নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আবার তামাশা হচ্ছে: জোনায়েদ সাকি

নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে আবার তামাশা হচ্ছে: জোনায়েদ সাকি

বর্তমানে আবার নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে তামাশা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। তিনি বলেছেন, কে নির্বাচন কমিশনারকে নিয়োগ দেবে? যদি নির্বাচন কমিশনারের নিয়োগক্ষমতা রাষ্ট্রপতির কাছে থাকে, তবে রাষ্ট্রপতি তো প্রধানমন্ত্রীর কাছে...। তাহলে নিয়োগকর্তা তো প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী তো তাঁর আজ্ঞাবহ লোকদের দিয়েই কমিশন গঠন করবেন। তার মানে আবার নূরুল হুদাদের মতো নির্বাচন কমিশন হবে। এটা তামাশা ছাড়া আর কিছুই নয়।

মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ১৪১তম জন্ম ও ৪৫তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার সন্ধ্যায় রাজশাহী নগরের সাংবাদিক ইউনিয়ন সম্মেলন কক্ষে বিভাগীয় কর্মিসভায় প্রধান বক্তা হিসেবে জোনায়েদ সাকি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, এসব দালাল কমিশনের মধ্যে তাঁরা আর নেই। তারা শপথ নিয়ে জনগণের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে। রাতের আঁধারের ভোটকে তারা অস্বীকার করে সেই ভোটকে জায়েজ করে। ক্ষমতা হস্তান্তরের নির্বাচন নয়, তবু ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৬৬ জন ইতিমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ দায় কার? তাদের। তাদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো দরকার। আর এ রকম লোকদেরই আবার খুঁজে বের করবে সরকার। সার্চ কমিটিও হবে তামাশার। মানুষকে ধোঁকা দেওয়ার বন্দোবস্ত। মানুষ একবার ধোঁকা খেয়েছেন। মনে রাখতে হবে, ন্যাড়া কিন্তু একবারই বেলতলায় যায়। তাই সাংবিধানিক কমিশন গঠন করতে হবে। যে কমিশনে সরকারি, বিরোধী দলসহ বিচার বিভাগের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।

জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। এক ভোট বেশি পেয়ে পুরো দেশ আপনার হবে, এটা চলবে না। ৩০০টি আসনে সরাসরি নির্বাচন হবে। এখানে ৩০০ জন এমপি হবেন। বিজয়ী প্রার্থীর নিকটতম ব্যক্তিদের নিয়ে আরও ৩০০ জন এমপি হবেন। সংসদে এমপিদের নিজের এলাকা নিয়ে কথা বলতে হবে। নিজের এলাকার বাইরে কোনো সিদ্ধান্ত গেলে, তিনি কিসের জনপ্রতিনিধিত্ব করেন। সংসদে এক ব্যক্তি বা সরকারের গুণগান বন্ধ করতে হবে। কিন্তু এটা করতে গেলে তো তিনি সাংসদ পদ হারাতে পারেন। কাজেই এ জায়গাতেও পরিবর্তন আনতে হবে। সব ঔপনিবেশিক গণবিরোধী আইন বাতিল করতে হবে। যে আইন মানুষকে নির্যাতনের বস্তু হিসেবে শাসককে সুযোগ দেয়, সেটা বাতিল করতে হবে। স্থানীয় সরকারকে ক্ষমতা দিতে হবে। আওয়ামী লীগ যদি এই রাজনীতিতে আসে, তাহলে তারা নিজেদের ভবিষ্যৎকে রক্ষা করতে পারবে। তা না হলে গণ–অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তাদের উৎখাত করতে হবে।

জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘সরকার পতন ব্যতীত বাংলাদেশের মানুষের আর কোনো পথ নেই। গুম-খুনের ভয় দেখিয়ে আর লাভ নেই। এগুলো পাকিস্তান, ব্রিটিশরাও করেছে। তাদের বিরুদ্ধে এ দেশের মানুষ লড়াই করে স্বাধীন হয়েছে। আপনারা এগুলো করে ভাবছেন, এগুলোর ভয় দেখিয়ে আন্দোলন ঠেকিয়ে দেবেন।’

আলোচনা সভায় গণসংহতি আন্দোলনের রাজশাহী জেলার আহ্বায়ক মুরাদ মোর্শেদের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাংবাদিক মাহমুদ জামান, আইনজীবী হাসনাত বেগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম প্রমুখ। আলোচনায় জোনায়েদ সাকিসহ অন্য বক্তারা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েমে জনগণের বৃহত্তর ঐক্য গঠনে মাওলানা ভাসানীর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনা করেন। ঐতিহাসিকভাবে মাওলানা ভাসানীর দর্শন ও আদর্শ এই ভূখণ্ডের মানুষের মুক্তির দিশারি। তাঁর মতো করে আগামী দিনে স্বৈরাচারী দুঃশাসনের বিপরীতে বৃহত্তর ঐক্যের ডাক দিতে হবে।