সময় কম: সরকারকে বিএনপি মহাসচিব

সময় কম: সরকারকে বিএনপি মহাসচিব

সরকারের সামনে সময় কম জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘পূজার ছুটির মধ্যে সিদ্ধান্ত নেন। পদত্যাগ করে সসম্মানে বিদায় নেবেন নাকি জনগণ দ্বারা বিতাড়িত হবেন। জনগণের ভাষা বুঝতে পেরে শান্তিপূর্ণভাবে বিদায় নেন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন।’

বুধবার সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনের সড়কে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজন করে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপি। সমাবেশে দলের কেন্দ্রীয় ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘জনগণের ভয়ে সরকার কাঁপতে শুরু করেছে। এই সরকারের দিন ঘনিয়ে আসছে। সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। জনগণ জানিয়ে দিয়েছে, পাততাড়ি গুটাও, মানে মানে বিদায় হও। সামনে সময় কম।’

ক্ষমতায় টিকে থাকতে সরকার নানা অপকৌশল নিচ্ছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, সরকার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের মিথ্যা অপপ্রচারে জনগণ বিভ্রান্ত হচ্ছে না, বর্তমান সরকারের সাংবিধানিক ভিত্তি নেই। যে সংবিধানের কথা বলে তারা, সেই সংবিধানকে বেআইনিভাবে চুরি করে তাদের পক্ষে নিয়ে এসেছে। পঞ্চদশ সংশোধনী অসাংবিধানিক ও জনগণের সঙ্গে প্রতারণামূলক।

মির্জা ফখরুল বলেন, গত কয়েক মাসে বিএনপির ৯৬ নেতা-কর্মীকে সাজা দেওয়া হয়েছে। তাদের পরিকল্পনা হচ্ছে, বিএনপির যারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারে, তাদের সাজা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেওয়া। তাহলে তাদের মাঠ পরিষ্কার। কতটা ভীত হলে এমন ব্যবস্থা নিচ্ছে। এত মামলা, নির্যাতন করেও দমাতে পারছে না। মামলা-হামলা করে আর জনগণকে ঠেকিয়ে রাখা যাবে না।

আজকের সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, খুব বেশি আশ্চর্য হইনি। বিএনপির বড় সমাবেশ, কর্মসূচির আগের দিন নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি অভিযোগ করেন, গতকাল থেকে ২৫০ জনের বেশি বিএনপির নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সমাবেশ থেকে ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশের ঘোষণা দেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের মধ্য দিয়ে মহাযাত্রা শুরু হবে। সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আমরা ফিরে যাব না। অনেক বাধা আসবে, বিপত্তি আসবে। সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ছুটে যেতে হবে।’

বিএনপি আলোচনা-সমঝোতায় বিশ্বাসী জানিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আলোচনা-সমঝোতা গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ। কিন্তু এই সরকার পদত্যাগ করলেই কেবল আলোচনা হবে। সংবিধানের দোহাই দিয়ে আর ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না।

দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগ স্লোগান বদলে দিয়েছে ‘আমার ভোট আমি দেব, দিনের ভোট রাতে দেব’। কারণ, দিনে ভোট হলে শতকরা ১০ শতাংশ ভোটও তারা পাবে না। আরেকটি বিনা ভোটারের নির্বাচন করে তারা ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার মিথ্যা স্বপ্ন দেখছে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি বসে পড়লে শাপলা চত্বরের মতো হবে। শাপলা চত্বরে খুনখারাবি করেছেন, অন্যায় করেছেন তা স্বীকার করে নিলেন। তবে মনে রাখবেন, ওরা (হেফাজতে ইসলাম) আর আমরা এক না। জনগণের ভোটে তিনবারের ক্ষমতায় যাওয়া দল বিএনপি।’

তলেতলে আওয়ামী লীগ দুর্বল হয়ে গেছে বলে দাবি করেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির (রিজভী)। তিনি বলেন, সরকার বিচলিত হয়ে পড়েছে। আতঙ্কিত হয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা উল্টাপাল্টা হুমকি দিচ্ছেন। বিএনপির এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে গ্রেপ্তারের হিড়িক চালিয়েছে পুলিশ৷

সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাপলা চত্বরের ভয় দেখালেন। শাপলা চত্বরে কী ঘটিয়েছিলেন জাতিকে জানাতে হবে। জোর করে নির্বাচন করতে চাইবেন আর আমরা বসে মুলা খাব, তা হবে না। আমরা আইন হাতে তুলে নিতে চাই না। বেআইনিভাবে যেখানে বাধা দেবেন, সেখানেই লড়াই হবে।  

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, বরকতউল্লা, শামসুজ্জামান, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম, ঢাকা উত্তরের আহ্বায়ক ফরহাদ হালিম, নরসিংদী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুল কবির, গাজীপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক প্রমুখ। সমাবেশ সঞ্চালনা করেন ঢাকা উত্তরের সদস্যসচিব আমিনুল ইসলাম ও দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব লিটন মাহমুদ।

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আজ বেলা দুইটায়  নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে বেলা একটা থেকে দুইটা পর্যন্ত পল্টন, কাকরাইল, ফকিরাপুল, নয়াপল্টন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সমাবেশে অংশ নিতে বিএনপিসহ দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হন। মিছিল নিয়ে ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলা থেকেও নেতা-কর্মীরা অংশ গ্রহণ করেন সমাবেশে। সমাবেশ শুরুর আগেই নয়াপল্টন, কাকরাইল, ফকিরাপুল ও বিজয়নগর এলাকা লাখো নেতা-কর্মীর জমায়েতে লোকারণ্য হয়ে ওঠে।

বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে, সমাবেশে আসতে রাজধানীর বিভিন্ন প্রবেশমুখে বাধা দেওয়া হয়েছে নেতা-কর্মীদের।