রংপুর এখন মিছিলের নগরী

রংপুর এখন মিছিলের নগরী

বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে মিছিল আর স্লোগানের নগরীতে পরিণত হয়েছে রংপুর। বিভাগের ৮ জেলা ও আশেপাশের জেলাগুলোর নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমাবেশস্থলে মিলিত হচ্ছেন। অনেকে হেঁটে দলবল নিয়ে আসছেন, অনেকে আসছেন শত শত ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় চেপে। রংপুর শহরে প্রবেশের সব পথ দিয়েই আজ শনিবার সকাল থেকে মিছিল আসছে বিএনপির সমাবেশস্থলের দিকে।

রংপুরে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশের আগে গতকাল শুক্রবার থেকে দুই দিনের জন্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দেয় জেলা মোটর মালিক সমিতি। এ কারণে সাধারণ মানুষ দুর্ভোগে পড়লেও বিএনপির কর্মীরা দলেবলে নানা উপায়ে সমাবেশস্থলে আসেন। পথে তাঁদের কোথাও কোনো বাধা দেওয়া হয়নি বলে জানান তাঁরা।

লালমনিরহাট-কুড়িগ্রাম দুই জেলা থেকে রংপুর শহরে প্রবেশ করা যায় নগরের মাহিগঞ্জ সাতমাথা এলাকা দিয়ে। আজ সকাল ছয়টা থেকে আটটা পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করে দেখা গেছে, প্রায় ১০০ মিলিমিটার দূরের এলাকা কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলা থেকে একটি বড় মিছিল শহরে প্রবেশ করে। এরপর সকাল আটটা পর্যন্ত একে একে লালমনিরহাট জেলার বড়বাড়ী এলাকা থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল এসেছে। সেই সঙ্গে ওই এলাকার শত শত অটোরিকশায় নেতা-কর্মীরা স্লোগান দিতে দিতে সমাবেশস্থলের দিকে যান। ৯০ কিলোমিটার দূরের এলাকা কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলা থেকেও কয়েক শ অটোরিকশা শহরে প্রবেশ করে। এভাবে কুড়িগ্রামের উলিপুর, চিলমারী, নাগেশ্বরী, ভূরুঙ্গামারী, লালমনিরহাট সদর ও বড়বাড়ী এলাকা থেকেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা সকাল আটটার মধ্যে রংপুরে শহরে প্রবেশ করেছে।

গাইবান্ধা থেকে রংপুরে প্রবেশের দুটি পথের মধ্যে শহরের মাহিগঞ্জ এলাকায় সকাল সাতটার দিকে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা থেকে আসা বড় একটি মিছিল শহরে প্রবেশ করে। অন্য একটি পথ শহরের মডার্ন মোড় দিয়ে পলাশবাড়ী ও গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মিছিল এসেছে। এই এলাকা দিয়ে রংপুরে মিঠাপুকুর, পীরগঞ্জ উপজেলার মিছিলও আসতে দেখা যায়।

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী এলাকার বিএনপি নেতা বেলার হোসেন বলেন, ‘ফুলবাড়ী থেকে ভোর চারটার দিকে দুই শতাধিক অটোরিকশা তিস্তা সেতুর ওপর দিয়ে রংপুরে আসে। এই পথ পাড়ি দিতে সময় লেগেছে চার ঘণ্টা। পথে কোথাও কোনো বাধা ছিল না।’

শহরের শাপলা মোড়ে মিছিল করার সময় গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলা থেকে আসা নেতা-কর্মীরা জানান, বাস বন্ধ হওয়ার কারণে কোনো অসুবিধা হয়নি সমাবেশে আসতে। এলাকার সব ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ভাড়া করা হয়। এসব অটোরিকশা নগরের রবার্টসনগঞ্জ এলাকার স্কুল মাঠে রাখা হয়েছে। মিছিলে থাকা একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘ভোর তিনটা থেকে আমরা রংপুর শহরে আসা শুরু করি। রবার্টসনগঞ্জ মাঠ থেকে মিছিল নিয়ে আটটার দিকে সমাবেশস্থলে যাচ্ছি আমরা।’

এদিকে শহরের কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলার মিছিল এসেছে সকালেই। সেই সঙ্গে জেলার শহরে প্রবেশের আরও একটি বড় পথ বুড়িহাট দিয়ে সকাল ছয়টা থেকে আটটার মধ্যে লালমনিরহাট জেলার কালীগঞ্জ, আদিতমারী, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা এলাকা থেকে একাধিক খণ্ড খণ্ড পায়ে হাঁটা মিছিল শহরে প্রবেশ করেছে। একই সময়ে শত শত অটোরিকশাতেও এসেছেন নেতা-কর্মীরা। কালীগঞ্জ থেকে মিছিল নিয়ে আসা বিএনপির কর্মী নুরুজ্জামান বলেন, ‘ভোর তিনটায় আমরা ঘুম থেকে উঠেছি। এলাকার উপজেলা চত্বরে সমবেত হয়ে সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে দুই শ অটোতে করে রংপুরের বুড়িরহাট পর্যন্ত আসি। সেখান থেকে পায়ে হেঁটে মিছিল নিয়ে শহরে যাই।’

এভাবে শহরের আরও প্রবেশ পথ অন্যান্য ছোট ছোট সড়ক দিয়ে সকাল ছয়টা থেকে আটটা পর্যন্ত মিছিল শহরের সমাবেশস্থলে এসেছেন বিভিন্ন এলাকার বিএনপি নেতা-কর্মীরা।

রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান বলেন, এখনো কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর শোনা যায়নি। ভোর থেকে পুরো বিভাগের লোকজন আসতে শুরু করেছে। সব মিছিলই ছিল শান্তিপূর্ণ। গতকাল রাতেও বিভিন্ন এলাকার নেতা-কর্মীরা এসেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কোথাও কোনো সমস্যা করেনি।