শেখ হাসিনার গুডবুকে যাওয়ার ঢাল তারেক রহমান!

শেখ হাসিনার গুডবুকে যাওয়ার ঢাল তারেক রহমান!

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নির্বাসিত দেশের গণতন্ত্র। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পেরুলেও বিবর্ণ বাংলাদেশ। যারা নিরপেক্ষ বয়ান দিতে পারবে সেই সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবি, রাষ্ট্রের সরকারের স্বচ্ছতার আয়না বিরোধী রাজনৈতিক দল সবকিছুকেই কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে ইতিহাসের নজিরবিহীন স্বৈরাচারী শাসনের কায়দায়। গণতন্ত্রের মোড়কে পুরোটাই একনায়কতন্ত্র আর স্বৈরচারিতায় ঠাসা। শাসকদের মুখোশ উন্মোচন করতে গেলেই গুম, খুন বা নিদেনপক্ষে ঘর থেকে শ্রীঘরে।

গত ২৪ জুন 'তারেকের নেতৃত্বে বিএনপি দাঁড়াতে পারছে না' একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক প্রথম আলো। প্রতিবেদনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে সেই কাল্পনিক বিতর্ক সামনে আনা হয়েছে নতুন মোড়কে। অর্থাৎ এই অভিযোগের শুরু প্রায় দুই দশক আগে। আওয়ামী লীগের সংঘবদ্ধ প্রচারণার সারথি তাঁরাই। তবে মাঝে ক্ষমতাসীনদের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়েছে ব্যাপক। আর এর জন্য কম ঝামেলাও পোহাতে হয়নি ওই দৈনিকটিকে। অবশেষে সম্পর্ক উন্নয়নে যারপরনাই চেষ্টা। আর এতে ঢাল হিসাবে বেছে নেয়া হলো ক্ষমতাসীনদের প্রতিহিংসার মূল লক্ষ্যবস্তু তারেক রহমানকে!

প্রতিবেদনটিকে খোদ প্রথম আলোর পাঠকরা কীভাবে নিয়েছেন আসুন তার একটা খসড়া দাঁড় করাই। ছাপানো এ প্রতিবেদনটি পোস্ট করা হয়েছে প্রথম আলোর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে।

আবুল খায়ের নূর নামের একজন নিউজটির কমেন্ট অপশনে লিখেছেন, "এখন কি প্রথম আলো বিএনপির নেতৃত্ব দিবে!! আর প্রথম আলোর নেতৃত্বে বিএনপি ঘুরে দাঁড়াবে, আবার ক্ষমতায় আসবে!!? ভোট চুরি করে যে এখনো ক্ষমতায় আছে সে বিষয়ে কিছু বলছেন না উল্টো বিএনপি নিয়ে উল্টাপাল্টা বলছেন। আর হে অতীতের ন্যায় জিয়া পরিবারের হাত ধরেই বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে, ইনশাআল্লাহ।"

নিউজের ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন তোলে মারুফ হাসান সুমন নামের এক ফেসবুক ইউজার লিখেছেন, "এই চিন্তায় দেশের মানুষ খুব কষ্টে আছে, মনে হচ্ছে । দেশে তো আর কোনো নিউজ নাই। আপনারা এই সব নিউজ পরে কইরেন, দেশে আজ মুক্ত চিন্তার পরিবেশ আছে কি না, আইনের শাসন আছে কি না, সাধীন মুক্ত ভোটাধিকার আছে কিনা ঐ গুলো থাকলে শুধু... কেনো যে কোনো ছোট দলও শুধু দাঁড়াতে না দৌড়াতে পারবে।"

আলহাজ নবীউল্লাহ নবী নামের আরেকজন লিখেছেন, "তারেক রহমান দেশান্তর, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাবন্দী, তার পরেও কেন নিরেপক্ষ নির্বাচন দিতে সরকার এতো ভয় পায়??? জনাব তারেক রহমান এবং দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে একসাথে বন্দী করেও যদি নিরেপক্ষ নির্বাচন দেয়, তার পরেও বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠ নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। বিদেশীদের ছত্রছায়ায় এই সরকার ভোটারবিহীন নির্বাচান দিয়ে বার বার অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকতে চায়। এটি এখন প্রমানিত।"

