প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, পশ্চিমা শক্তির অনেকেই বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন বানচাল করে তাদের পোষ্য সরকারকে ক্ষমতায় বসানোর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। নির্বাচনের শেষ মুহূর্তে বিএনপি এসে নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে ভন্ডুল করতে পারে এমন আশঙ্কা ব্যক্ত করেন তিনি। এজন্য সংসদ নেতা শেখ হাসিনা দলীয় এমপিদের সতর্ক এবং ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
রবিবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সন্ধ্যা ৬টা থেকে প্রায় সাড়ে সাতটা পর্যন্ত একটানা এই বৈঠকে দলের আরও ৭ জন এমপি বক্তব্য রাখেন। এদের মধ্যে রয়েছেন, নারায়ণগঞ্জের শামীম ওসমান, রাজবাড়ির কাজী কেরামত আলী, লক্ষ্মীপুরের নুর উদ্দীন চৌধুরী নয়ন, লালমনির হাটের মোতাহার হোসেন, চট্টগ্রামের আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দীন নদভী, সংরক্ষিত আসনের সদস্য বরিশালের সৈয়দা রুবিনা আক্তার মীরা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অ্যারোমা দত্ত। তবে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত সূত্র জানায়, বিভেদ ভুলে সবাইকে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুরোপুরি পচাত্তরের পূর্বাবস্থা বিরাজ করছে। জাতীয় ও আন্তজার্তিক ষড়যন্ত্রকারীরা সক্রিয় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ২০১৪ এবং ২০১৮ সালের মতো নির্বাচন এবার হবে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মধ্য দিয়েই সবাইকে জিতে আসতে হবে। কমপক্ষে ৬০ ভাগ ভোটার কেন্দ্রে উপস্থিত করতে হবে। যাকে মনোনয়ন দেওয়া হবে তার পক্ষেই কাজ করতে হবে। এখানে যারা উপস্থিত রয়েছেন, তারা সবাই মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। আমার কাছে সার্ভে রিপোর্ট রয়েছে। ছয় মাস পরপর করা সার্ভে রিপোর্ট আমার হাতে রয়েছে। জয়ের সম্ভাবনা যার বেশি তাকেই মনোনয়ন দেওয়া হবে।
কাউকে জয়ী করার দায়িত্ব নিতে পারব না- এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভোট অবাধ ও নিরপেক্ষ হবে। এই ভোটে সবাইকে জিতে আসতে হবে। কাউকে জিতে আনার দায়িত্ব আমি নিতে পারব না। আমি কারও চেহারা দেখে মনোনয়ন দেব না। দেখে শুনে জনপ্রিয় ব্যক্তিদের নমিনেশন দেবো। এখানে যারা আছেন সবাই মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। যাকে নমিনেশন দেব তার জন্য কাজ করতে হবে। নমিনেশন পান না পান নৌকার বিরোধীতা করা যাবে না।’ যারা নৌকার বিরোধীতা করবে তাদের রাজনীতি চিরতরে শেষ বলেও তিনি হুঁশিয়ার উচ্চারণ করেন।
নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমা কূটনীতিকদের দৌঁড়ঝাপকে ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র সবসময়ই ছিল। এবারও থাকবে। এর মধ্য দিয়েই নির্বাচন অনুষ্টিত হবে।
বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন- যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনী প্রক্রিয়া ভন্ডুলের উদ্দেশ্যে বিএনপি শেষ মুহূর্তে নির্বাচনে অংশ নিতে পারে। তারা নির্বাচন প্রতিহতের চেষ্টাও করতে পারে।
জানা গেছে, বৈঠকে বিএনপির চলমান আন্দোলনের প্রসঙ্গ নিয়েও কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন করলে কোনো বাধা দেওয়া হবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। বলেন, তারা আন্দোলন করতে চায় করবে। কোনো সমস্যা নেই। আমরা বাধা দেব না। তবে, অগ্নিসন্ত্রাস, ভাঙচুর করলে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা সব মোকাবিলা করে অভ্যস্ত। হেফাজত মোকাবিলা করেছি। জামাত-বিএনপি মোকাবিলা করেছি। এবারও করব।