দরজা ভেঙে তছনছ করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের অফিস, হিসাব শাখায় লুটপাট: মোশাররফ

দরজা ভেঙে তছনছ করা হয়েছে বিএনপি চেয়ারপারসনের অফিস, হিসাব শাখায় লুটপাট: মোশাররফ

রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শন শেষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘যে নগ্ন চিত্র দেখলাম, এটা বাংলাদেশে নজিরবিহীন। পৃথিবীতে এ রকম নজির নাই। এই ধরনের ঘটনা মহান মুক্তিযুদ্ধেও হয়নি।’

আজ সোমবার দুপুরে সাড়ে ১২টার দিকে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করেন কার্যালয়ে চেয়ারপারসনের অফিসের দরজা ভেঙে ভেতরে সবকিছু তছনছ করা হয়েছে। হিসাব শাখা লুটপাট করা হয়েছে।

এর আগে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়সহ কয়েকজন নেতাকে নিয়ে কার্যালয়ের বিভিন্ন কক্ষ পরিদর্শন করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের (১০ ডিসেম্বর) কর্মসূচিকে ঘিরে ৭ ডিসেম্বর দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দলটির নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালায় পুলিশ। এসময় পুলিশের গুলিতে বিএনপির এক কর্মী নিহত হন। আহত হন অনেকে। হামলার পরই কার্যালয়ে অভিযান চালায় পুলিশ।

পুলিশের অভিযানের পর থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয় তালাবদ্ধ ছিল এবং নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনের রাস্তায় প্রায় চার দিন যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এর মধ্যে ৮ ডিসেম্বর বিকেল থেকে পরদিন সকাল পর্যন্ত রাস্তায় যান চলাচলের সুযোগ দেওয়া হয়।

গতকাল রবিবার সকালে নয়াপল্টন এলাকার সড়ক যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। এরপর দুপুরে কেন্দ্রীয় দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ (প্রিন্স) কার্যালয়ে যান।

আজ সোমবার দলের নীতিনির্ধারকেরা কার্যালয় পরিদর্শন করেন। এরপর দলীয় কার্যালয়ের তিনতলায় গণমাধ্যমের সঙ্গে তারা কথা বলেন।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, ‘বিজয়ের মাসে জাতীয়তাবাদী দলের অফিস পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের পেটোয়া বাহিনী তছনছ করেছে। লুটপাট করেছে। লন্ডভন্ড করেছে। নগ্নভাবে সন্ত্রাস করেছে।‌ তারা নজিরবিহীন বর্বরতার পরিচয় দিয়েছে।‌’ তিনি বলেন, কার্যালয়ের দোতলায় চেয়ারপারসনের অফিস বন্ধ থাকে। সে অফিস দরজা ভেঙে ভেতরে গিয়ে তছনছ করেছে। যত ছবি ছিল ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। তিনতলাও তছনছ করেছে।‌ এখান থেকে আমাদের সব উপকরণ কম্পিউটার হার্ডডিস্ক আমাদের ফাইলপত্র সব নথিপত্র তারা নিয়ে গেছে।

এ ছাড়া অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সব অফিস থেকে কম্পিউটার হার্ডডিস্ক টেলিভিশন প্রিন্টার সবকিছু নিয়ে গেছে বলেও অভিযোগ করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

বিএনপির এই নেতা বলেন, আমাদের যে একটি হিসাব শাখা আছে, সেখান থেকে সব লুটপাট করে নিয়ে গেছে। নিচতলায় থাকা জিয়াউর রহমানের ম্যুরাল ভাঙচুর করা হয়েছে।

এসবের প্রতিবাদে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে দুপুরে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান নয়াপল্টন কার্যালয়ে পুলিশের অভিযান প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশের সরকার দেশের মানুষের সঙ্গে কেমন আচরণ করে এর বড় প্রমাণ আর কিছু নেই। পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশে এ ধরনের আচরণ কোনো সরকার করতে পারে—এটা কেউ বিশ্বাস করবে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোনো রাষ্ট্র ব্যবস্থা নেই। এখানে যেটা রয়েছে, তা জঙ্গলের সরকার বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

দলের আরেক জন স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, অপারেশন সার্চ লাইট ২৫ মার্চ, একাত্তরের কালো রাত্রে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর প্রার্থীকেও মনে হয় হার মানায়। এটা স্রেফ মানবাধিকার লঙ্ঘন।

সংঘর্ষে নিহত মকবুলের পরিবারকে সহযোগিতা

নয়াপল্টনে বিএনপি নেতা–কর্মীদের ওপর হামলার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত মকবুলের হোসেনের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আজ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের মকবুলের স্ত্রী হালিমা আক্তারের হাতে এক লাখ টাকা তুলে দেন বিএনপি নেতারা। নিহত মকবুলের মেয়ের মিথিলা আক্তারকে পড়ালেখার যাবতীয় দায়িত্ব ঢাকা মহানগর উত্তর বড় বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক নিয়েছেন। মকবুলের একমাত্র মেয়ে মিথিলা আক্তার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী।

বিএনপির পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়, নিহত হওয়ার পর মকবুলের পরিবারকে এক লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে।‌ এই পরিবারের পাশে থাকবে বিএনপি।