ঢাকায় সমাবেশসহ বিএনপির নতুন কর্মসূচি ঘোষণা

পদত্যাগ করেন, নইলে জনতাই ক্ষমতা দখল করবে: চট্টগ্রামের জনসমুদ্রে সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা আলমগীর

পদত্যাগ করেন, নইলে জনতাই ক্ষমতা দখল করবে: চট্টগ্রামের জনসমুদ্রে সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা আলমগীর

সকাল থেকে বৃষ্টি। বিকালেও বৃষ্টির বিরতির দেখা মিলেনি। বৃষ্টির বাধাকে উপেক্ষা করেই বৃহস্পতিবার বিকাল থেকে জনতার ঢল ছুটতে শুরু করে চট্টগ্রাম নগরীর কাজী দেউড়ি মোড়ে। তাদের দাবি একটাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন। নগরীর কাজীর দেউড়ি মোড় থেকে লাভলেইন পর্যন্ত সড়কের প্রায় আধা কিলোমিটার পর্যন্ত বিএনপির নেতা-কর্মীদের অবস্থান দেখা গেছে। তাদের হাতে ছিল ব্যানার ও ফেস্টুন। বিএনপির রোড মার্চের বহর নগরীতে প্রবেশ করার মুহূর্তে সমাবেশের জন্য নির্ধারিত এলাকা লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। 

কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামে রোডমার্চে অংশগ্রহণ করে হাজার হাজার উৎসুক মানুষ ও দলীয় নেতাকর্মী। কারও হাতে ছিল ব্যানার, কারও হাতে ফেস্টুন। কারও মুখে স্লোগান, কারও মুখে উচ্ছ্বাস পথে পথে জনতার ভিড় ঠেলেই এগিয়ে যায় বিএনপি’র একদফা দাবিতে চলমান বিভাগীয় সপ্তম রোডমার্চের বহর। সকালে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি উপেক্ষা করে কুমিল্লার বুড়িচংয়ের কালাকচুয়া থেকে উদ্বোধনী সমাবেশের মাধ্যমে শুরু হয় এই রোডমার্চ। পথে পথে বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে কুমিল্লা, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী রোডমার্চের বহরে যোগ দেন। বান্দরবান থেকে রোডমার্চে যোগ দেয়া বিএনপি নেতাকর্মীদের গাড়িবহরে হামলা চালায় আওয়ামী লীগ নেতারা। ৪০টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। হামলায় বিএনপি’র ২০ নেতাকর্মী গুরুতর আহত হন।

রোডমার্চের বহর চট্টগ্রাম পৌঁছতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়। দীর্ঘপথে তিনটি পথসভাসহ ৫টি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

চট্টগ্রামে রোডমার্চ শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যুগপৎ আন্দোলনে ১৮ অক্টোবর পর্যন্ত নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে নয়টায় চট্টগ্রামের নেভাল অ্যাভিনিউ সড়কে রোডমার্চ শেষে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই ঘোষণা দেন।

কর্মসূচি ঘোষণা করে আওয়ামী লীগের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আপনাদের শুভবুদ্ধির উদয় হোক। আপনারা পদত্যাগ করেন। নির্দলীয় সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। নইলে জনতাই ক্ষমতা দখল করবে।’

নতুন কর্মসূচি

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার দাবিতে ৯ অক্টোবর সারা দেশের মহানগর এবং জেলায় সমাবেশ ও মিছিল।

১২ অক্টোবর ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ঢাকায় ছাত্র কনভেনশন।

১৪ অক্টোবর খালেদা জিয়ার মুক্তি ও উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ প্রেরণের দাবিতে ঢাকাসহ জেলা ও মহানগরে অনশন।

১৬ অক্টোবর এক দফা দাবিতে ঢাকায় যুব সমাবেশ।

১৮ অক্টোবর ঢাকায় সমাবেশ। সে সমাবেশ থেকে আবারও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

চট্টগ্রামে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘অনেক কথা বলেছি, সমাবেশ ও পদযাত্রা করেছি, রোডমার্চ করেছি। আর নয়। এরপর আর রোডমার্চ নেই। এরপর সব ঢাকায় হবে। রাজধানীকে এবার পতন ঘটাতে হবে।’

সরকারের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ‘অনেক মানুষ খুন করেছেন। হাত রক্তে রঞ্জিত করেছেন। আমার ভাইদের হত্যা করেছেন। অনেক স্ত্রীকে স্বামীহারা করেছেন। আর আমরা করতে দেব না, আমরা পরিষ্কার বলতে চাই। আমাদের রাষ্ট্রের পুলিশ বাহিনীকে বলতে চাই, আর অন্যায় হুকুমের মধ্যে দিয়ে গুলি করবেন না, মিথ্যা গায়েবি মামলা দেবেন না। মানুষ জেগে উঠেছে। এখনো সময় আছে, শান্তিপূর্ণভাবে পদত্যাগ করেন। আপনাদের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। আপনারা পদত্যাগ করবেন, সংসদ বিলুপ্ত করবেন, নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দেবেন, নতুন নির্বাচন কমিশন হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি মন্তব্য নিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আপনি বলেছেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার আর কী দরকার। বয়স ৮০ হয়ে গেছে। আসলে খালেদা জিয়াকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এ রাজনীতি আমরা চাই না। আমরা এ মাসটা দেখতে চাই। সামনে দুর্গাপূজা আছে। দুর্গাপূজার আগে আমরা কোনো কর্মসূচি দিতে চাই না। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। আমরা অহিংস আন্দোলন করছি।’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের ওপর আক্রমণ করা হয়, লোকজনকে অন্যায়ভাবে হয়রানি করা হয়, গ্রেপ্তার করা হয়, তবে দেশের মানুষ মেনে নেবে না। আঘাতে প্রত্যাঘাত করা হবে। প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। খালেদা জিয়াকে যারা হত্যা করতে চায়, তারেক রহমানকে যারা নির্বাসিত করে রাখতে চায়, তাদের পতন হবেই। ৪৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে যে মিথ্যা মামলা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করতে হবে। মানে মানে বিদায় হও। নইলে ফয়সালা হবে রাজপথে।’

প্রধান বক্তার বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘এই ভোটচোরদের মধ্যে আছে কিছু সরকারি কর্মকর্তা, কিছু লুটেরা ব্যবসায়ী ও দুর্বৃত্ত রাজনীতিবিদ। এদের ছাড় দেওয়া যাবে না। অবশ্য এখন এদের হৃদয় কাঁপছে। এরা বিদেশে যেতে পারবে না। বিদেশে থাকা তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত হবে। এবার আগের মতো আর ভোট চুরি করা যাবে না। আমরা এখন শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করছি। আমরা এখন প্রতিবাদ করছি। কিন্তু আমাদের বাধা দিলে আমরা প্রতিরোধ করব।’

চট্টগ্রাম নগর বিএনপির আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেনর সভাপতিত্বে ও সদস্যসচিব আবুল হাশেমের সঞ্চালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বরকতউল্লা বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন, আবদুল আউয়াল, কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য গাজী শাহজাহান জুয়েল প্রমুখ।