সরকার গোটা জাতিকে ভয়ের মধ্যে রেখেছে: বিএনপি মহাসচিব

সরকার গোটা জাতিকে ভয়ের মধ্যে রেখেছে: বিএনপি মহাসচিব

সরকার গোটা জাতিকে ভয়ের মধ্যে রেখেছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন-একজন সাংবাদিক জানালেন, ১৬০ জন বিশ্ব নেতা ড. ইউনূস’র পক্ষে যে বিবৃতি দিয়েছেন, তার বিপক্ষে শনিবার ৫০ জন সম্পাদক বিবৃতি দিয়েছেন। আমাকে সাংবাদিক বলে গেলেন এটা ফেক; বেশিরভাগ সম্পাদকই স্বাক্ষর করেননি। কিন্তু এখন তারা কথা বলতে পারছেন না। এজন্য যে কথা বললে তারা বিপদে পড়বেন। 

রবিবার বিকালে রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে বিএনপি আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা সংকট এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন কৌশল’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। এতে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, কানাডা, ইরান, নেদারল্যান্ডস, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ইউএনডিপি, ইউএসএইডসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রসঙ্গ টেনে মির্জা ফখরুল বলেন, পরিষ্কার করে বলেছে, ধীরে ধীরে গোপনে নীরবে বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এটাই সত্য। এই অবস্থা থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। আবারও সবকে আহ্বান জানাতে চাই, আসুন সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে যে ভয়াবহ দানব জনগণের বুকের ওপর বসে আছে তার থেকে নিজেকে মুক্ত করি। 

বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফেরাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, সংকট শুধু বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ অথবা গণঅধিকার পরিষদের বিষয় নয়। এটা সমগ্র বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা। এরচেয়ে বড় সংকট আগে কখনো আসেনি। কথা বলতে পারব না, বিচার-নিরাপত্তা পাব না, স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা পাব না-এটা হতে পারে না। সব আন্তর্জাতিক সংস্থা ও আন্তর্জাতিক কমিউনিটি, একই সঙ্গে জনগণের কাছে আবেদন, আসুন বাংলাদেশের মানুষকে তার গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য পাশে দাঁড়াই।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি থামিয়ে হেলপারকে মারধর ও ময়লার গাড়ি ভাঙচুর এবং ককটেল বিস্ফোরণ মামলায় রোববার আদালতে চার্জশিট দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে ফখরুল বলেন, এই মামলার বিচার কাজ শুরু হয়েছে। বিএনপির ৪০ লাখ নেতাকর্মী এই ধরনের মামলা ফেস করছে। এ রকম একটি প্রতিকূল পরিবেশে যেখানে আদালত বলতে কিছু নেই; যেখানে প্রশাসন বলতে কিছু নেই। তারা আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের জন্য।

মির্জা আলমগীর বলেন, এই মুহূর্তে আমরা কেন রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে এলাম-ছয় বছর হয়ে গেল। এটা এখন বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভেতরে উগ্রবাদ দানা বাঁধছে, ভেতরে বন্দুকযুদ্ধ হচ্ছে। যেটা আমাদের জন্য শুধু নয়, আন্তর্জাতিক কমিউনিটির জন্য অত্যন্ত চিন্তার বিষয় যে, রোহিঙ্গা এলাকায় উগ্রবাদ তৈরি হচ্ছে কিনা। তিনি বলেন, সরকারের জনগণের শক্তি না থাকায় শক্ত হয়ে রোহিঙ্গা বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে কোনো কথা বলতে পারে না। তাই এই সরকারকে হটানো না গেলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, জনগণের সমর্থন নিয়ে সরকার প্রতিষ্ঠা করা গেলে আমরা রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত সমাধান করতে পারব বলে বিশ্বাস করি।

এতে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় ১৬ দফা প্রস্তাব তুলে ধরে বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা দেশের অর্থনীতিতে একটি ক্রমবর্ধমান সমস্যা। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য প্রায় হুমকিস্বরূপ। রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায়, মর্যাদাপূর্ণ এবং টেকসই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার মাধ্যমে যত দ্রুত সম্ভব আমাদের সংকটের সমাধান করতে হবে। এটি অর্জনের জন্য আমাদের প্রতিবেশীসহ সব আন্তর্জাতিক বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে মিয়ানমারের ওপর কার্যকর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।

বিএনপি মহাসচিবের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদের সঞ্চালনায় সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, কল্যাণ পার্টির মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণঅধিকার পরিষদ একাংশের নুরুল হক নুর, সাবেক রাষ্ট্রদূত ইফতেখারুল করীম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শাহেদুজ্জামান, ইন্ডিপেন্ডেট ইউনিভার্সিটির ড. জাহেদুর রহমান প্রমুখ। বিএনপি নেতাদের মধ্যে আরও ছিলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকতউল্লা বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, জয়নুল আবেদীন, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, মনিরুল হক চৌধুরী, মিজানুর রহমান মিনু, আবদুস সালাম, জয়নাল আবদিন ফারুক, ইসমাইল জবিউল্লাহ, অধ্যাপক তাজমেরি এসএ ইসলাম, এনামুল হক চৌধুরী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, ফজলুল হক মিলন, আসাদুজ্জআমান, জহিরউদ্দির স্বপন, কামরুজ্জামান রতন, মীর হেলাল, তাবিথ আউয়াল, ইশরাক হোসেন, ফারজানা শারমিন পুতুল প্রমুখ। 

এছাড়াও ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, জাগপার তাসমিয়া প্রধান, খন্দকার লুতফুর রহমান, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, মুসলিম লীগের শেখ জুলফিকার বুলবুল চৌধুরী, মাইনোরিটি জনতা পার্টির সুকৃতি মন্ডলসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতা।