লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা গণতন্ত্র মঞ্চের

লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা গণতন্ত্র মঞ্চের

সরকার পতনের একদফা দাবিতে যুগপৎভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। নেতারা বলছেন, এই আন্দোলনকে আরও সম্প্রসারিত করা হবে এবং সবার সঙ্গে কথাবার্তা বলে পরবর্তী আন্দোলনের ধরন ঠিক করা হবে।

মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। 'সরকার ও শাসনব্যবস্থা বদলে ঐক্যবদ্ধ হোন, তামাশার নির্বাচন, জনগণের প্রত্যাখান এবং চলমান আন্দোলন বিষয়ে' এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ। মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এটা এমন নয় যে একদিনেই এর জবাব আমরা দিয়ে দিতে পারবো। আর আমরাতো আন্দোলনে আছি। সংবাদ সম্মেলন করছি, এটাও একটা আন্দোলনের অংশ। আর ধারাবাহিকভাবে আমরা গত ২৮শে অক্টোবর থেকে প্রতিটি কর্মসূচি পালন করছি। আর আমরা ঘোষণা করছি, লাগাতারভাবে এই আন্দোলন চালিয়ে যাবো।

তিনি বলেন, আমাদের এখানকার বৈচিত্র্য রাজনৈতিক কারণে একটা পয়েন্টে কথা বলছি, কিন্তু একই মঞ্চে আসতে পারছি না। এটা নিয়ে মাঝে মাঝে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হয়। এজন্য আমরা যুগপৎ আন্দোলনের কথা বলছি।

এখন পর্যন্ত এই আন্দোলন যুগপৎ ধারায় আছে। আমরা মনে করি, যুগপৎ যদি কার্যকরভাবে পথে নামে তাহলে যেভাবে আপনারা চাচ্ছেন, সেভাবে সবাইকে একসঙ্গে ডাকা যাবে। আর আমরা যুগপৎ আন্দোলন করছি, আছি এবং কন্টিনিউ করতে চাই। পারলে এটাকে আরো সম্প্রসারিত করবো। তবে তার ধরন কেমন হবে, সেটা সবার সঙ্গে কথাবার্তার মধ্যে দিয়ে আমরা ঠিক করবো।

আন্দোলন প্রসঙ্গে মান্না বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা যে ধারায় আন্দোলন করছি, তাতে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। তথাকথিত যে নির্বাচন হয়েছে সেটা সব জায়গাতেই ধিকৃত হয়েছে। বিভিন্ন দেশ প্রতিক্রিয়ার কথা বলছেন। আপনি হয়ত আমেরিকায় প্রতিক্রিয়াও দেখেছেন। আমেরিকাসহ বেশিরভাগই দেশ বলেছে, এই নির্বাচন কোনো নির্বাচন হয়নি। আমরা মনে করি, বিশ্বের গণতান্ত্রিক ও মৌলিক অধিকারের শক্তি আমাদের সঙ্গে আছে। আগামীদিনের বিজয় অর্জনে এটা আমাদের শক্তি যোগাবে।

বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, নির্বাচনের নামে যে তামাশা মঞ্চস্থ হয়েছে, জনগণের ভোটের অধিকার যেভাবে আরেকবার হরণ করা হয়েছে- এসমস্ত বিবেচনা করে ভারত সরকার তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি। বর্তমান সরকারকে কেন্দ্র করে এই অঞ্চলে তাদের যে রণনীতি ও রণকৌশলগত ভূ-রাজনৈতিক যে স্বার্থ, সেই বিবেচনায় ভারত তার প্রতিক্রিয়া দিয়েছে বলে আমাদের ধারণা। বাংলাদেশের জনগণের যে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা, সেই গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে ভারতের এই প্রতিক্রিয়া আমরা লক্ষ্য করেছি। এমনকি চীন ও রাশিয়া যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে, বাংলাদেশে তাদের যে জিও পলিটিক্যাল ইন্টারেস্ট- সেটা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের প্রতি তাদের সমর্থন লক্ষ্যে করেছি।

