সরকারকে আর সময় দেওয়া যায় না: বিএনপি মহাসচিব

সরকারকে আর সময় দেওয়া যায় না: বিএনপি মহাসচিব

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, বর্তমান সরকার এতটা ভয়াবহ স্বৈরাচারে রূপ নিয়েছে যে তারা পুলিশ দিয়ে ঘরে ঘরে গিয়ে বিরোধীদের নাম নিচ্ছে, তল্লাশি করছে। তিনি বলেছেন, এই সরকারকে আর কোনো সময় দেওয়া যায় না। সরকার এখন জাতির জন্য একটা বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাকে অবিলম্বে অপসারণ করতে হবে।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে এক শোকমিছিল পূর্ব সমাবেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের পাঁচ নেতা-কর্মী হত্যার প্রতিবাদে এই শোকমিছিল বের করা হয়।

এ সময় সরকার অপসারণের আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এই দেশের মানুষ জেগে উঠেছে, তরুণ যুবকেরা জেগে উঠেছে। আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যাব, পেছনে ফিরব না। এই সরকারকে বাধ্য করব পদত্যাগ করতে, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা প্রদান করতে। অনেক রক্ত দিয়েছি, আরও রক্ত দেব। এই দেশের মানুষকে আমরা মুক্ত করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘তাঁরা (বিএনপির নেতা–কর্মীরা) আত্মাহুতি দিয়েছেন দেশকে স্বৈরাচারমুক্ত করতে। কর্তৃত্ববাদী সরকারের হাত থেকে মুক্ত করতে। তাঁরা মিছিলে থেকে এই দানবীয় সরকারের পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। এই আন্দোলনে আরও অসংখ্য আহত হয়েছেন। কারও চোখ চলে গেছে, কারও মুখ চলে গেছে, অনেকের বুকের মধ্যে এখনো বন্দুকের ছররা আছে। অসংখ্য মামলা হয়েছে, নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরপরও আমাদের আন্দোলন থেমে থাকেনি। প্রতিদিন এই স্বৈরাচার সরকারের পতনের লক্ষ্যে মিছিলে মানুষ আরও বাড়ছে।’

সম্প্রতি ২৯টি প্রতিষ্ঠানকে তথ্য পরিকাঠামো ঘোষণা দিয়ে সরকারি প্রজ্ঞাপনের কড়া সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মানুষ যেন সঠিক তথ্য জানতে না পারে, গণমাধ্যম যেন এই সরকারের দুর্নীতি প্রকাশ করতে না পারে, সে জন্য সার্কুলার দিয়েছে তারা কাউকে কোনো খবর দেবে না। এর অর্থ হচ্ছে তাদের দুর্নীতি, চুরি—সেগুলো ঢেকে রাখার জন্য সমগ্র দেশকে, জাতিকে বঞ্চিত করে রাখতে চায় সঠিক খবর থেকে।’

ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগে রাজবাড়ী জেলা মহিলা দলের সদস্য সোনিয়া আক্তারকে গ্রেপ্তারের কড়া সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘মানুষের কোনো নিরাপত্তা নেই। ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে গভীর রাতে রাজবাড়ীতে একজন মহিলা নেত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুটো ছোট বাচ্চা আছে তার। কী অপরাধ তার, অপরাধ সে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে। কেন আপনি কি গড?, দেবতা?, বিধাতা?—যে আপনার বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক দেশে যে কারও সমালোচনা করার অধিকার প্রত্যেক মানুষের আছে। আজকে আমাদের বোন সে কাজটি করেছে। এদের (সরকার) অত্যাচারের মাত্রা কোন জায়গায় গেছে যে তারা একজন নারীকে পর্যন্ত গভীর রাতে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসে।’

এই সরকারকে হটানোর কোনো বিকল্প নেই—মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের অস্তিত্বের জন্য, বাঁচার জন্য, পুরো জাতিকে রক্ষা করার জন্য হাসিনা সরকারকে সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার কোনো বিকল্প নেই। এ জন্য দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে, তারেক রহমানকে দেশে নিয়ে আসত হবে। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা—সেই মামলা প্রত্যাহার করে সত্যিকার একটা মুক্ত সমাজ গঠন করতে হবে।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমানউল্লাহ আমান ও আবদুস সালাম। এ সময় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দিন আলম, খায়রুল কবির, মোস্তাফিজুর রহমান, শিরিন সুলতানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশ শেষে একটি শোকমিছিল নয়াপল্টন থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে আবার নয়াপল্টন, ফকিরেরপুল ও আরামবাগ হয়ে নয়াপল্টনে বিএনপির কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।