আমরা নিয়ন্ত্রিত হয়েছি, এটা আংশিক সত্য: জি এম কাদের

আমরা নিয়ন্ত্রিত হয়েছি, এটা আংশিক সত্য: জি এম কাদের

জাতীয় পার্টির (জাপা) মধ্যে ‘পরনির্ভরশীলতা’ রয়েছে বলে স্বীকার করেছেন দলটির চেয়ারম্যান ও সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা জি এম কাদের। তিনি বলেছেন, ‘আমরা নিয়ন্ত্রিত হয়েছি, এটা পারশিয়ালি কারেক্ট (আংশিক সত্য)। আমরা চেষ্টা করছি বেরিয়ে আসার জন্য।’ শনিবার দুপুরে রাজধানীর বনানীতে দলের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

গত ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জাপাকে ২৬টি আসন ছেড়ে দেয়। এর ১১টিতে জয়ী হয়ে দলটি এখন সংসদে প্রধান বিরোধী দলের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সমঝোতায় জাপার বিরোধী দল হওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্‌ফুজ আনাম এবং লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ সম্প্রতি লিখেছেন।

এর উল্লেখ করে জি এম কাদের বলেন, ‘জাতীয় পার্টি সম্পর্কে মানুষের উপলব্ধি খুব একটা ভালো নয়। এর দুটো উদাহরণ তুলে ধরব। যেটা একেবারে ফেলে দেওয়ার মতো নয়।’ তিনি বলেন, ‘মাহ্‌ফুজ আনাম সাহেব একটা আর্টিকেলে লিখেছেন, যেখানে তিনি আমাদের বিরোধী দল হিসেবে মানছেন না। যেহেতু আমরা সরকারের বদান্যতায়, সরকারের ওপর নির্ভর করে সংসদে গেছি। এটা আংশিক সত্য, সার্বিকভাবে এটা সত্য নয়। কারণ, আমরা নির্বাচনে ফাইট করে গেছি, ওনারা (আওয়ামী লীগ) শুধু নৌকাটা তুলে নিয়েছিলেন।’

সরকারি দলকে নৌকা প্রতীক কেন তুলে নিতে হলো, সে ব্যাখ্যা দিয়ে জি এম কাদের বলেন, ‘কেননা ওনারা বলেছিলেন, দলীয়করণের মাধ্যমে যে নির্বাচন কলুষিত হয় বা যে নিয়মকানুনগুলোকে ভঙ্গ করা হয়, সেটার জন্য ওনাদের প্রতীক বা প্রার্থী না থাকলে সহজ হবে। কিন্তু ওনারা প্রার্থী দিয়েছিলেন বেশির ভাগ জায়গায় আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হয়েছে সমানভাবে। যা–ই হোক, এটার মধ্যেও পরনির্ভরশীলতা রয়েছে বলে আমি মনে করি।’

জাপার চেয়ারম্যান বলেন, ‘গবেষক ও সাহিত্যিক মহিউদ্দিন আহমদ তার একটা সাক্ষাৎকারে আমাদের সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছেন যে আমরা পরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ফলে এ রকম দল থাকার কী দরকার! আরেক দল যদি তাকে নিয়ন্ত্রণই করে, তাহলে সে দলের অর্থ কী, এটা আংশিক সঠিক। আমরা নিয়ন্ত্রিত হয়েছি, এটা পারশিয়ালি কারেক্ট। আমরা চেষ্টা করছি বেরিয়ে আসার জন্য।’

জি এম কাদের বলেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৬টি আসন ছেড়ে দিয়েছে বলে বিবৃতি দিয়ে জাপার নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। কিন্তু তারা একটা আসনও ছাড়েনি। সব জায়গায় প্রার্থী দিয়ে রেখেছে, জাপার প্রার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেই আসতে হয়েছে। আওয়ামী লীগ ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করেছে অথবা ভুলক্রমে করেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

১১টি আসন নিয়ে দ্বাদশ সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা হওয়া জি এম কাদের বলেন, জনগণ সত্যিকার অর্থে বিকল্প খুঁজছে। আওয়ামী লীগ-বিএনপির বাইরে একটা শক্তিকে গ্রহণ করার জন্য জনগণ বসে আছে। জনগণ জানে, আওয়ামী লীগ চলে গেলে বিএনপি এলে শুধু চেহারার পরিবর্তন হবে। যে অনিয়ম, যে দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি-চাঁদাবাজি—সবকিছু একই প্রক্রিয়ায়, একইভাবে চলতে থাকবে।

জি এম কাদের বলেন, ‘তথাপি মানুষ পরিবর্তনের জন্য পরিবর্তন চাচ্ছে এই মুহূর্তে। সত্যিকারের যে পরিবর্তন, সেটার জন্য যে দল, সেটা জাতীয় পার্টি দিতে পারবে, যদি আমরা আপসকামিতা বাদ দিয়ে দিই। আমি বলছি না দল ভাঙবে, কিন্তু দলের মধ্যে সংশোধন হওয়া দরকার আছে।’

নির্বাচনের পর জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদসহ দলের কয়েকজন বহিষ্কৃত নেতা জাতীয় পার্টির নামে তৎপরতা শুরু করেছেন। চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হককে ‘অব্যাহতি’ দিয়ে রওশন এরশাদ নিজেই দলের হাল ধরার ঘোষণা দিয়েছেন। এর মধ্যে গত শুক্রবার বিজয়নগরে জাপার কেন্দ্রীয় কার্যালয় দখলে নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন রওশনের অনুসারীরা।

এসব ঘটনার ইঙ্গিত করে জি এম কাদের বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নাম দিয়ে এবং তার আদর্শ ধারণ করে আরও ১০টি দল কেউ করতে পারে। কিন্তু দল ভাগ হওয়ার সম্ভাবনা এই মুহূর্তে আমি দেখি না। নতুনভাবে দল গঠন করার প্রক্রিয়া আছে। এরপর সেই দলটি নিবন্ধন করার প্রক্রিয়া আছে। সেটা করে যেকোনো লোক করতে পারেন। আমরা যে কাঠামোতে এগিয়ে যাচ্ছি, সেখান থেকে ভেঙে নিয়ে নতুন করে দল গঠন করার এখনো সেই পরিবেশ-পরিস্থিতি বা সম্ভাবনা আমার চোখে পড়ছে না বা আমি দেখছি না।’

এ প্রসঙ্গে জি এম কাদের গত ২৫ জানুয়ারি জাপার ঢাকা মহানগর উত্তরের ৬৬৮ নেতা-কর্মীর পদত্যাগ এবং ১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় পার্টির কার্যালয় দখল-সংক্রান্ত খবর প্রকাশের জন্য গণমাধ্যমের সমালোচনা করেন। এই খবরগুলো প্রকাশের আগে গণমাধ্যমগুলো খতিয়ে দেখেনি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

জি এম কাদের সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা, কো–চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ উপনেতা এবং মহাসচিব মুজিবুল হক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ নির্বাচিত হওয়ায় ঢাকা মহানগর উত্তর জাপা এ সংবর্ধনার আয়োজন করে। ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক তৈয়বুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মহাসচিব মুজিবুল হক, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেরীফা কাদেরসহ নেতারা বক্তব্য দেন।