দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা বিএনপির

দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার ঘোষণা বিএনপির

টানা ৪৯ দিন পর রাজধানীতে বড় শোডাউন করেছে বিএনপি। শনিবার ব্যাপক জনসমাগম ঘটিয়ে ‘বিজয় র‌্যালি’ করে দলটি। এদিন নয়াপল্টন এলাকায় নেতাকর্মীদের ঢল নামে। মামলা, হামলা ও গ্রেফতার আতঙ্ক কাটিয়ে বর্ণাঢ্য র‌্যালিতে অংশ নেয় ঢাকা মহানগরসহ আশপাশের জেলার বিএনপি নেতাকর্মীরা।

এ সময় সরকার পতনের একদফা দাবিতে সোচ্চার ছিলেন তারা। উপস্থিত জনতা সরকারের পদত্যাগসহ নির্বাচন বাতিলের দাবি জানান। ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ পণ্ডের পর এটিই দলটির বড় কর্মসূচি। এদিন নয়াপল্টনে কর্মসূচি পালন করলেও খোলেনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়।

বিজয় র‌্যালির আগে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, বর্তমান সরকার মহান বিজয় দিবসকে পালটে দিয়েছে। দেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করে, মানুষের মৌলিক অধিকার ধ্বংস করে তারা (আওয়ামী লীগ) এখন দিবসটিকে পরাজয় দিবসে পরিণত করেছে। গণতন্ত্র আর ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনতে বিএনপি আন্দোলন করছে। যতদিন পর্যন্ত দাবি আদায় না হবে, ততদিন নেতাকর্মীরা রাজপথে আছেন এবং থাকবেন।

তিনি বলেন, যারা বাংলাদেশকে লুটপাট, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস, ভোটের অধিকার হরণ করেছে, মামলা-হামলা দিয়ে গণতন্ত্রকামী মানুষকে জেলে আটক করে রেখেছে, সেই সরকারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াইয়ে নামতে হবে। এই লড়াইয়ের বিকল্প নেই।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করেছে সরকার। এখনো গ্রেফতার চলছে, দণ্ডিত করা হচ্ছে। নির্বাচন নামে খেলা করার জন্য এসব করা হচ্ছে। কোন দল কয়টা আসন পাবে, কারা কোন এলাকা থেকে নির্বাচন করবে তা আগেই নির্ধারণ করা হয়েছে। এটা কেমন নির্বাচন? কোন ভোট?

তিনি বলেন, ডামি নির্বাচনের জন্য সাড়ে ৭ লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অথচ, যেভাবে নির্বাচন সাজানো হচ্ছে, তাতে তো সবাই জেনেই যাচ্ছে যে কোন আসনে কে নির্বাচিত হবেন। এটা ঘোষণা করে দিলেই হয়। এজন্য নির্বাচনি খেলার কী দরকার? প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা খরচ করে এই নির্বাচন করার কোনো অর্থ নেই। এই অপব্যয়ের কোনো প্রয়োজন নেই।

গত ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর গ্রেফতার হন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের শীর্ষ নেতারা। এরপর ধারাবাহিকভাবে হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। এরই মধ্যে প্রায় ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতারের কথা জানিয়েছে দলটি।

শনিবার বিজয় র‌্যালির মধ্যদিয়ে আবারো সাংগঠনিক শক্তির জানান দিল বিএনপি। এদিন সকাল থেকে নয়াপল্টন এলাকায় জড়ো হন দলীয় নেতাকর্মীরা। বেলা ১১টার দিকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে পিকআপের ওপর তৈরি করা হয় অস্থায়ী মঞ্চ। টানানো হয় ২০টি মাইক। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সেখানে ভিড় করেন। দুপুর ১টার দিকে কানায় কানায় পরিপূর্ণ নয়াপল্টন এলাকা। স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে বিএনপির দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক। নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে নাইটিংঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল পর্যন্ত অবস্থান করেন তারা। এতে বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন চলাচল।

বিজয় দিবসের ও দলীয় নেতাকর্মীদের মুক্তি দাবিতে পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানারে ছেয়ে যায় পুরো এলাকা। রঙ-বেরঙের ব্যানার-ফেস্টুনের পাশাপাশি নেতাকর্মীদের হাতে হাতে ছিল লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা।

এদিকে বেলা সোয়া ২টার দিকে শুরু হয় র‌্যালি। শান্তিনগর ঘুরে বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে এটি শেষ হয়। বিজয় দিবসে অন্যান্য বছরের মতো ঢাক-ঢোল, ঘোড়ার গাড়ি, সাউন্ড আর বাঁশির ভেপু নিয়ে আনন্দের পরিবর্তে এবার নেতাকর্মীদের চোখেমুখে ছিল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর ক্ষোভ। এদিন তারা দেশের গণতন্ত্র আর ভোটাধিকার ফিরিয়ে আনার যেমন স্লোগান দিয়েছেন, তেমনি ‘একতরফা’ নির্বাচন আয়োজন বাতিলেরও দাবি জানিয়েছেন।

তালাবদ্ধ দলের প্রধান কার্যালয়ের সামনের অস্থায়ী মঞ্চে বিএনপি নেতারা জানান, ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ পণ্ড করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তালা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কার্যালয়ে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনার সব নেতাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। যেখানে বসে নেতাকর্মীরা রাজনীতি করতে পারবে না, সেটা জোর করে খুলেও কোনো লাভ নেই।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সহ-দপ্তর তাইফুল ইসলাম টিপুর সঞ্চালনায় র‌্যালিতে আরও ছিলেনÑদলের ভাইস চেয়ারম্যান এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস, আফরোজা খানম রীতা, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা শিরিন সুলতানা, কায়সার কামাল, আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিকী, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নাজিম উদ্দিন আলম, সেলিম রেজা হাবিব, রেহানা আক্তার রানু, সৈয়দা আসিফা আশরাফী, নেওয়াজ হালিমা আরলি, রাশেদা বেগম হীরা, সেলিমুজ্জামান সেলিম, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, হায়দার আলী লেলিন, রফিক শিকদার, নিপুণ রায় চৌধুরী, আমিরুজ্জামান শিমুল, মোরতাজুল করীম, বজলুল করীম চৌধুরী আবেদ, তারিকুল আলম তেনজিং, খোন্দকার আকবর হোসেন প্রমুখ। সাজাপ্রাপ্ত বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকেও র‌্যালিতে দেখা গেছে।

র‌্যালিতে মুক্তিযোদ্ধা দল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মহিলা দল, ছাত্রদল, জাসাস, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল, শ্রমিক দল, উলামা দল, ঢাকা মহানগর বিএনপি উত্তর ও দক্ষিণ প্রভৃতি সংগঠন ছাড়াও সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, ড্যাব, এ্যাব, শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটসহ ঢাকা জেলা, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সংগঠনগুলো অংশ নেয়।

এর আগে সকালে রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে দলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিএনপি। এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমানসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।