রণক্ষেত্র হবিগঞ্জ: পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ, গুলি, আহত শতাধিক

রণক্ষেত্র হবিগঞ্জ: পুলিশ-বিএনপি সংঘর্ষ, গুলি, আহত শতাধিক

হবিগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষে পুলিশসহ শতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষে শহর রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। গতকাল বেলা দুইটা থেকে এ সংঘর্ষ শুরু হয়। দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে বিকাল পর্যন্ত। এতে পণ্ড হয়েছে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতাদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিতব্য সমাবেশ। সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের অন্তত ১০ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে বুধবার সমাবেশের আয়োজন করে জেলা বিএনপি। শহরের শায়েস্তানগর এলাকায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে সব প্রস্তুতি নেয়া হয়।

সমাবেশে বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জয়নাল আবেদীন ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবনসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত থাকার কথা। দুপুরে কেন্দ্রীয় নেতারা হবিগঞ্জে এসে সভায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এরই মধ্যে দুইটার কিছু আগে নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সমাবেশ স্থলে রওয়ানা হয়। এ সময় শায়েস্তানগর পয়েন্টে তাদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। পরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে থানা মোড়, পৌরসভা সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে। প্রায় ৩ ঘণ্টা চলে দফায় দফায় সংঘর্ষ। এ সময় পুরো শহরে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। পুলিশ শতাধিক রাউন্ড টিয়ারসেল ও বুলেট নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে পুলিশ সদস্যসহ ৫০ জন আহত হয়েছেন। গুরুতর আহতদের হবিগঞ্জ সদর হাসপাতাল ও সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এদিকে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনায় পণ্ড হয়ে যায় বিএনপি’র সমাবেশ। পরে কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সমবায় সম্পাদক জিকে গউছের বাসায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। সংঘর্ষের পর থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের ধরতে পুলিশ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করছে।

বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশস্থলে আসার সময় বিভিন্ন স্থানে পুলিশ তাদের বাধা দিয়েছে। শহরের শায়েস্তানগরে বাধা দিলে নেতাকর্মীরা সেখানে গিয়ে তাদের নিয়ে আসেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। এতে আমাদের ৩৩ জনেরও বেশি কর্মী-সমর্থক আহত হয়েছেন।

হবিগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহফুজা আক্তার শিমুল জানান, পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বাধা দেয়া হয়নি। পুলিশ শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করছিল। হঠাৎ বিএনপি নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এতে অন্তত ৭ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদেরকে হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনি বলেন, কী পরিমাণ রাবার বুলেট বা টিয়ারশেল নিক্ষেপ করা হয়েছে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আছে।

বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সমবায় সম্পাদক পদত্যাগী পৌর মেয়র জিকে গউছ বলেন, আমাদের শান্তিপূর্ণ সমাবেশে জুলুমবাজ সরকারের পালিত আওয়ামী পুলিশ বাহিনী নির্বিচারে হামলা ও গুলি চালিয়েছে। সরকার নিজেদের গদি টিকিয়ে রাখতে জনগণের বাক-স্বাধীনতা হরণ করছে। বিএনপিকে তাদের অনেক ভয় এজন্য সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করে আসছে। কিন্তু এভাবে হামলা মামলা আর গুলি করে জিয়ার সৈনিকদের দমিয়ে রাখা যাবে না। দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা না করা হলে রাজপথে তুমুল আন্দোলন গড়ে তুলে সরকারের পতন ঘটানো হবে।