মানুষের পকেট কাটছে সরকার: বিএনপি

মানুষের পকেট কাটছে সরকার: বিএনপি

‘ডিজেল-কেরোসিনের দাম বাড়ানো সরকারের দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অমানবিক সিদ্ধান্ত’ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘তারা দেশের রাজনীতি-অর্থনীতি ধ্বংসের পর মানুষের ভবিষ্যৎ ধ্বংস করছে।’

তিনি বলেন, ‘আজ যদি আপনি খবরের কাগজ খুলে দেখেন তাহলে দেখবেন, ডিজেল-কেরোসিনের দাম একরাতে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। যেখানে ছিল ৬৫ টাকা সেটা হলো ৮০ টাকা। যেটা ছিল ৫৫ টাকা সেটা হয়েছে ৮০ টাকা। এলপিজির দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর বিদ্যুতের দাম তিন-চারবার করে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ে। বাজারে যাবেন, কোনো কিছু কেনার কেউ নেই। প্রতিটি জিনিসের দাম বেড়ে গেছে।’

বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও অবিভক্ত ঢাকার সর্বশেষ মেয়র মরহুম সাদেক হোসেন খোকার দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক স্মরণ সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ বাস-ট্রাক বন্ধ। কাল থেকে বাস মালিকরা বলবে ভাড়া বাড়াও। ভাড়া না বাড়ালে গাড়ি চালাতে পারবো না। ট্রাকওয়ালারা বলবে আরও বেশি ভাড়া দিতে হবে না হলে পারবো না। অর্থাৎ আপনার কাঁচাবাজার, চাল-ডাল-তেল-লবণ সবকিছুর দাম বাড়তে থাকবে। এ সরকার কতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন হলে, জনগণ থেকে কতটা বিচ্ছিন্ন হলে এ ধরনের অমানবিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে ডিজেল আর কেরোসিনের দাম বাড়ানো হলো অথচ ভারতে ৫ টাকা কমানো হলো। সরকার যুক্তি দেখিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে যখন কমে গেলো তখন তো কম নেয়নি। এখন যেটা করছে তাতে আমাদের পকেট কেটে তাদের পকেট বাড়াচ্ছে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে ‘ঢাকার নেতা’ আখ্যা দিয়ে দলের মহাসচিব বলেন, বর্তমান সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ধ্বংস করছে, রাজনীতিকে ধ্বংস করেছে। এখন তারা বাংলাদেশের মানুষের ভবিষ্যৎকে ধ্বংস করছে।

তিনি বলেন, আপনারা পত্রিকায় দেখবেন- গত সাত মাসে এই যে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হচ্ছে- এখানে তো বিরোধী দলের কেউ নেই। অথচ সেখানে মারামারিতে ৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এখানে আমাদের ঢাকার নেতা আব্বাস ভাই আছেন, নতুন নেতা আমান উল্লাহ সাহেব, সালাম সাহেব আছেন, আমিনুল আছেন। আসুন, তাদের নেতৃত্বে আগের মতো করে গণতন্ত্রের পক্ষে দুর্গ গড়ে তুলি। এ দুর্গ এমনভাবে গড়ে তোলা হবে যাতে ঢাকা মহানগরের গণতন্ত্রের নেতাদের কাছে, গণতন্ত্রের পক্ষের মানুষের কাছে, স্বাধীনতাকামীদের কাছে এ ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট সরকার পরাজিত হবে ইনশাআল্লাহ।’

সবাইকে সাদেক হোসেন খোকা হতে হবে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সাদেক হোসেন খোকার যখন শেষ সময় তখন তিনি আমেরিকা যান। তিনি বাংলাদেশের খবর, আপনাদের খবর, দেশনেত্রীর খবর জানতে চাইতেন। তিনি ছিলেন আপাদমস্তক একজন রাজনীতিবিদ। যার মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের নখ পর্যন্ত ছিল রাজনীতি।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের এখন তাকে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল, আজকের এই ভয়াবহ দুঃসময়ে, যখন আমরা ফ্যাসিবাদের কবলে নিষ্পেষিত হচ্ছি, যখন আমাদের সব আশা-আকাঙ্ক্ষা ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে। আজ আমাদের সেই সময় এসেছে যখন আমাদের সবাইকে একেকজন সাদেক হোসেন খোকা হতে হবে। আজ আমরা এমন একটা দুঃশাসনের কবলে পড়েছি।’

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের আহ্বায়ক আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সভাপতি লুৎফর রহমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাইফুল আলম নীরব, কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, সাদেক হোসেন খোকার ছেলে প্রকৌশলী ইশরাক হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন।