এই নির্বাচন আওয়ামী লীগকে নির্বাসনে পাঠাবে: মান্না

এই নির্বাচন আওয়ামী লীগকে নির্বাসনে পাঠাবে: মান্না

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার এই নির্বাচন প্রহসনের বাইরে আর কিছু করতে পারবে না। আমরা বলছি, জনগণ প্রত্যাখান করেছে এই নির্বাচন, বিশ্ববাসী প্রত্যাখান করেছে এই নির্বাচন। আর এই নির্বাচন সরকারের জন্য, আওয়ামী লীগের জন্য কোনো নির্বাচন নয়। এটা ওদের নির্বাসনে পাঠাবে অপেক্ষা করেন।

রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি। এরআগে বেলা ১২টার দিকে গণতন্ত্র মঞ্চের নেতারা বিজয়নগর ও তোপখানা রোডে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল প্রেসক্লাবের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, তাদের (সরকার) উদ্দেশ্য কি? তারা বলে কোন রকমে ৭ জানুয়ারি আসলে তো হয় বিভিন্ন জায়গায় একটা বাক্স বসিয়ে বেড়া-টেরা দিয়ে একটা ঘর দেখাব এবং তারপরে সন্ধ্যার পরে রায় ঘোষণা দেবো। ওটা নির্বাচনই না, ঠেকাব কি? ওই বেড়ার ঘরে আগুন লাগাবার কাজ আমরা করছি না। যেভাবেই চেষ্টা করুক, তারা এ নির্বাচন প্রহসনের বাইরে আর কিছু করতে পারবে না।
সরকার পতন আন্দোলনে থাকার একটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, একজন বিরাট মোচওয়ালা জেনারেল এখন এলাকায় যেতে পারেন কি না সন্দেহ। দেখেন, আসিতেছে শুভ দিন, দিনে দিনে বুহ বাড়িয়াছে দেনা, সুধিতে হইবে ঋণ। যারা যাই করে পার পাবেন না।

সরকার না বলুক, টিভিতে বলছে, অবরোধ চলছে, দূরপাল্লার কোনো বাস চলছে না। দূরপাল্লার বাসগুলো কাউন্টারে দাঁড়িয়ে আছে যাত্রী পাচ্ছে না। এক মাস ধরে মানুষ বিরোধী দলের এই কর্মসূচির সাথে একাত্মতা আছে, আরও থাকবে। আমরা বলি, ওই ফোরটোয়েন্টির নির্বাচন যাই দেখাক ওরা, লড়াই বন্ধ হবে না, লড়াই চলবে।

মান্না বলেন, চেষ্টা করেছিলো না বিভিন্ন দল ভাঙতে, নতুন নতুন দল করতে। খেয়াল করে দেখেন পাকিস্তান আমলেও কিন্তু রাজাকার পাওয়া গেছে এবার তো রাজকারও পাওয়া যাচ্ছে না। আওয়ামী লীগ এবারে রাজাকার-আলবদরও পায় না। নতুন নতুন কেন্টিডেট দেবে তাও পায় না। এই যে দেখেন জোনায়েদ সাকি (গণসংহতি আন্দোলন) সব মিছিলে আপনারা দেখেন না। উনার দল রেজিস্ট্রেশনের জন্য কাগজপত্র জমা দিয়েছিলো নির্বাচন কমিশন দেয়নি। উনি আদালতে গেছেন। আদালত বলেছে দিয়ে দাও, আদালতের নির্দেশ নির্বাচন কমিশন তাদেরকে দেয়নি। কিন্তু বিএনএম-টিএনএম-এএনএম কত নামের রেজিস্ট্রেশন পেয়েছে না। ওরা বলছে, আমরা তিনশ আসনে প্রার্থী দেবো প্রেসিডেন্টে-সেক্রেটারি বাইরে তিন নম্বর লোক নাই। ৩-ই যদি না হয় ৩০০ কোত্থেকে হবে।

তিনি আরও বলেন, এখন খালি আওয়ামী লীগ আছে আর কেউ নাই। এখন কি বলছেন, না আমরা এবার জোট করব না, এবার আওয়ামী লীগ একলা টিকেট দেবো, আওয়ামী লীগ ইলেকশন করবে। নাম বললাম না অনেক বড় নেতা ছিলেন, অনেক সম্মান করতাম, বাম আন্দোলন করতেন এখন দালালি করছেন। উনারা আগেই ঘোষণা করেছিলো আমরা নৌকা টিকেট নিয়ে ইলেকশন করব। বলতে পারেন তারা কারা কারা। এখন তারা কি করবে? এখন তো নৌকা টিকেট দেবে না। এখন দলের মার্কা নিয়ে ইলেকশন করতে পারবেন? চামচাদের এই পরিণতি হয়, দালালদের এই অবস্থা হয়।

ভারতের উদ্দেশে বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, এখানে কোনো নির্বাচন হচ্ছে না, একতরফা নির্বাচন। এখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভারতের যে জনগণ আমি মনে করি ’১৪, ’১৮ সালের মতো মেহেরবানী করে এক ঝুড়িতে সমস্ত ডিম রাখবেন না। ভারতের গণতান্ত্রিক মানুষ, ভারতের কোটি কোটি মানুষ তারা দেখতে চাইবে বাংলাদেশে একটা গণতান্ত্রিক সরকার, তারা দেখতে চাইবে এখানে অবাধ, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন হচ্ছে। আরেকবার যদি আপনারা চোরের সাক্ষীর মতন এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে মদদ যোগানোর চেষ্টা করেন বাংলাদেশের মানুষ যেমন আপনাদেরকে ক্ষমা করবে না, বাংলাদেশের মানুষ কোনো কর্তৃত্ববাদী পরাশক্তি যারা আমাদের এই দুর্ভোগের সুযোগ নিয়ে চেষ্টা করছে কাউকে ক্ষমা করবে না।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, আমাদের আন্দোলন চলবে, আমাদের আন্দোলনকে বিজয় পর্যন্ত নিতে হবে। এখানে কোনো পরাজয়ের সুযোগ নেই। পরাজয় মানে মৃত্যু, পরাজয় মানে এদেশের নাগরিকদের মর্যাদা ভুলণ্ঠিত হওয়া, পরাজয় মানে এদেশের অস্তিত্ব বিলিন হওয়া। কাজেই দেশের মানুষ এবার দেশের মর্যাদার জন্য, নাগরিকদের অস্তিত্বের জন্য লড়াই করছে, সেই লড়াই হচ্ছে মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা করে একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা। এই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার এই লড়াইয়ে আমরা বিজয় না হওয়া পর্যন্ত চালিয়ে যাবো, কোনো রকম শর্তে এই আন্দোলনকে দমাতে পারবে না।

মান্নার সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল্লাহ কায়সারের সঞ্চালনায় সংক্ষিপ্ত সমাবেশে ভাসানী অনুসারী পরিষদের শেখ রফিকুল ইসলাম বাবুল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের হাসনাত কাইয়ুম, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন প্রমু বক্তব্য রাখেন।