ইসরায়েলের সঙ্গে নতুন প্রেম কেন? সরকারকে বিএনপি

ইসরায়েলের সঙ্গে নতুন প্রেম কেন? সরকারকে বিএনপি

সরকার ইসরাইলের সংগে নতুন করে ঘনিষ্ঠ হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রবিবার (২৩ মে) গুলশানে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মন্তব্য করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত মোতাবেক বাংলাদেশের পাসপোর্টে যেখানে 'একসেপ্ট ইসরায়েল' কথাটি লেখা থাকে, আমাদের যে ই-পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে সেখানে এই কথাটি লেখা থাকছে না।

তিনি বলেন, ইসরায়েল আমাদের শত্রু, পৃথিবীর শত্রু, ইসরায়েল মানবাধিকারকে ধ্বংস করছে। অনেকে বলেন যে, ফিলিস্তিনি ইসলামী রাষ্ট্র সেই জন্য সমর্থন দেবেন? না, আমরা সমর্থন করি ফিলিস্তিনি মানুষদের, কারণ তারা মানুষ, তাদের শিশুরা শিশু, গত কয়েকদিনে কয়েকশ'র মতো হত্যা করা হয়েছে। কয়েক বছর আগে প্রায় তিন লাখ শিশু হত্যা করা হয়েছিলো। ইসরায়েল পৃথিবীর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ সরকার কেন এই নতুন করে প্রেম করতে যাচ্ছে ইসরায়েলের সংগে, কারণটা কী? কয়েকদিন আগে, আমি একটা যোগসূত্র দেই আপনাদের। কয়দিন আগে আল জাজিরাতে একটা রিপোর্ট হয়েছিলো, সেই রিপোর্টে এসেছিলো যে একটা বিশেষ সার্ভেইলেন্স যন্ত্র, এ যন্ত্র অরিজিনালি ইসরাইল থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। এখন জনগণের মধ্যে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে, তাহলে কী সরকার আবারও ইসরাইলের সংগে চুক্তি করতে যাচ্ছে?

তিনি বলেন, একটা কথা আমরা সবাই জানি, ইসরায়েল কিন্তু গোয়েন্দাবৃত্তিতে পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ। ওটা করেই কিন্তু তারা এখন শক্তিশালী দেশ হয়ে আছে। সুতরাং এ জিনিসগুলো অত্যন্ত উদ্বেগের সংগে বাংলাদেশের মানুষ দেখছে।

শনিবারের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতেই গুলশান কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপি। এতে মির্জা ফখরুল জানান, ৩০ মে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ দেশের সব কার্যালয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন, জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন, গরীব, দুস্থদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ এবং ভার্চুয়াল আলোচনা সভাসহ নানান কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে।

ইসরায়েলের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, ইসরায়েলের সঙ্গে বিএনপির কোনো সম্পর্ক নেই। বরাবরই আমরা ইসরায়েলের বিরোধী অবস্থানে আছি।

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি গতকাল বলেছেন, বিএনপি গণমাধ্যমের বন্ধু সেজে সাংবাদিকদের উস্কানি দিচ্ছে। এটা একেবারেই একটি মনগড়া এবং নিজেদের অপরাধগুলোকে ঢাকার জন্য একটি মন্তব্য। আওয়ামী লীগের সাংবাদিকতা, মুক্ত স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের প্রতি আচরণ-ব্যবহার-এটা দেশের সকল মানুষ জানে। ১৯৭৫ সালে দেশে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। সেই বাকশাল প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই সমস্ত পত্রিকাগুলো নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। মাত্র চারটা পত্রিকা চলবে বলা হয়েছিল, সেই চারটা পত্রিকা তাদের নিজস্ব পত্রিকা। তাতে অসংখ্য সাংবাদিক বেকার হয়ে গিয়েছিলেন, তারা কর্মচ্যুত হয়েছিলেন।

১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের সময়ে বিভিন্ন পত্রিকার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপসহ বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, আমার কাছে মনে হয় যে, এটা তাদের মজ্জাগত ব্যাপার। তারা ভিন্নমত সহ্য করতে পারে না, তারা সমালোচনা সহ্য করতে পারে না। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা তারা (আওয়ামী লীগ) আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করেছে ১৯৭৫ সালে, আইন করে তারা বন্ধ করেছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ টাইমস, বিচিত্রাসহ ৪টি পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল। ২০০৮ সালে তারা চ্যানেল ওয়ান, ইসলামিক টিভি, দিগন্ত টিভি, একুশে টিভি আক্রমণ করেছে এবং বন্ধ করে দিয়েছে। একের পর এক আমার দেশ পত্রিকা, শীর্ষ কাগজ, ৩৭টি অনলাইন—এগুলো সব বন্ধ করে দিয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির হাবিব উন নবী খান সোহেল, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, তাইফুল ইসলাম টিপু, বেলাল আহমেদ, মহানগর মুন্সি বজলুল বাসিত আনজু, কাজী আবুল বাশার, আবদুল আলিম নকি, যুবদলের শফিকুল ইসলাম মিল্টন উপস্থিত ছিলেন।