টিকা নেওয়ার অভিনয় মন্ত্রীর, ভিডিও ভাইরাল

টিকা নেওয়ার অভিনয় মন্ত্রীর, ভিডিও ভাইরাল

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের টিকা নেওয়ার অভিনয়ের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অবশ্য মন্ত্রী বলেছেন, তিনি প্রথমে টিকা নেন। তবে টেলিভিশন সাংবাদিকদের কেউ কেউ সেটার ফুটেজ পাননি। তাদের অনুরোধেই তিনি টিকা নেওয়ার অভিনয়টি করেন।

ভিডিওতে যা দেখা যাচ্ছে

এক মিনিট ৩৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।

সেখানে দেখা যায় যে, তিনি একটি টিকা নেয়ার কক্ষে গিয়ে বসেছেন, দুই জন সেবিকা তাকে টিকা দিচ্ছেন। কিন্তু টিকা দেয়ার মতো অভিনয় করা হলেও, তার শরীরে কোন সূঁচ ফোটানো হয়নি।

এই সময়ে কয়েকজনকে পাশ থেকে নির্দেশনা দিতেও শোনা যায়। একজন ব্যক্তি সেবিকাকে বলেন, ''আপা, সুইয়ের মাথাটা একটু খুলে নিন। একটু খুলে অভিনয় করেন, আমরা জাস্ট...আপনি ওই সিস্টেমে (টিকা দেয়ার মতো করে) করেন। .......তুলাটা দিয়ে একটু ডলা দেন।''

সেবিকা একটি সিরিঞ্জ মন্ত্রীর বাম হাতের বাহুর ওপরে ধরে রাখেন।

এই সময় কয়েকজন ব্যক্তিকে ক্যামেরা দিয়ে ছবি বা ভিডিও করতেও দেখা যায়।

এরপর সাংবাদিকদের কাছে মন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ''মনেই হয়নি, টিকা নিলাম, বুঝতেই পারিনি, কখন পুশ করেছে। পরে বলল যে, পুশ করা শেষ হয়ে গেছে। আমি ঠিকমতো বুঝতেই পারিনি। কোনরকম খারাপ কিছু বা ব্যথা পাওয়া, এরকম কিছু হয়নি।''

এই ভিডিওটি কে করেছেন বা কার মাধ্যমে বা কীভাবে তা ছড়িয়েছে তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

তবে বিবিসি বাংলাকে মন্ত্রী মোজাম্মেল হক নিশ্চিত করেছেন যে তার টিকা নেবার পর একজন সাংবাদিক ভিডিও তুলতে পারেননি একথা বলে ভিডিও ছবি নেবার জন্য তাকে আবার টিকা নেয়ার অভিনয় করতে বলেন।

তবে এই ভিডিওটি সেই ভিডিওটিই কিনা তা নিশ্চিতভাবে যাচাই করা যায়নি।

যা বলছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী

এই সাজানো টিকা নেয়ার বিষয়ে বিবিসি বাংলার সাথে কথা বলার সময় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক বলেন: ''এটা মিথ্যাচারের একটা চরম উদাহরণ।''

তিনি জানান, ১৭ই ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে তিনি কোভিড-১৯ টিকা নিয়েছেন। সেই টিকা নেয়ার দৃশ্য বিটিভিসহ বিভিন্ন চ্যানেলের ক্যামেরায় ধারণ করা হয়েছে। সেখানে স্বাস্থ্য সচিবসহ অনেক কর্মকর্তা ও সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।

''পরে একজন সাংবাদিক এসে বলেন, তিনি ভিডিও নিতে পারেন নাই। তখন সবার অনুরোধে আমি আবার গিয়ে বসলাম। তখন তিনি টিকা নেয়ার ভিডিও উঠাইছেন।''

সেই ভিডিওটি এখন ''ঘৃণিত'' ও ''উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে'' ছড়ানো হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।

তিনি দাবি করেন তার প্রকৃত টিকা গ্রহণের ভিডিও-র সাথে অভিনয়ের অংশ মিশিয়ে সেটি ছড়ানো হয়েছে।

''পুরো ভিডিও আছে, কিন্তু ওইখানে একটা পার্ট দেখানো হচ্ছে,'' বলছেন মন্ত্রী মোজাম্মেল হক।

কিন্তু একজন সাংবাদিকের অনুরোধে কেন তিনি দ্বিতীয়বার আবার টিকা নেয়ার অভিনয় করলেন, জানতে চাইলে তিনি বলছেন, ''আপনারা সাংবাদিকরা যখন ফোন করেন বা কোন অনুরোধ করেন, আমরা সম্মান জানিয়ে সেটা বলি বা করি। এখন কেউ সেটার অপব্যবহার করবেন, সেটা তো আমরা আশা করি না।''

''আমরা যেহেতু পাবলিকলি চলি, একটা লোক একটা অনুরোধ করলে সম্মান করে বিশ্বাস করে (সেটা) রাখতে হয়। এখন আমার টিকা নেয়ার তো রেকর্ড আছে, সমস্ত কিছুর ভিডিও করা আছে। কেউ সেটা নিয়ে ফ্রড করতে পারে, সেটা তো আমরা ভাবিনি,'' বলেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে আজ শনিবার বলা হয়, টিকা নেওয়ার বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওচিত্রটি মন্ত্রী দেখেছেন। যেখানে ভিডিও সম্পাদনা বা এডিট করে মন্ত্রী টিকা নেননি বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সচিবালয় ক্লিনিক ভবনে করোনার টিকা নেন। সাংবাদিকদের অনেকে সে সময় ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করেন। টিকা দেওয়ার কক্ষে স্থান সংকুলান না হওয়ায় কেউ কেউ ছবি ও ভিডিও ফুটেজ নিতে পারেননি। তাদের অনুরোধেই টিকা নেওয়ার অভিনয় করা হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রীর টিকা নেওয়ার ভিডিওচিত্রের ওপরের লিংকও দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মন্ত্রী টিকা নেননি বলে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তা স্বাধীনতাবিরোধী কুচক্রী মহলের মিথ্যা অপপ্রচারের অংশ। অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।