আইজিপির শর্তসাপেক্ষে ভিসা বাংলাদেশের জন্য অবমাননাকর: বিএনপি

আইজিপির শর্তসাপেক্ষে ভিসা বাংলাদেশের জন্য অবমাননাকর: বিএনপি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জাতিসংঘের সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদকে যুক্তরাষ্ট্র শর্ত সাপেক্ষে ভিসা প্রদান করায় জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। শর্তসাপেক্ষে ভিসা প্রদান বাংলাদেশের জন্য অবমাননাকর।

শনিবার গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা মনে করি, এই ধরনের শর্ত সাপেক্ষে ভিসা প্রদান বাংলাদেশের জন্য অবমাননাকর। সরকারের এই ধরনের দায়-দায়িত্বহীন ঔদ্ধত্বপূর্ণ আচরণের কারণে আন্তর্জাতিক সম্পর্ককে ঝুঁকির মধ্যে ফেলছে। বাংলাদেশে গুম, খুন, বিনাবিচারে হত্যার ভয়ঙ্কর মানবাধিকার লঙ্ঘন কর্মকাণ্ডের জন্য র‌্যাব এবং র‌্যাবের ৭ জন কর্মকর্তাকে নিষেধাজ্ঞা প্রদানের পরে জাতিসংঘের পুলিশ প্রধানদের সম্মেলনে বাংলাদেশের ডেলিগেশনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ এর নাম রয়েছে। এই সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজির আহমেদকে যুক্তরাষ্ট্র শর্ত সাপেক্ষে ভিসা প্রদান করায় জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘকে যে ডেলিগেশনের তালিকা প্রদান করে, সেখানে ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। বাংলাদেশের অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করার লক্ষ্যে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম, খুন, বিচার বর্হিভূত হত্যাকাণ্ডের মতো ভয়ঙ্কর মানবাধিকার লঙ্ঘনের নির্দেশদাতাদের একজন বেনজির আহমেদকে এই তালিকাভুক্ত করে সরকার এই সব মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদেরকে বৈধতা প্রদান করার চেষ্টা করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র শর্ত সাপেক্ষে ভিসা প্রদান করায় উক্ত পুলিশ কর্মকর্তা জাতিসংঘের এই নির্দিষ্ট সম্মেলন ব্যতীত অন্য কোনো কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জাতিসংঘের ১৯৪৭ চুক্তি অনুযায়ী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তি শুধুমাত্র জাতিসংঘের সুনির্দিষ্ট সম্মেলনে যোগ দিতে পারবেন এবং তার অবস্থান সীমিত থাকবে জাতিসংঘ প্রাঙ্গণে।

মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপিসহ দেশের প্রায় সকল গণতান্ত্রিক দল এই সরকারের হিংস্র আচরণ নিয়ে কথা বলে আসছে। ইতোমধ্যেই আমাদের দেশের অসংখ্য নেতাকর্মীকে এ সরকার গুম করেছে, ক্রসফায়ারে হত্যা করেছে, বিনাবিচারে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করেছে। দেশে কোনো গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই, মিটিং মিছিল করার কোনো অধিকার নেই। বিনা অনুমতিতে কোনো সমাবেশ পর্যন্ত করতে দেওয়া হয় না। গণমাধ্যমগুলোর ওপর একটা সেলফ সেন্সরশিপে বাধ্য করা হয়েছে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশের মানুষের কথা কর্ণপাত করাতো দূরে থাকুক এমনকি জাতিসংঘের মতো বিশ্বের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য শক্তিশালী সংস্থার পক্ষ থেকেও বার বার উদ্বেগ ব্যক্ত করা হলেও তারা তোয়াক্কা করছে না। হত্যা, গুম-খুন তারা চালিয়েই যাচ্ছে। সেই প্রেক্ষিতেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের দেশের আইন অনুযায়ী একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এই মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদেরকে তারা চিহ্নিত করেছে; যারা ক্ষমতাসীনদের পক্ষে থেকে এইসব মানবাধিকার বিরোধী অপতৎপরতা চালাচ্ছে। সেই অভিযোগেই আমাদের দেশের প্রতিষ্ঠান র‌্যাব এর ওপর এবং র‌্যাব ও পুলিশের কয়েকজন ব্যক্তিদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ, ভিসা বাতিল এবং তাদের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে।

সর্বশেষ ঘটনা প্রবাহ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার তাদের হিংস্র, মানবতাবিরোধী অপতৎপরতা চালিয়েই যাবে বিশ্ব বিবেক ও মতামতকে তোয়াক্কা না করে। ইতোমধ্যে ভোলায় গুলি করে দুই জনকে হত্যা, ঢাকা ও কুমিল্লায় পুলিশের হেফাজতে দুজনের মৃত্যু ও সারা দেশে জ্বালানি তেল, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির প্রতিবাদে বিএনপির চলমান আন্দোলনে পুলিশ ও সরকারি দলের হামলায় এটাই প্রতীয়মান হয়, সরকারের এই অপরিণামদর্শী ফ্যাসিবাদী সিদ্ধান্তের দায়দায়িত্ব কেবল সরকারকেই বহন করতে হবে। সত্য ও ন্যায়ের পথে জনগণের বিজয় অনিবার্য।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান প্রমুখ।