এমএম এইচ মিলন নামের আরেক ফেসবুক ইউজার লিখেছেন, "হুদাই পেচাল বাদ দেন।। রাজনীতির বলতে যা বুঝায় সেই ধারায় আসুন, দেখুন তারেক কে?? কেমন তার নেতৃত্ব। সত্তর দশকের জিয়ার নতুন রুপ এই আধুনিকতার দশকে দেখিয়ে দিবে। ঘুরে তো দাড়াবে সময় একদিন। ইনশাআল্লাহ সেদিন দেখবে জাতি তারেকের নতুন রুপ নতূন ধারা নতূন নেতৃত্ব আবার সেই গণতন্ত্র।"

শরীফ প্রধান নামের আরেকজন লিখেছেন, "দিনের ভোট রাতে করে,ভোট চুরি কারচুপি, বিনা ভোটে অনির্বাচিত ভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে শেখ হাসিনা। এসব নিয়ে কোন সাংবাদিকের মাথা ব্যাথা নেই। বরঞ্চ এরা সরকারের এজেন্সিগুলোর পেইড এজেন্ট হিসেবে কাজ করে বিরোধী মতের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে। বুকের পাটা থাকলে শেখ হাসিনাকে নিয়ে একটা সাক্ষাৎকার প্রচার কর,সেখানে তাকে প্রশ্ন কর যে বাংলাদেশের জনগন আদৌ সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থায় ফিরতে পারবে কিনা,জনগনকে লুন্ঠিত গনতন্ত্র ফিরিয়ে দেবে কিনা।"

দেশে রাজনীতির পরিবেশ নেই উল্লেখ করে এমডি মিনহাদ সরকার নামের আরেকজন লিখেছেন, "দেশে রাজনীতি থাকলে কলাগাছ নেতৃত্ব দিলেও বিএনপি ঘুরে দাঁড়াবে। কিন্তু এখন কি দেশে রাজনীতি আছে?"

মোহাম্মদ মোশররফ নামের আরেকজন লিখেছেন, "আগে প্রথম আলো ঘুরে দাঁড়াক। প্রথম আলো নিজেরাই মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারে না।"

মাহমুদ মোকছেদ মাসুম নামের একজন লিখেছেন, "প্রথম আলো গবেষণা ধর্মি প্রতিবেদন করে এই কথা সর্বজন গ্রাহ্য। এই প্রতিবেদনেও কিছু গবেষণা আছে! কিন্তু তা একতরফা। একতরফা গবেষণা গ্রহনযোগ্য নয়। দুনিয়ার কোন গনতান্ত্রিক দলের উপর এই রকম মামলার পাহাড় আছে? বাংলাদেশের নিকট অতীতে ক্ষমতা ছাড়া সব দলে ভাংগন দেখা দিয়েছে। গত দশ বছরে দলের ভাংগন ঠেকিয়ে উনি সফল হননি। বিগত নির্বাচনে আসন বন্টন নিয়ে কি ঝামেলা হয়েছিল? এটা কি উনার সফলতা নয়? এরকম হাজারো উদাহরণ আছে। স্রোতের সাথে গা না ভাসিয়ে প্রকৃত সংবাদ উপস্থাপন কামনা করি দেশের সর্বাধিক পঠিত দৈনিকের নিকট।"

মো ফাহাদ নামের আরেকজন লিখেছেন, "বিনা ভোটের সরকারের সমলোচনা না করে তারেকের নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলা হলুদ সাংবাদিকতার নামান্তর।"

এগুলো ছাড়াও প্রথম আলোর প্রতিবেদনে কমেন্ট করেছেন আরও চারশতাধিক মানুষ। পাঠকের এসব মন্তব্য আরও স্পষ্ট করেছে কতোটা ধুকছে দেশের গণতন্ত্র, রাজনীতি, আইনের শাসন, মানবাধিকার আর মতপ্রকাশের মতো মৌলিক অধিকারসমূহ। সেই সঙ্গে তারা বুঝে নিতে সক্ষম রিপোর্টটি বস্তুনিষ্ট না ফরমায়েশি!

কেএল/