সঙ্কট উত্তরণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অপরিহার্য: ইবরাহিম

সঙ্কট উত্তরণে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অপরিহার্য: ইবরাহিম

দেশের রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার অপরিহার্য বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক।

রোববার রাজধানীর স্কাইসিটি হোটেলে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির উদ্যোগে 'নির্বাচন কমিশনের সংলাপ, লোডশেডিং ও জনদুর্ভোগ' শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, এই মুহূর্তে বা চলমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণের জন্য একটি নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার অপরিহার্য। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যতিত এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিগণের মধ্যে আলোচনা তথা রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা একান্তই কাম্য।

সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, জনগোষ্ঠীর মধ্যে যাদেরকে মধ্যবিত্ত বলা হয়, তারা আত্মসম্মানে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকে, তারা ভাঙে কিন্তু মচকায় না। সরকারের ভ্রান্ত অর্থনৈতিক পরিকল্পনায় এবং সরকারের ব্যর্থতার দায়ে, আজকে সেই মধ্যবিত্ত কঙ্কালসার। চোখে ঠুলি পড়ে যে সকল মন্ত্রী-আমাত্য গরিব খুঁজে বেড়ান তাদের এহেন মনোভাবের প্রতি লজ্জা ও প্রতিবাদ জানানোর ভাষা আমাদের জানা নেই। বর্তমান সরকারের মন্ত্রী এমপিরা যেভাবে মিথ্যা বলার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন, তাতে নিশ্চিতভাবেই গোয়েবলস জীবিত থাকলে মিথ্যার বেসাতি দেখে লজ্জায় মুখ লুকাতেন।

সরকার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী তেলের মূল্য বৃদ্ধির পায়তারা করছে। শুধুমাত্র জীবন বাঁচাতে মধ্যবিত্তের সঞ্চিত অর্থের সিংহভাগ চলে গেছে বাকীটা যাওয়ার পথে। এর পর কী? আমরা জ্বালানী তেল ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির অপচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি। বেসামাল বিদ্যুৎ খাত নিয়ে যে তেলেসমাতি চলছে তার সমাধান কোন পথে?

'সরকার যখন কুইক রেন্টাল পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেতে চাইলো তখন সকল বিরোধী রাজনৈতিকদলগুলো ও জ্বালানী খাতের বিশেষজ্ঞরা জোর গলায় বাধা দিয়েছিলেন। বলেছিলেন কুইক রেন্টাল একসময় সরকারকে মেন্টাল করে দিবে। আজকে তাই সত্য হয়েছে।'

কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, শুধুমাত্র দলীয় নেতাদের সুবিধা দিতেই যে এত দুর্নীতি হয়েছে তা এখন প্রমাণিত। এত হাঁক ডাক করেও সরকার কিন্তু জনগণকে বিদ্যুৎ দিতে ব্যর্থ। সংসদে এমপি মমতাজ দম্ভ করে বলেছিলেন যে, চুড়ি বিক্রি করার মতো মাথায় ঝুড়ি ভর্তি বিদ্যুৎ নিয়ে ফেরি করে বেড়ালেও, বিদ্যুতের ক্রেতা পাওয়া যাবে না কারণ, মানুষের ঘরে ঘরে প্রচুর বিদ্যুৎ। কিন্তু বর্তমানে খুঁজে দেখলে ঝুড়িতে বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না বরং কাঁচের চুড়ি কেনার মতো অর্থও মানুষের হাতে নেই। এক ঘন্টা করে লোডশেডিং হবে বলা হলেও কোথাও কোথাও সেটা ৩/৪ ঘণ্টারও বেশি পর্যন্ত হচ্ছে বলে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে জানা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বিদ্যুৎ নিয়ে সরকারের মেগা লুটপাট এখন জনগণের জন্য গলার ফাঁস। ভাদ্রের তালপাকা গরমে বাঘ মহিষের সাথে মানুষও একঘাট পানি খেতে নেমেছে। আমরা সরকারকে বলছি, দ্রুত কুইক রেন্টালের সমস্ত প্রকল্প বন্ধ ঘোষণা করে সরকারের অধীন সকল বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোকে সক্রিয় করুন।

সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন যে প্রক্রিয়ায় গঠিত হয়েছে তা সংবিধান সম্মত নয়। সরকারের ইচ্ছাকে বাস্তবায়নের সহযোগিতার জন্যই সরকার একটি কাস্টমাইজ করা আইন সংসদে পাশ করিয়েছেন, যেটা স্বচ্ছতা ও সততার তল্লাশি নিশ্চিত করে না। সরকারি দল তাদের পছন্দের লোকদের কমিশনে বসিয়ে মনগড়া ফরমায়েসী নির্বাচন অনুষ্ঠানের চেষ্টা করছে। যার কিছু নমুনা ইতিমধ্যে দেশবাসী ও বিশ্ববাসী দেখেছেন।

তিনি বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার নাটকের স্ক্রিপ্টে বারবার ভুল করছেন। মুখ ফসকে সত্য বলে আবার পরক্ষণেই অদৃশ্য ইশারায় ক্ষমা চাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম এসিড টেষ্ট ছিল কুমিল্লা সিটি নির্বাচন। জাতি চরম হতাশার সাথে লক্ষ্য করেছেন সরকারি সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করে একজন এমপি কীভাবে নির্বাচন কমিশনকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে আইন অমান্য করে নিজের দাপট বজায় রেখেছেন।

'আজকে দেশবাসী দেখেছেন ক্ষমতায় থাকা একজন এমপির দাপটের কাছে সাংবিধানিক সংস্থা নির্বাচন কমিশন কত অসহায়। সরকার যেভাবে অহংকারের সাথে হুংকার দিয়ে বলছে বর্তমান সরকারের অধীনেই আগামী সংসদ নির্বাচন হবে, তখন সরকারও থাকবেন এমপিরাও তাদের পদে বহাল থাকবেন। কমিশনাররা একজনকেই সামলাতে পারেন নাই সেখানে ৩৫০ জন জনকে সামলাবেন কোন মন্ত্রবলে?'

দল নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান কখনোই সম্ভব নয় মন্তব্য করে তিনি আরো বলেন, আগামীর নির্বাচন দলনিরপেক্ষ সরকারই পরিচালনা করবে ইনশাআল্লাহ। আন্দোলনের মাধ্যমেই সেই সরকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।