সরকার বিচারপতিকে ব্যবহার করে তত্ত্বাবধায়ক-ব্যবস্থা বাতিল করেছে : মির্জা আলমগীর

সরকার বিচারপতিকে ব্যবহার করে তত্ত্বাবধায়ক-ব্যবস্থা বাতিল করেছে : মির্জা আলমগীর

সরকার বিচারপতি খায়রুল সাহেবকে ব্যবহার করে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, এই সরকার অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে। ‘১৪ ও ‘১৮ সালে তো নির্বাচন হয়নি। দিনের ভোট রাতে হয়েছে। বিচারপতি খায়রুল সাহেবকে ব্যবহার করে কোর্টে ঘাড়ে পিস্তল ঠেকিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। কারণ, সুষ্ঠু ভোট হলে তারা ১০টি আসনও পাবে না। এজন্যই নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছে। এরা নাকি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী?

আজ শনিবার (২২ জুলাই) বিকেলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারুণ্যের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ কাউকে সহ্য করতে পারে না। তারা দেশটাকে বাপের তালুকদারি মনে করে। হিরো আলম একটা বাচ্চা মানুষ। তাকে মেরে আহত করেছে তারা। আমার খুব কষ্ট লেগেছে। তারা ভোট করতে দেয়নি তারা। এরা আসলে কাউকেই সহ্য করতে পারে না।

জিয়াউর রহমানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, তিনি শুধু মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাই দেননি। সুযোগ পেয়ে বহুদলীয় গণতন্ত্রও প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। অথচ সুযোগ পেয়ে আওয়ামী লীগ কায়েম করেছিল বাকশাল।

মির্জা ফখরুল বলেন, যখন এই দেশ সঙ্কটে পড়ে, তখন কে আসে? তখন আসে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া। বর্তমান সঙ্কটে এগিয়ে এসেছেন তারেক রহমান। দেশের প্রয়োজনে কালের প্রয়োজনে সামনে এসে এই পরিবার।

তিনি বলেন, এই সরকার একটি ভীরু কাপুরুষ সরকার। আমরা নির্বাচন চাই। তবে তোমাদের অধীনে নয়। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই।

তিনি আরো বলেন, এমন লোক বা নেতাকর্মী নেই, যার বিরুদ্ধে মামলা দেয়নি এই সরকার। গত সাত মাসে ৫০টি গায়েবি মামলা দিয়েছে তারা। এগুলো কিসের আলামত? একদিকে বিদেশীদের বলছে, ভালো নির্বাচন হবে। অন্যদিকে মামলা দিয়ে দিচ্ছে। আমাদের সম্ভব্য প্রার্থীদের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে নেয়ার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে।

মহাসচিব বলেন, স্যাংশনে এরা থামেনি। লক্ষ্য একটাই- আগামীতেও তারা ক্ষমতায় থাকবে। নিজেদের পছন্দ মতো ডিসি-এসপি নিয়োগ দিচ্ছে। এবার আর পারবে না। ‘বার বার ঘুঘু তুমি খেয়ে যাও ধান, এবার পড়েছ ধরা তুমি, ঘুঘু দিয়ে যাও জান।’

কাল বিলম্ব না পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করুন। নতুন একটি নির্বাচন কমিশন করে নির্বাচন দিন। তার মাধ্যমে নির্বাচনের ব্যবস্থা করুন।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, আজকের সমাবেশ একটি বিরল সমাবেশ, ব্যতিক্রমী সমাবেশ। এই সমাবেশের মাধ্যমে তরুণরা জেগে উঠেছে।

‘সরকার ঘরে ঘরে চাকরি দেবে, কেউ কি চাকরি পেয়েছে?’ ফখরুলের এমন প্রশ্নের উত্তরে নেতাকর্মীরা নেতিবাচক উত্তর দেয়। তখন তিনি বলেন, ‘চাকরি পায় তারা, যারা ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিতে পারে, যারা আওয়ামী লীগ করে।’

এ সময় ডেঙ্গু চিকিৎসার বেহাল অবস্থা জন্য সরকারকে দায়ী করে ফখরুল বলেন, এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেই। অথচ মানুষের পকেট থেকে টাকা কাটতে ব্যস্ত তারা।’

আজ শনিবার বিকেল সোয়া ৩টার পর কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে এ সমাবেশ শুরু হয়। দুপুর ২টা থেকে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও অনেক দেরিতে শুরু হয়।

সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নেতাকর্মীর ঢল নেমেছে। নেতাকর্মীদের পদচারণায় সরগরম হয়ে উঠছে ঐতিহাসিক এই উদ্যান। এর আগে সমাবেশে আসা নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে প্রতিবাদী ও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হয়।

সকাল থেকেই বিভিন্ন এলাকা থেকে বিএনপির নেতাকর্মীরা স্লোগানসহ মিছিল নিয়ে যোগ দিয়েছেন সমাবেশে। সমাবেশ আগত নেতাকর্মীরা খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন তারা। হাতে হাতে রয়েছে ব্যানার, ফেস্টুন, প্লে-কার্ড দেখা যাচ্ছে। স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। কানায় কানায় ভরে যায় ঐতিহাসিক এই উদ্যান। ব্যানার পোস্টার ও ফেস্টুনে ছেঁয়ে যায় মাঠের চারপাশ। তীব্র গরম আর তাপ উপেক্ষা করে সমাবেশস্থলে বসে থাকেন দলটির নেতাকর্মীরা।

তারুণ্যের এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। সঞ্চালনায় ছিলেন যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম মিল্টন, সেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল।

প্রধান বক্তা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী ও বিশেষ বক্তা ছাত্রদলের সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ বক্তব্য রাখেন।

দেশ বাঁচাতে তারুণ্যের সমাবেশে ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগের তরুণরা এই সমাবেশে অংশ নেন। সমাবেশে আসা নেতাকর্মীর ঢল দেখা যায়। রাজধানীর শাহবাগ, মৎস্য ভবন ও রমনা পার্ক এলাকায় নেতাকর্মীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আব্দুস সালাম, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, তাবিথ আউয়াল প্রমুখ।

উল্লেখ্য, বিএনপির গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে তরুণ ভোটারদের অংশ নেয়ার জন্য উজ্জীবিত করতেই দেশের ছয় বিভাগে এই কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় দলটির তিন অঙ্গ সহযোগী সংগঠন। এর মধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগে, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের একত্রে বগুড়ায়, বরিশালে এবং সিলেটে ও খুলনা বিভাগে এই কর্মসূচি পালন করেছে। আজ ঢাকা, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও ফরিদপুর বিভাগ এই সমাবেশ করার মধ্যে দিয়ে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটল।