কোনো কিছুই আন্দোলনকে আটকে রাখতে পারবে না: বিএনপি মহাসচিব

কোনো কিছুই আন্দোলনকে আটকে রাখতে পারবে না: বিএনপি মহাসচিব

এবারের আন্দোলন অবধারিত লক্ষ্যের দিকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ভয়ভীতি, গ্রেপ্তার, মামলা, রাতের বেলায় মামলা পরিচালনা—কোনো কিছুই আর আটকে রাখতে পারবে না।

মঙ্গলবার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন।

সাংবাদিকের প্রশ্ন ছিল, ২৮ অক্টোবর বিএনপির মহাসমাবেশের পাল্টা সমাবেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ, এতে ‘এক দফার’ আন্দোলন ঝুঁকিতে পড়ছে কি না। জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ যদি সরকারে থাকে, প্রতিটি পদক্ষেপই ঝুঁকিপূর্ণ। এই ঝুঁকি নিয়ে চিন্তা করে লাভ নেই। মানুষ এখন জেগে উঠছে। তারা তাদের দাবি আদায়ে বদ্ধপরিকর। একটার পর একটা আন্দোলন করে মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। তখন আওয়ামী লীগের কর্মসূচি হলো শান্তির নামে অশান্তি সৃষ্টি করা। এ কাজটা তারা খুব সুচারুভাবে করে যাচ্ছে।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘একটা কথা আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, এই কথাটা আপনারা লিখবেন। কোনো কিছুই আটকে রাখতে পারবে না। আওয়ামী লীগের কোনো ভয়ভীতি, সভা–সমিতি, যত কিছুই করুক— আমাদের, বাংলাদেশের মানুষকে তাদের দাবি আদায়ের ক্ষেত্রে আটকে রাখতে পারবে না।’

মির্জা ফখরুল আরও বলেন, ‘আপনি গ্রেপ্তার বলেন, মামলা বলেন, রাত্রিবেলা মামলা পরিচালনা বলেন— কোনোটাই আর আটকে রাখতে পারবে না। সুতরাং আপনারা নিশ্চিত থাকতে পারেন, এবারকার আন্দোলন একটা অবধারিত লক্ষ্যের দিকে যাচ্ছে এবং সেটা জনগণের বিজয় আনার জন্য।’

বিএনপি নয়াপল্টনে মহাসমাবেশের জন্য পুলিশকে চিঠি দিয়েছে। তবে পুলিশ বলেছে, তারা রাস্তায় সমাবেশ করতে দেবে না। এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা এ রকম কোনো উত্তর পাইনি। আমরা জানিয়েছি তাদের (পুলিশ কর্তৃপক্ষ)। এখানে অনুমতি চাওয়ার কিছু নেই।

এখানে পুলিশকে অবগত করতে হয়, সে অবগত আমরা করেছি। এখন তাদের দায়িত্ব, এখানে কীভাবে কী করবে না করবে, সেটা তারা সিদ্ধান্ত নেবে।’

আওয়ামী লীগ সমাবেশ ডেকেছে। এখন জামায়াতে ইসলামীও ২৮ অক্টোবর শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আমাদের এক দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়েছি। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে অন্যান্য দলেরও অধিকার আছে, আওয়ামী লীগেরও অধিকার আছে কর্মসূচি করার। জামায়াতে ইসলামী মহাসমাবেশ ডেকেছে, তাদের সে অধিকার আছে। গণতন্ত্র মঞ্চ যুগপৎ আন্দোলনে আছে, তারাও সমাবেশ ডেকেছে, প্রায় ৪০টি দল ডেকেছে।’

একে গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই আন্দোলন একটা দলের বিষয় নয়। এটা শুধু এখন বিএনপির বিষয় নয়, সারা দেশের জনগণের বিষয়। সে কারণেই আমরা বলি, এটা (আন্দোলন) আরেকটা স্বাধীনতার যুদ্ধ, একটা মুক্তির যুদ্ধ। এবারকার সংগ্রাম হচ্ছে আমাদের মুক্তির সংগ্রাম।’

