খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে প্রকম্পিত ঢাকা: বিএনপির বিজয় র‌্যালি জনসমুদ্রে পরিণত

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে প্রকম্পিত ঢাকা: বিএনপির বিজয় র‌্যালি জনসমুদ্রে পরিণত Photo: Babul Talukder

দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির এবারের বিজয় দিবসের শোভাযাত্রার সব ব্যানার ও মিছিলে ছিল সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি। মুক্তি মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই—স্লোগানে প্রকম্পিত ছিল ঢাকার রাজপথ।

দুপুর ২ টায় বিজয় র‌্যালি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন ইউনিটের নেতাকর্মীরা সকাল থেকেই খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে নয়া পল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন। দুপুর দেড়টার মধ্যেই বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে একদিকে নাইটেঙ্গেল মোড় অন্যদিকে ফকিলাপুল মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে যায় জনস্রোত।

র‌্যালি শুরুর পূর্বে উদ্বোধনী বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘একাত্তরের প্রথম মুক্তিযোদ্ধা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই সরকারের মিথ্যা মামলায় কারাগারে আটক অবস্থায় জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে হাসপাতালে। আমরা এমনই একটি সময় এই বিজয় র‌্যালি করছি। তাই এই র‌্যালি আমাদের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ন।’

Photo: Babul Talukder

তিনি বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধের মাধ্যমে যে রাষ্ট্র অর্জন করেছিলাম তার লক্ষ্য ছিল আমরা একটি নিরাপদ রাষ্ট্র পাবো। আমরা কথা বলার অধিকার পাবো, রাজনৈতিক কর্মসূচি পালনের অধিকার পাবো। কিন্তু এই সরকার একটি বাকশালী রাষ্ট্র কায়েমের লক্ষ্যে এদেশের জনগণকে জিম্মি করে ক্ষমতার চেপে বসে আছে।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকার আমাদের সকল অধিকার ধ্বংস করে দিয়েছে। রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করে দিয়ে মানুষের অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে বিজয়ের এ র‍্যালি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্বপূর্ণ এ জন্য যে ৫০ বছর আগে ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছিলাম একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য, যুদ্ধ করেছিলাম একটি মুক্ত স্বদেশ পাব বলে। যুদ্ধ করেছিলাম আমাদের বাক্‌স্বাধীনতা থাকবে, সংগঠন করার স্বাধীনতা থাকবে এবং আমাদের সন্তানদের জন্য একটি বাসযোগ্য ভূমি নির্মাণ করতে পারব। যেখানে গুম, খুন, হত্যা নির্যাতন থাকবে না। কিন্তু দুর্ভাগ্য, আমরা কী অসহায় জাতি হয়ে গেছি!’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণতন্ত্র ধ্বংস, ভোটের অধিকার এবং লেখার ও কথা বলার অধিকার কেড়ে নেওয়ার অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ র‍্যালি জনগণের নতুন করে জেগে ওঠবার র‍্যালি, এ র‍্যালি বাংলাদেশের মানুষের নতুন করে সংগ্রাম শুরু করবার র‍্যালি, এ র‍্যালি হচ্ছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে আনবার র‍্যালি।’

Photo: Babul Talukder

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্মৃতিচারণা করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে সবার আগে স্মরণ করতে চাই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে, যাঁর ঘোষণার মধ্য দিয়ে এ দেশের মানুষ স্বাধীনতাযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশকে গণতন্ত্রে ফিরিয়ে দেওয়া, বাক্‌স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা আজ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, যিনি দীর্ঘ ৯ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করেছিলেন, সংসদীয় গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছিলেন, তাও আজ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।’

ফখরুল তার বক্তব্যে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাঁর সুচিকিৎসা, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা, ৩৬ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করিয়ে সত্যিকার অর্থে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে র‍্যালির শুভ সূচনার আহ্বান জানান।

বৃহত্তর আন্দোলনের আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আজ বিজয় মিছিলের মধ্য দিয়ে আমাদের বিজয়ের যাত্রা শুরু হলো। স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদকে পরাজিত করে গণতšস্ল প্রতিষ্ঠা করে জনগণের সরকার গঠন করব। এই আমাদের অঙ্গীকার।’

উদ্বোধনী বক্তব্যের পর বেলা আড়াইটায় মির্জা ফখরুল ইসলাম ও জ্যেষ্ঠ নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেনের নেতৃত্বে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শোভাযাত্রা বের হয়। বিজয়নগর, কাকরাইল, শান্তিনগর মোড় হয়ে সেটি আবার একই পথে কাকরাইল, বিজয়নগর নাইটিঙ্গেল মোড়, পল্টন, ফকিরের পুল মোড় হয়ে আবার নয়াপল্টনে গিয়ে শেষ হয়। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার প্রথম সারিতে ছিল জাতীয়তাবাদী মহিলা দল, এরপর মুক্তিযোদ্ধা দল, ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ঢাকা মহানগর বিএনপির উত্তর ও দক্ষিণ শাখা, তাঁতি দল, মৎস্যজীবী দল, ওলামা দল, কৃষক দল ও শ্রমিক দলের নেতা-কর্মীরা ঢাক–ঢোল ও বাদ্যযন্ত্র নিয়ে অংশ নেন। শোভাযাত্রায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালামসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

 

বিএনপির বিজয় র‌্যালিতে আসা লক্ষ জনতা 'স্বাধীনতার অপর নাম, জিয়াউর রহমান', 'স্বাধীনতার ঘোষক জিয়া, লও লও লও সালাম', ‘মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ স্লোগানে পুরো নয়া পল্টন ও এর আশেপাশের এলাকা প্রকম্পিত করে তুলেন।

বিএনপিসহ ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা লাল-সবুজসহ বিভিন্ন ধরণের ক্যাপ, গেঞ্জি পরিধান করে, অনেকে মাথায় ব্যান্ড পরে, ঢাক-ঢোল ও বাশি বাজিয়ে বাদ্যের তালে তালে নেচে গেয়ে পরিবেশকে উৎসবমুখর করে রাখেন। অনেক নেতাকর্মীর গায়ে ছিল কালো কাপড় এবং গলায় ছিল প্রতীকী শিকল।

র‌্যালির সামনের দিকে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বড়-বড় ছবি প্রদর্শন করা হয়। র‌্যালিতে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার প্রতীকী অবস্থান নিয়ে রামপুরা থানা বিএনপির এক নারী নেত্রী অংশ নেন।

দুপুর আড়াইটায় রাজধানীর নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে এ র‌্যালি শুরু হয়ে কাকরাইল হয়ে শান্তিনগর মোড় ঘুরে ফকিরাপুল মোড় দিয়ে আবার দলীয় কার্যালয়ে সামনে এসে শেষ হয়।

এমজে/