যেটার কবর হয়ে যাবে, সেটা নিয়ে ১৭৩ দিন হরতাল করলেন কেন: মির্জা আলমগীর

যেটার কবর হয়ে যাবে, সেটা নিয়ে ১৭৩ দিন হরতাল করলেন কেন: মির্জা আলমগীর

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আওয়ামী লীগ ১৭৩ দিন হরতাল করেছে। এখন চিৎকার করে বলছেন, ওটা নাকি আজিমপুর কবরস্থানে চলে গেছে। কবর দিয়ে দিয়েছেন। যেটার কবর হয়ে যাবে, সেটা নিয়ে ১৭৩ দিন হরতাল করলেন কেন?’

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ‘গণতন্ত্র ও এক দফা দাবি আদায়ে মরহুম সাইফুদ্দিন আহমেদ মনির ভূমিকা’ শীর্ষক এই সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট।

আওয়ামী লীগ হরতালের সময় বাসে গান পাউডার দিয়ে মানুষ মেরেছে, এমন অভিযোগ তুলে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘এতগুলো মানুষকে মারলেন কেন?’

জনগণের আশা–আকাঙ্ক্ষা মেনে নিয়ে সে সময় বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে নিয়েছিল উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন চারটা নির্বাচন হয়েছে। চারটা নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, গ্রহণযোগ্য হয়েছে। আজকে আওয়ামী লীগ জানে সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন হলে জনগণ ভোট দিতে পারলে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। সুতরাং তারা ওটাতেই লেগে আছে সংবিধানের মধ্যেই তাকে নির্বাচন করতে হবে।

সাইফুদ্দিন আহমেদ ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৩ অক্টোবর তিনি মারা গেছেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর। জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের শরিক সাইফুদ্দিন মনি নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠনকে নিয়ে গড়ে ওঠা ছাত্র ঐক্যর অন্যতম নেতা ছিলেন। ছাত্রজীবন শেষে অলি আহমেদের ডেমোক্রেটিক লীগে যুক্ত হন এবং পরবর্তী সময়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক হন।

সাইফুদ্দিন আহমেদকে স্মরণ করে আলোচনা সভায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, আজকের দিনে এ ধরনের রাজনীতিবিদ খুঁজে পাওয়া যায় না। তাঁর সংসার ছিল না। ছেলেমেয়ে ছিল না। সে নিয়ে চিন্তাও ছিল না। দেশের মানুষের উন্নতি কল্যাণ কীভাবে হবে, সেই চিন্তাই তিনি করতেন। তিনি সৃজনশীল মানুষ ছিলেন।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, ‌‘গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমাদের শেষ বার্তা দিয়ে বলেছেন, আগামী নির্বাচনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকবেন এবং আবারও তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে আসবেন। সেটাই যদি মনে করেন উনি নির্বাচিত হয়ে আসবেন, তাহলে তো নির্বাচনের প্রয়োজনই নেই। কোনো দরকার নাই।’

বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনে অংশ নিতে যে বাধা সৃষ্টি করছেন আমাদের যে নির্বাচনে আসতে দিতে চাচ্ছেন না, তার একটাই কারণ, তারা চান খালি মাঠে যেটাকে আমরা বলি ওয়াকওভার, সেই ওয়াকওভার হয়ে যাওয়া। সে কারণে ওবায়দুল কাদের সাহেবেরা চিৎকার করে একটাই কথা বলতে শুরু করেছেন তারা থাকবেন, এটাই শেষ বার্তা।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশে এমন সংস্কৃতি হয়েছে যে একটা দল আরেকটা দলকে বিশ্বাস করে না। ৫২ বছর পরও চিন্তা করতে হয় এই সরকারের অধীন নির্বাচনে ঠিক হয় না। পাকিস্তানও নির্বাচন পদ্ধতি উন্নতি করে ফেলেছে। নেপাল-মালদ্বীপ সুষ্ঠু করে ফেলেছে। এখন শ্রীলঙ্কাও... তাহলে আমরা কেন পারছি না। আমরা পারছি না একটা রাজনৈতিক দলের কারণে, সেটা হচ্ছে আওয়ামী লীগের কারণে।’

সরকারের বিরুদ্ধে যাঁরা যুগপৎ আন্দোলন করছেন না, তাঁরাও এই সরকারের অধীন সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মনে করছে জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, কমিউনিস্ট পার্টি, বাম ফ্রন্ট, জামায়াত ইসলাম, চরমোনাই পীর সাহেব, সবাই বলছে এই সরকারের অধীন নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এমনকি জাতীয় পার্টির কাদের সাহেবও বলেছেন। তিনি সরকারের উদ্দেশে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘তাহলে কেন জোর করে বসে আছেন।’

বিএনপির প্রতিটি সমাবেশে মানুষের ঢল নামছে, সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো আসছে বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল। বিএনপি আবারও ২৮ তারিখ কর্মসূচি দিয়েছে বলেন তিনি।

জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটের প্রধান সমন্বয়কারী ফরিদুজ্জামান ফরহাদ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। এতে আরও বক্তব্য দেন এই জোটের নেতা জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি জাগপা সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল আমিন ব্যাপারী প্রমুখ।