কুমিল্লায় ১৩ অক্টোবর বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের মিছিলে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে, সে বিষয়ে বিএনপি দলীয়ভাবে তদন্ত করেছে। তদন্ত প্রতিবেদন আজ সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা হয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরেন।

মির্জা ফখরুল ইসলাম ওই হামলার জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, ‘এটা প্রমাণিত, কুমিল্লায় যে আক্রমণটা হয়েছে, সেটা সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহারের নির্দেশে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা চালিয়েছে। এ কথাটা আমরা বারবার বলে আসছি, যেকোনো সন্ত্রাসের মূলত নেতৃত্ব দেয় আওয়ামী লীগ। কারণ, আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী দল।’

‘প্রথম থেকে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাস করে এসেছে’—এ মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সন্ত্রাস করেই তারা টিকে থাকতে চায় এবং টিকে আছে। সন্ত্রাস করে ক্ষমতায় আসা এবং ক্ষমতায় টিকে থাকা—এটা তাদের মজ্জাগত। এখনো একই কাজ করছে তারা। সারা দেশে একটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। এর উদ্দেশ্য যাতে নির্বাচনের আর পরিবেশ না থাকে। শুধু বিরোধী দল নয়, ভোটাররাও যাতে না যায়, তার ব্যবস্থা তারা করে ফেলেছে। ভোট বাক্স কীভাবে ভরে ফেলবে, সে ব্যবস্থাও তারা করে ফেলেছে। নির্বাচন সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আবারও তারা কীভাবে ক্ষমতায় আসবে, সেই পরিকল্পনা তারা করেছে। সেভাবেই তারা এগোচ্ছে।’

এখন সরকারি দলের নেতারা যে ‘অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে’ বলে আশ্বস্ত করছেন, এগুলো জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।

আনসার বাহিনীকে অপরাধী আটক, তল্লাশি ও মালামাল জব্দ করার ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করে গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে একটি বিল আনা হয়েছে।

বিষয়টির উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘গতকাল সংসদে একটা বিল এসেছে, এটা শুধু দুশ্চিন্তার নয়, আতঙ্কের বিষয়। গোটা রাষ্ট্রব্যবস্থাকে এরা কীভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে, ইনস্টিটিউশনগুলোকে (প্রতিষ্ঠান) কীভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে! এখন সারা পৃথিবীতে পুলিশ একমাত্র প্রতিষ্ঠান, যাদের গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়া হয়। এখানে আনসারকে গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা দেওয়া হচ্ছে। যাদের বেসিক ট্রেনিং পর্যন্ত নেই।’

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘পুলিশের কিছু বিষয় আছে, এটা কিন্তু আলাদা জিনিস। এটা কোড অব কনডাক্ট (আচরণবিধি), আলাদা আইন—সবকিছু দ্বারা পরিচালিত হয়। আনসারের কাজটা আলাদা। তারা ভিন্ন প্রতিষ্ঠান, তাদের সেভাবে তৈরি করেছে। এই প্রতিষ্ঠানের যে আধুনিকীকরণ, এটা জিয়াউর রহমানই করেছেন। এখন এটাকে রাজনীতিকীকরণ করার নতুন ব্যবস্থা তারা নিতে যাচ্ছে আইন করে। আমরা এর নিন্দা জানাই। কোনোমতেই যাতে আইনটা না করা হয়, সে দাবি জানাচ্ছি।’

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতা প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ। এটা আমরা বলছি, আপনারাও শোনেন, চিকিৎসকেরাও বলেছেন। গত রাতে আবার ওনাকে সিসিইউতে নিতে হয়েছে। অবশ্য সকালে তাকে কেবিনে আনা হয়েছে। বেশ উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে আছেন।’