটাতে কৃষক দলকে এলাকায় গিয়ে কৃষকদের সংগঠিত করে গণঅভ্যুত্থানের সূচনা করার আহ্বান জানান বিএনপির মহাসচিব।

কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদুর সভাপতিত্বে ও সদস্য এস কে সাদীর পরিচালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন কৃষক দলের সৈয়দ মেহেদি আহমেদ রুমি, এ কে এম মোয়াজ্জেম হোসেন, নাজিমউদ্দিন, আফতাব উদ্দিন আহমেদ মন্ডল, জামালউদ্দিন মিলন, এম এ হালিম, নাসির হায়দার, জিয়াউল হায়দার পলাশ, লুতফুর রহমান, মাহমুদুল হক সানু, শরীফুল ইসলাম মোল্লা, মহসিন আহমেদ তুষার, আনোয়ারুল হক, এনায়েতুল্লাহ খোকন, রবিউল হাসান পলাশ, সালাহউদ্দিন খান মিলকী, নাসিরউদ্দিন আহমেদ বাচ্চু, রফিকুল আলম রফিক, মাহবুবুর রহমান আউয়াল, আনোয়ারুল ইসলাম বাদশা প্রমুখ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন কৃষক দলের সদস্য সচিব হাসান জাফির তুহিন এবং শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন তকদির হোসেন জসিম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শহিদুল ইসলাম বাবুল, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, আবদুল খালেক, আমিরুজ্জামান শিমুল, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম ও ছাত্রদলের ইকবাল হোসেন শ্যামল উপস্থিত ছিলেন।