লিখিত বক্তব্যে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ৭ই জানুয়ারি নির্বাচনের মাধ্যমে যে প্রহসন অনুষ্ঠিত হয় তাতে ক্ষমতা বদলের কোন সুযোগ ছিল না। সরকারি দল তাদের নিজেদের মধ্যে থেকেই ডামি প্রার্থী দাঁড় করিয়ে একটা কৃত্রিম প্রতিদ্বন্দ্বিতা দেখানোর আয়োজন করেছে। এর বাইরে সরকারি দলের বর্তমান ও সাবেক জোটসঙ্গীদের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির মধ্যে দিয়ে তারা প্রতিযোগিতার ন্যূনতম জায়গাকেও বদ্ধ করেছে। সবচেয়ে বড় কথা দেশের বড় অংশের প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলো এই প্রহসনের নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করার ফলে এই নির্বাচন আগে থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন একতরফা হিসেবে জনগণের কাছে প্রতিভাত হয়েছে। কাজেই কোনোভাবেই এটা একটা নির্বাচনের মর্যাদা পেতে পারে না। আসলে এটা গণতন্ত্রের কফিনের শেষ পেরেক ঠোকার এক আয়োজন হিসেবেই ইতিহাসে চিহ্নিত হয়ে থাকবে।

তিনি বলেন, হুমকি-ধামকি, ভয় দেখানোর মাধ্যমে ভোট কেন্দ্রে জনগণকে আসতে বাধ্য করার চেষ্টা করেছে। ৭ই জানুয়ারি ভোটের নামে তামাশার দিন সকাল থেকেই ভোটকেন্দ্রেই ভোটারদের অনুপস্থিতি ছিল দৃশ্যমান বাস্তবতা। বেশিরভাগ কেন্দ্রেই দিনব্যাপী যে ভোট পড়েছে তা প্রায় কোথায়ওই ১০% অতিক্রম করেনি। পার্বত্য অঞ্চলে ১৯টি কেন্দ্রে কোনো ভোটই পড়েনি। জনগণের এই প্রত্যাখানকে চাপা দিতে তারা এমনকি নিজেদের নিজেদের মধ্যে ডামি ইলেকশনেও ভুয়া ভোট, আগে থেকে সিল মেরে রাখা ব্যালট পেপার বাক্সে ঢোকানো, অপ্রাপ্তবয়স্কদের দিয়ে ভোট দেওয়ানো, ভোট কেন্দ্রের সামনে ডামি ভোটার লাইন, ডামি এজেন্ট তৈরি করে কেন্দ্রে বসিয়ে রাখা, প্রকাশ্যে ভোটদান, গোপালগঞ্জ-৩ আসনে একাধিক কেন্দ্রে শতভাগ এবং একটি কেন্দ্রে শতভাগের চাইতে বেশি ভোট পড়েছে, এরকম নানা কাণ্ড করে এক অদ্ভুতুড়ে অবস্থার সৃষ্টি করেছে তারা। এসবের বিভিন্ন খবর, ছবি, ভিডিও সামাজিক মাধ্যম ও মূল ধারার গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

সাকি বলেন, সিল মেরেও ভোটের শতকরা হার তারা ২৮ এর বেশি নিয়ে যেতে পারেনি। নির্বাচন কমিশনের লাইভ ভোট মনিটার রাত ৯টা ৩০ পর্যন্ত ভোটের গড় হার দেখিয়েছে ২৮%। ব্রিফিংকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল ২৮ শতাংশ ভোট পড়ার কথা বললেও তাকে পাশ থেকে বলা হয় এটা ৪০% হবে। তারপর থেকে নির্বাচন কমিশন ৪০% ভোট পড়েছে বলে বয়ান দিয়ে যাচ্ছে। অথচ এর আগে বলা হয়েছিল বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৬-২৭ শতাংশ ভোট পড়েছে। সারাদিন ভোটের হার বিবেচনায় এক ঘণ্টায় ১৩-১৪% ভোট বেড়ে যাওয়া রীতিমতো ম্যাজিক।

সংবাদ সম্মেলনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন, নাগরিক ঐক্যের সাধারণ সম্পাদক শহীদুল্লাহ কায়সার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।