সোমবার সারা দেশে বিক্ষোভের ডাক বিএনপির

‘খালেদা জিয়ার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত’

‘খালেদা জিয়ার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত’

দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে আগামী সোমবার সারা দেশের জেলা ও মহানগরে সমাবেশ করবে বিএনপি। শনিবার নয়াপল্টনস্থ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত গণঅনশনে এ ঘোষণা দেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে আমাদের মুক্ত করতে হবে। এর জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত আমরা। তাই আসুন আজকে আমরা দুই হাত তুলে শপথ গ্রহণ করি- বেগম জিয়ার মুক্তি এবং বিদেশে সুচিকিৎসার দাবি আদায় না করা পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। আগামী ২২শে নভেম্বর বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠিয়ে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা এবং তার মুক্তির দাবিতে ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এবং জেলা, মহানগর ও উপজেলাতে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। আর দাবি আদায় না হলে সামনে আবারও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবো।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, খালেদা জিয়া আজ জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে। দেশ ও বিদেশের চিকিৎসকরা বলেছেন- খালেদা জিয়ার উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে হবে। অথচ এ দেশের আইনমন্ত্রীসহ সরকার মিথ্যাচার করছে। তারা ৪০১ ধারার দোহাই দিচ্ছেন। অথচ এই ধারার বলে সরকার ইচ্ছা করলেই খালেদা জিয়ার চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারেন। বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করতে পারেন। অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। তা না হলে গণঅনশন দিয়ে শুরু হলো। এই আন্দোলন আপনাকে গদিচ্যুত করবে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এটা আমাদের জীবন-মরণের সমস্যা, আমাদের অধিকারের সমস্যা। নেত্রীকে অবশ্যই আমাদের মুক্ত করতে হবে। খালেদা জিয়ার জন্য যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে আমরা প্রস্তুত রয়েছি। তাকে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা না পর্যন্ত আমরা কেউ ঘরে ফিরে যাব না।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই স্বাধীন দেশে আমরা খালেদা জিয়াকে বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠাতে পারছি না। অনশনের মতন কর্মসূচি পালন করতে হচ্ছে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হচ্ছে না। অনতিবিলম্বে তাকে বিদেশ যেতে দিন, না হলে চূড়ান্ত আন্দোলনের কোনো বিকল্প নাই।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, আমি সাক্ষী ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমানের আমলে আমাকে চিকিৎসার জন্য জার্মানিতে পাঠানো হয়েছে। আমি যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ছিলাম। সংবিধানের কোন আর্টিকেলে আছে খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারবে না? আমি সরকারের কাছে জানতে চাই। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার কিছু হলে সরকারের কি অবস্থা হবে তা আমি জানি না। গা শিউরে উঠে আমার। ঘরে ঘরে আগুন জ্বলবে। এ সময় তিনি খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ঘোষিত সকল আন্দোলনে অংশ নেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।

প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, খালেদা জিয়ার যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে তাহলে আপনি এক ঘণ্টাও দেশে থাকতে পারবেন না। দেশের জনগণ সেটা হতে দেবে না।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, দুনিয়ার কোনো দেশে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সহজ ছিল না। আমাদেরও এ কথা মনে রাখতে হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, খালেদা জিয়ার জন্য বিএনপির অনেকে মন্ত্রী, এমপি ও নেতা হয়েছেন। তাই আজ তার জন্য রাস্তায় নামতে হবে। জীবনকে বাজি ধরতে হবে। দল থেকে যে কর্মসূচি দেওয়া হবে তা পালন করতে হবে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা না হলে রাজপথেই তার ফয়সালা হবে।

বিএনপির শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর পরিচালনায় গণঅনশনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান রিপন, শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, এবিএম মোশাররফ হোসেন, শিরিন সুলতানা, জহির উদ্দিন স্বপন, আমিনুল হক, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিমউদ্দিন আলম, হাবিবুর রশীদ হাবিব, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, অঙ্গসংগঠনের আফরোজা আব্বাস, সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, রফিকুল আলম মজনু, তাবিথ আউয়াল, মোস্তাফিজুর রহমান, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শহিদুল ইসলাম বাবুল প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

গণঅনশনের কর্মসূচির প্রতি একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, আহসান হাবিব লিংকন, কল্যাণ পার্টির মে. জে. (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, এলডিপির ড. রেদোয়ান আহমেদ, আবদুল করীম আব্বাসী, গণফোরামের জগলুল হায়দার আফ্রিকসহ ইসলামী ঐক্যজোট, এনপিপি, লেবার পার্টি, জাগপা, জাতীয় দল, মুসলিম লীগ, এনডিপি, ন্যাপ ভাসানীর নেতারা বক্তব্য রাখেন।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সংগঠনের অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের শওকত মাহমুদ, শত নাগরিকের আবদুল হাই শিকদার, বিশ্ববিদ্যালয়র সাদা দলের অধ্যাপক এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, অধ্যাপক লুতফুর রহমান, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ) এম আবদুল্লাহ, নুরুল আমিন রোকন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ) কাদের গনি চৌধুরী, শহিদুল ইসলাম, জাতীয় প্রেসক্লাবের ইলিয়াস খান, এ্যাবের প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ড্যাবের অধ্যাপক আব্দুস সালাম প্রমুখ নেতারা একাত্মতা প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন।

গণঅনশনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, অধ্যাক সাহিদা রফিক, তাহমিনা রুশদীর লুনা, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ কেন্দ্রীয় ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।