আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের ওপর লেলিয়ে দিয়েছে সরকার: বিএনপি

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জনগণের ওপর লেলিয়ে দিয়েছে সরকার: বিএনপি

ক্ষমতায় টিকে থাকতে ক্ষমতাসীন দল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জনগণের ওপর লেলিয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আপনারা রাজনৈতিক দলের সেবাদাস নন, জনগণের সেবক। আপনাদের সঙ্গে আমাদের শত্রুতা নেই। সরকারের বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে। জনগণের পাশে আপনারা থাকবেন।’

মঙ্গলবার বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসসহ গ্রেপ্তার হওয়া নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি, ৭ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে পুলিশের গুলিতে মকবুল হোসেনের মৃত্যু, মিথ্যা গায়েবি মামলা ও হামলা এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় পুলিশ জবরদখল করার প্রতিবাদে এই সমাবেশের আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা বিএনপি।

সমাবেশে পুলিশকে উদ্দেশ করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আপনারা জনগণের শত্রু নন। জনগণেরই অংশ। জনগণের স্বার্থরক্ষার শপথ নিয়েছেন। আপনারা কোনো দলের কর্মকর্তা বা কর্মচারী নন। আপনারা প্রজতন্ত্রের কর্মচারী।’

অন্যায় হুকুম মানতে গিয়ে র‍্যাব আন্তর্জাতিকভাবে নিষেধাজ্ঞা পেয়েছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বেআইনি হুকুম তামিল করতে গিয়ে তারা এখন নিষেধাজ্ঞায় আছে। সরকারের বিদায়ঘণ্টা বেজে গেছে। জনগণের পাশে আপনারা থাকবেন।’

১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে—এমন দাবি করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ১০ ডিসেম্বর জনগণ জয়ী হয়েছে। আওয়ামী লীগ পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হয়েছে।

বিএনপির এই নেতা অভিযোগ করে বলেন, ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে গেছে। মানুষ খেতে পারছে না। অনেকে আধা বেলা খেয়ে থাকে। আওয়ামী লীগের লুটপাটের কারণে পৃথিবীর মধ্যে কেবল বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য বেশি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

দলের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, এই সরকারকে কেউ বিশ্বাস করে না। এদের অধীনে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। এই সরকারকে হটানো ছাড়া বিকল্প নেই।

বিএনপি সংঘাতের রাজনীতি করে না, এমন মন্তব্য করে সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, লগি–বৈঠার রাজনীতি করে আওয়ামী লীগ। তারা সাপের মতো পিটিয়ে মানুষ হত্যা করেছে। দেশের জনগণ রায় দিয়েছে, তারা এই সরকারকে চায় না।

 

আওয়ামী লীগের আসল রূপ উন্মোচিত হয়েছে বলে সমাবেশে মন্তব্য করেন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, তারা (আওয়ামী লীগ) যে কত সহিংস হতে পারে, তা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মাধ্যমে বাইরের মানুষের কাছে উন্মোচিত হয়ে গেছে। নয়াপল্টনে যা ঘটেছে, তার বিপরীত চিত্র দিয়ে কূটনীতিকদের বোঝাতে চেয়েছে, তারা এ ঘটনায় দায়ী নয়। তবে কারা দোষী, তা প্রমাণ হয়ে গেছে।

বিএনপি বিদেশিদের কাছে নালিশ করে, দৌড়ঝাঁপ করছে—ক্ষমতাসীন দলের এমন বক্তব্যের জবাবে বিএনপির এই নেতা বলেন, বিদেশিদের পেছনে আওয়ামী লীগ দৌড়াচ্ছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। আওয়ামী লীগকে উদ্দেশ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশে যেভাবে অগ্রহণযোগ্য হয়েছেন, বিশ্বের দরবারেও আপনারা বাতিল হয়ে গেছেন।’

জনগণের মুক্তির আন্দোলনে যারা রাজপথে নেমেছে, তাদের ওপর গুলি না চালাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি সমাবেশ থেকে অনুরোধ জানান দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ।

প্রতিবাদ সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন প্রমুখ। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান সমাবেশের সভাপতিত্ব করেন। সঞ্চালনায় ছিলেন ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম।

নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে আজ যে সমাবেশ কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি, তা ছিল ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ থেকে ঘোষণা করা ১০ দফার একটি।