বিএনপির উদ্দেশ্যে আনিসুল

যত খুশি গালি দিতে পারেন

যত খুশি গালি দিতে পারেন

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর জন্য দলটির আবেদন প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, 'আইনের শাসন যেখানে আছে, সেখানে আমি যথেচ্ছা কাজ করতে পারি না। বিএনপি যে দাবি করছে তা আইনের বইয়ে নেই। তারা (বিএনপি) আমাকে যত খুশি গালি দিতে পারেন, তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমি আইন মোতাবেক চলবো।'

বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের বৈঠকে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে বগুড়া-৬ আসনের বিএনপি দলীয় সংসদ সদস্য গোলাম মোহাম্মদ সিরাজের দেওয়া বক্তব্যের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।

আইনমন্ত্রী বলেন, 'আইনের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। মানবিক কারণে দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়ার সাজা স্থগিত রেখে পরে ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'বিদেশে চিকিৎসার জন্য অনুমতি দেওয়ার বিধান আইনে নেই। আমি তো দেখিয়েছি, বাংলাদেশের আইনের বইয়ে এটা নেই। তারা (বিএনপি) যদি এটা দেখাতে পারে, তাহলে আমরা এটা বিবেচনা করতে পারি। কিন্তু এটা আইনের বইয়ে নেই। তারাও দেখাতে পারবেন না। কাজেই বিবেচনার প্রশ্নও আসে না।' এ সময় সংসদের বৈঠকে উপস্থিত সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা আইনমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সমর্থনে টেবিল চাপড়ান।

আইনমন্ত্রী বলেন, ''২০০৭-০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিদেশ যেতে দেওয়া হয়েছে- তাদের এমন বক্তব্যে বলব প্রধানমন্ত্রী কখনও সাজাপ্রাপ্ত হননি। আ স ম আবদুর রবকে যখন বিদেশে পাঠানো হয়েছিল, তখন দেশে ছিল মার্শাল ল'। মাশাল ল'র ধারা ফৌজদারি কার্যবিধির ধারার সঙ্গে চলে না। তারা যথেচ্ছা আচরণ করেছেন। আজ দেশে আইনের শাসন যেখানে আছে, সেখানে আমি যথেচ্ছা আচরণ করতে পারি না।''

তিনি আরও বলেন, 'খালেদা জিয়াকে সঠিকভাবে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামির ৪০১ ধারায় কোনো সুযোগ নেই, নিষ্পত্তিকৃত আবেদন আবারও বিবেচনা করার।'

এর আগে সংসদের বৈঠকে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে জি এম সিরাজ বিএনপি নেত্রীকে মানবিক দিক বিবেচনায় চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর অনুরোধ জানান। তা না হলে সংসদ থেকে পদত্যাগের হুঁশিয়ারিও দেন তিনি।

জি এম সিরাজ বলেন, 'আমরা বিএনপির ছয় জন এই সংসদে আছি। আওয়ামী লীগের বন্ধুরা বলেন, এটা এই পার্লামেন্টের জন্য অলঙ্কার। আমরা সত্যি সত্যি যতি অলঙ্কারই হয়ে থাকি, তাহলে সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ, পার্লামেন্ট অলঙ্কারবিহীন করবেন না। কারণ খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠাতে না পারলে তার অবস্থা যদি চরমে চলে যায়, তাহলে হয়তো আমাদের দলীয় সিদ্ধান্তে এই পার্লামেন্টে থাকা সম্ভব নাও হতে পারে।'

খালেদা জিয়ার একটা কিছু হয়ে গেলে এর দায়ভার সারাজীবন আওয়ামী লীগকে বহন করতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, 'করোনার পর বিএনপি চেয়ারপারসনের শারীরিক অবস্থা চরম অবনতির দিকে যাচ্ছে। যা তাকে দিনে দিনে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠাতে তার পরিবার থেকে পাঁচবার আবেদন করা হয়েছে। দল থেকে বারবার আবেদন করা হচ্ছে। সবার আবেদন, খালেদা জিয়াকে অতি দ্রুত জামিন দিয়ে কয়েকদিনের মধ্যে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হোক।'

জিএম সিরাজ বলেন, 'দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে জামিন নিয়ে বিদেশে চিকিৎসা নেওয়ার নজির আছে। ১৯৭৯ সালে আ স ম আবদুর রব সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার পরও চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে গিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগ নেতা নাসিম দুদকের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে ২০০৮ সালে বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পান। তাহলে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কেন বিদেশে যেতে দেওয়া হবে না?'

তিনি আরও বলেন, 'এটা খালেদা জিয়ার মৌলিক অধিকার। দেশের মানুষ মনে করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যা চাইবেন তাই করতে পারবেন। তিনি সর্বময় ক্ষমতার মালিক। এটা পাবলিক পারসেপশন।'

বিএনপি দলীয় এই সংসদ সদস্যের এসব মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারি দলের সংসদ সদস্যরা হইচই শুরু করেন। এ সময় স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী তাদের শান্ত রাখার চেষ্টা করেন।