হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটি বানাতে চান শফীপন্থিরা

হেফাজতে ইসলামের নতুন কমিটি বানাতে চান শফীপন্থিরা

অচিরেই ‘নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে’ হেফাজতে ইসলামের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সব জেলা, থানা, শহর ও নগর কমিটিগুলো নবায়নের ঘোষণা দিয়েছেন হেফাজতের আল্লামা শফীপন্থী নেতারা। এছাড়া কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হবে বলেও জানান তার। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানানো হয়।

‘শাইখুল ইসলাম শহীদ আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ভক্তবৃন্দ’ ব্যানারে এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান শফির কমিটির নেতা নুরুল ইসলাম জাদিদ।

নুরুল ইসলাম জাদিদ বলেন, আহমদ শফীর চরম বিরোধী ও বিদ্বেষীদের দ্বারা যিনি হেফাজতের কথিত আমির হয়েছিলেন, তাকে এদেশের ধর্মপ্রাণ জনগণ মেনে নিতে পারেনি। যে কারণে তিনি জননোষ থেকে বাঁচার জন্য তথাকথিত ওই অবৈধ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন। আমরা মনে করি, কথিত হেফাজত সিন্ডিকেটের মাধ্যমে একটি পকেট কমিটি গঠিত হয়েছিল। যেখানে আহমদ শফির মূল অনুসারী হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা নেতৃবৃন্দকে বাদ দেয়া হয়েছিল।

জাদিদ বলেন, একটি মহল ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশের আলেম সমাজকে ভুলপথে ঠেলে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। ওলামায়ে কেরামের সরলতার সুযাগে তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার অপচেষ্টায় লিপ্ত। একশর বেশি বয়সী শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ইন্তেকাল স্বাভাবিক হবে এটাই ছিল সবার প্রত্যাশা। কিন্তু আসলেই কি তাই হয়েছিল? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে চিত্র দুনিয়াবাসীর সামনে এসেছে, তাতে কি বলা যায় তার স্বাভাবিকমৃত্যু হয়েছে?

তিনি বলেন, আমরা মনে করি, শাইখুল ইসলামের শাহাদাতের বিষয়ে প্রকৃত অবস্থা উদঘাটনে ওলামায়ে কেরামের এগিয়ে আসা দরকার। তা না হলে বাংলাদেশে ইসলামের ভবিষ্যত অন্ধকার। জীবনের শেষ মুহূর্তে মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে (শফী) অতি প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি, রুমের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছিল, এসি-ফ্যানসহ আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছিল।

আহমদ শফীকে পদত্যাগে ‘বাধ্য করা হয়েছিল’ মন্তব্য করে জাদিদ বলেন, চাপাতি, রামদা, লাঠি, দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত চরম ও উগ্রপন্থীদের দিয়ে তাণ্ডব চালানো হয়েছিল। হাটহাজারি মাদ্রাসায় একটি চরমপন্থি উগ্রগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ ঘটিয়ে সহজ-সরল ছাত্রদের উসকানি দেওয়া হয়েছিল।

লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, নুরুল ইসলাম জাদিদ বলেন, গঠনতন্ত্রে না থাকলেও এককভাবে তিনি (বাবুনগরী) নিয়ম বহির্ভূত পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করে নতুনভাবে আলেম-উলামা ও ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ষড়যন্ত্রের ফাঁদে নিপতিত করার পাঁয়তারা করছেন। এটি হেফাজতের কোনো আহ্বায়ক কমিটি নয় বরং মামা-ভাগ্নের ফটিকছড়ি পকেট কমিটি।

নুরুল ইসলাম জাদিদ বলেন, আজ মাহফিল বন্ধ, মাদ্রাসাগুলো বন্ধ ও সরকারি নজরদারির আওতায়, আন্দোলনের নামে নিজেদের নেতা হওয়ার খায়েশে ইসলামকে আজ বিপদের মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ আহমদ শফীও আন্দোলন করেছেন। আবার তিনি স্বকীয়তা বজায় রেখে সরকারের কাছ থেকে ইসলামের অনেক দাবি-দাওয়া আদায় করে দেশের মুসলমানদের মাথা উঁচু করেছেন। তিনি কারো কাছে মুচলেকা দিয়ে আন্দোলনের ভূমিকাকে কোনোকালেই খাটো করেননি।”

সংবাদ সম্মেলনে আল্লামা আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন মধুপুরের পীর আব্দুল হামিদ, আবুল কাসেম, আব্দুর রশিদ মজুমদার, খোরশেদ, জাকরুল্লাহ খান, শরীফ বিন আব্দুল কুদ্দুস, ফয়েজ উল্লাহ, আবুল হাসানাত আমিনী, মাঈনুদ্দিন রুহী ও আলতাফ হোসেন ছাড়াও আহমদ শফির শ্যালক মো. মহিউদ্দিন প্রমূখ।