সরকার সংঘাতের পথ পরিহার না করলে পরিণতি ভয়াবহ হবে: ড. মঈন খান

সরকার সংঘাতের পথ পরিহার না করলে পরিণতি ভয়াবহ হবে: ড. মঈন খান

সরকার সংঘাতের পথ পরিহার না করলে পরিণতি ভয়াবহ হবে বলে ক্ষমতাসীনদের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের (বিএসপিপি) উদ্যোগে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের অবদান ও গণতন্ত্র‘ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তিনি।

মঈন খান বলেন, সরকার হয়তো পুলিশ দিয়ে, বোমা দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে ক্ষমতায় থাকবেন (সব সরকারের উদ্দেশে)। কিন্তু আমার প্রশ্ন আগামী প্রজন্মের কাছে আপানার কোন বাংলাদেশ রেখে যাচ্ছেন? আসুন সংঘাতের রাজনীতি পরিহার করে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নীতি ব্যাবহার নিশ্চিত করি। তা না হলে বাংলাদেশের জন্য ভয়াবহ খারাপ পরিণতি অপেক্ষা করছে।

তিনি বলেন, এই সরকার মনে করছে তারা উন্নয়নের গল্প শুনিয়ে টিকে থাকবে। কিন্তু সেটি হবে না। স্বাধীনতার বিজয়ের প্রাক্কালে দেশের মানুষ ভেবেছিল বাংলাদেশ হবে একটি স্বাধীন দেশ। কিন্তু তার ঠিক আগ মুহূর্তে রাজাকার আলবদররা এক হয়ে দেশের মেধাস্বত্তকে হত্যা করেছে। জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মেধাবী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করে ফেলা। সেজন্যই মেধাবী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছে, যা বিশ্বে বিরল ঘটনা। আমরা তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশে বাস করছি।

মঈন খান আরও বলেন, আজকে আমরা কোন বাংলাদেশে আছি এখানে ভিন্নমতের কথা বলার সুযোগ নেই।

আজকে বর্তমান সরকার দেশে বাকশাল কায়েম করতে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিচ্ছে। গুম ও খুন করছে। তবে বাংলাদেশের মানুষ অতীতে বাকশাল শাসন মানেনি। কখনো মানবে না। দেশের মানুষ চায় তারা ৫ বছরে একবার ভোট দিতে। তারা নিজেরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চায়। কিন্তু সেই ভোটাধিকার গেলো কোথায়? তারাই তো বলেছিল আমার ভোট আমি দেবো যাকে খুশি তাকে দিবো! আজকে তারাই কেনো বলে আমার ভোট আমি দেবো দিনের ভোট রাতে দিবো!

তিনি আরও বলেন, আজকে আওয়ামী লীগ নিজেদের মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি হিসেবে পরিচয় দেন। তাহলে একদলীয় বাকশাল শাসন কেনো? অনেকেই বলেন, নতুনভাবে বাংলাদেশে কেনো স্যাংশন আসেনি। এজন্য বিএনপি নাকি হতাশ? তাহলে কি আরও স্যাংশন এলে আওয়ামী লীগ দেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতো? কেন স্যাংশন দিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে?

বিএনপির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ নাকি জনগণের দল! তাহলে তারা আওয়ামী লীগ কেন? নাকি উর্দু প্রেম ভুলতে পারেনি? এই প্রশ্ন তো আমি করতেই পারি! আমরা দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে আসছি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের জনগণ এই সরকারকে প্রত্যাখান করেছে। ৭ই জানুয়ারি নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগ নির্বাচন করে ফেলেছে। ৭ই জানুয়ারি শুধু ফলাফল ঘোষণা করবে। তফসিল নিয়ে চিন্তার কিছু নেই। আমরা সত্যের পথে আছি। জনগণের সঙ্গে আছি। আমাদের বিজয় হবেই ইনশাআল্লাহ।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, আসুন আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে সম্পৃক্ত হই। এবার ফ্যাসিবাদ পরাজিত হবে দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ বিজয়ী হবে ইনশাআল্লাহ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী বলেন, একাত্তর সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রামে বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সেসময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ বুদ্ধিজীবীরা নেপথ্যে কাজ করেছেন। কিন্তু পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক এলাকায় বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষকদের বেছে বেছে নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। শহীদ গিয়াস উদ্দিন, আনোয়ার পাশা তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

তিনি বলেন, আজকেও বাংলাদেশের যে পরিস্থিতি তা আমাদেরকে ৭১ সালের জুন মাসের মতো। আমাদেরকে কথা বলতে দেয় না। এখন এক ব্যক্তির কথা ছাড়া কিছুই হচ্ছে না দেশে। যিনি দেশের গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে। এটাকে বলা হয় ফ্যাসিবাদী। আজকে বিরোধী দলের অসংখ্য নেতাকর্মী আজকে নির্যাতন নিপীড়ন উপেক্ষা করে রাজপথে আন্দোলন করছে। এটাকে বিজয় পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে। যেমনটা আমরা করেছিলাম ১৯৭১ সালে। বাংলাদেশকে আবার স্বাধীন করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে রুহুল আমিন গাজী বলেন, দেশে গণতন্ত্র ও কথা বলার স্বাধীনতা নেই। আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশে ৩৯ জন সাংবাদিককে হত্যা করেছে এটা কি বুদ্ধিজীবী হত্যা করেছেন। এটা কি বুদ্ধিজীবী হত্যা নয়? আসুন মানুষের মৌলিক অধিকার ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ি। এটার কোনো বিকল্প নেই।

বিএসপিপির সাবেক আহ্বায়ক রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব কাদের গণি চৌধুরীর সঞ্চালনায় সভায় আরও বক্তব্য দেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মাহবুব উল্লাহ, বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল হাই শিকদার, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, ইউট্যাবের প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের অধ্যাপক লুৎফর রহমান, ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ-এ্যাব‘র প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজু, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন-ডিএইউজে‘র সভাপতি মো. শহীদুল ইসলাম, কৃষিবিদ রাশিদুল হাসান হারুন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল আলম, অধ্যাপক কামরুল আহসান, জিয়াউর রহমান ফাউন্ডেশনের প্রকৌশলী মাহবুব আলম, নার্সেস এসোসিয়েশনের জাহানারা সিদ্দিকী, এ্যামট্যাবের বিপ্লবুজ্জামান বিপ্লব, সাংবাদিক রাশেদুল হক, আমিরুল ইসলাম কাগজী প্রমুখ।