দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের চাবিটা মনে হয় পার্শ্ববর্তী দেশকে দিয়েছে সরকার: রিজভী

দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের চাবিটা মনে হয় পার্শ্ববর্তী দেশকে দিয়েছে সরকার: রিজভী

বাংলাদেশ—ভারত সীমান্তে বিএসএফ কতৃর্ক গতকাল নিহত হাসান মিয়াসহ প্রতিনিয়ত বাংলাদেশী মানুষদের নির্বিচারে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, দেশের স্বাধীনতা—সার্বভৌমত্বের চাবিটা মনে হয় পার্শ্ববর্তী দেশকে দিয়েছে সরকার।

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) দুপুরে নয়া পল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানান।

রিজভী বলেন, সরকার প্রধানের ইচ্ছায় এদেশে আইনের প্রয়োগ হয়। প্রচলিত ফৌজদারী, দেওয়ানীসহ সকল আইন শেখ হাসিনার সংস্করণ অনুযায়ী প্রয়োগ করতে হয়। ৭ জানুয়ারী ডামি নির্বাচনের পর বাংলাদেশের একচ্ছত্র অধিপতি হয়ে উঠেন শেখ হাসিনা। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমানসহ দেশের বিরোধী দলের প্রধান নেতারাসহ লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর ওপর নেমে আসা জেল—জুলুম, অত্যাচার আর অবিচারের প্রকটতা দেখে বিশ্ব সম্প্রদায় বিচলিত হলেও তাতে প্রধানমন্ত্রীর কোন যায় আসে না। তার সকল অপকর্মের দায় নিয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ।

দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে রাজনীতি থেকে দুরে রাখার জন্যই যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে বন্দী করা হয়েছে তা আজ দেশ—বিদেশে সর্বজনবিদিত জানিয়ে তিনি বলেন, গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার রিপোর্টেও সেটি উল্লেখ করা হয়েছে। রিপোর্টে বাংলাদেশের গুম, খুন, গুপ্তহত্যা, কারানির্যাতনসহ ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সেখানে আরও বলা হয়েছে—অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনে নাগরিকদের অধিকার হরণ করা হয়েছে। বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও শান্তিপূর্ণ সভা—সমাবেশে বাধা প্রদানসহ বিভিন্ন অবনতিশীল মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাজা নিয়ে দেশবাসী এতদিন যা মনে করেছে তা মার্কিন প্রতিবেদনেও সেটি উঠে এসেছে। ডামি প্রধানমন্ত্রীর দ্বারা আবারও প্রমাণিত হলো ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠা পেলে বিরোধী শক্তিসহ গণতন্ত্র স্বীকৃত নাগরিক স্বাধীনতাকে নিশ্চিহ্ন করা যায়। আর আইন—আদালত প্রবল প্রতাপশালী একনায়কের ‘নির্দেশপত্র’ মোতাবেক চলে, যেমনভাবে শেখ হাসিনা ক্ষমতাসীন হওয়ার পর নিজের মামলাগুলিকে নিরুদ্দেশ করেছেন। বিরোধী দলকে দমনের বিপুল প্রচেষ্টা সার্থক করতে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা ও ধারাবাহিক খুনের এক ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের বাতাবরণ তৈরী করা হয়। সুষ্ঠু ভোট, নির্বাচন, ভোটাধিকার কবরে শায়িত থাকে।

বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, বর্তমান ডামি সরকারের ‘অভিন্নহৃদয় বড় বন্ধু’ হচ্ছে পাশ^র্বর্তী দেশ ভারত। মনে হচ্ছে দেশের স্বাধীনতা—সার্বভৌমত্বের চাবিটা শেখ হাসিনা তাদের দিয়ে দিয়েছেন। তাই প্রায় প্রতিদিনই বাংলাদেশ—ভারত সীমান্ত বিএসএফ কতৃর্ক বধ্যভূমি বানানো হলেও আওয়ামী নিপীড়ক সরকারকে নিশ্চুপ থাকতে হয়। হিউম্যানস্প্রীট শুণ্য বিএসএফ এর রক্তপিপাসু ভূমিকায় সারাজাতি ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উৎকন্ঠিত। বিএসএফ এর নরহত্যার দায় দখলদার আওয়ামী সরকারের উপরেও বর্তায়। তাদের নতজানু নীতির কারণে বিএসএফ আশকারা পাচ্ছে। গতকালও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলাধীন কসবা উপজেলার পুটিয়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে হাসান মিয়া নামে এক বাংলাদেশী যুবক নিহত হয়েছে। সীমান্তে রক্তের দাগ যেন শুকাচ্ছেই না। বাংলাদেশী মানুষের রক্তে সীমান্ত সবসময়ই ভেজা থাকছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ যেন নির্যাতন আর মৃত্যুর নির্মম খড়গ। তাদের মনে নিত্য জেগে রয়েছে কেবল হত্যার উল্লাস।

তিনি বলেন, দখলদার আওয়ামী সরকার আইন শৃঙ্খলা বাহিনী ও যুবলীগ—ছাত্রলীগ ক্যাডারদের দিয়ে নিজস্ব সেনাদল গঠন করে নিজ দেশের জনগণের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত চালাচ্ছে সাঁড়াশী অভিযান। কিন্তু ক্ষমতার নেশায় আচ্ছন্ন দখলদার আওয়ামী সরকার বিএসএফ এর বর্গীর ভূমিকার বিরুদ্ধে টু শব্দ করতে পারেনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার পুটিয়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে নিহত হাসান মিয়া’র আত্মার শান্তি কামনা করে এবং তার পরিবারবর্গের প্রতি গভীর সহানুভুতি জানান রিজভী।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবেদীন ফারুক, আব্দুস সালাম, বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, সাংগাঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ, সহ অর্থ বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদুর রহমান সুমন, মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, যুবদলের সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক মেহবুব মাসুম শান্ত, ছাত্রদল নেতা ডাঃ তৌহিদুর রহমান আউয়াল প্রমুখ।