নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে বরখাস্ত করলেন ট্রাম্প

‘হোয়াইট হাউসে আপনার দরকার নেই’

‘হোয়াইট হাউসে আপনার দরকার নেই’

হোয়াইট হাউস থেকে মুশফিকুল ফজল আনসারী

নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের এর সঙ্গে আর বনিবনা হচ্ছিলোনা যুক্তরাষ্ট্র প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের। বিষয়টি বেশকিছুদিন যাবত ছাই চাপা আগুনের মতাে আড়াল থাকলেও প্রকাশ্য এসেছে মঙ্গলবার। নীতিনির্ধারণী বিভিন্ন বিষয়ে মত-পার্থক্য হবার কারণেই নিরাপত্তা উপদেষ্টার মত এমন গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ থেকে বোল্টনকে অপসারণ করা হয়েছে বলে এক টুইট বার্তায় নিশ্চিত করেছেন ট্রাম্প।

মূলত উত্তর কোরিয়া, আফগানিস্তান এবং ইরানের মতো স্পর্শকাতর ইস্যুগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিটা কেমন হবে তা নিয়ে প্রেসিডেন্টকে খুশি করতে পারেননি এই নিরাপত্তা উপদেষ্টা।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পও যে নাখােশ তার প্রমাণ এই টুইট বার্তা-"গতকাল (সোমবার) রাতেই আমি জন বোল্টনকে জানিয়ে দিয়েছি হোয়াইট হাউসে তার আর কোনো দরকার নেই। তার অনেক কথাতেই আমর প্রচন্ড দ্বিমত রয়েছে। যেমনটা প্রশাসনিক অন্যান্য বিষয়েও রয়েছে। এ কারণেই আমি তাকে বলেছি-পদত্যাগ করুন। আজ সকালে তিনি পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।"

চার্লী কোপারম্যান ভারপ্রাপ্ত নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র হোগ্যান গিডলি।

সাবেক কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক বোল্টন ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে উপদেষ্টার দায়িত্ব নেন। অবশ্য তার আগে ট্রাম্পের এই চলমান মেয়াদে একই পদে আরো দুইজন চেয়ার বদল করেছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন আগামী সপ্তাহে তিনি নতুন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার নাম ঘোষণা করবেন।

বরখাস্ত করা নিয়ে ট্রাম্পের কড়া ভাষার টুইটটি স্পষ্টতই জানান দিচ্ছে দুজনের মধ্য বোঝা-পড়াটা ভালো যাচ্ছিলোনা। তারি বিস্ফোরণ ঘটল আজকের এই ঘোষণার মাধ্যমে।

বরাখস্ত হবার বিষয়টা চাওর হবার পরপরই দ্রুততার সঙ্গে নিজের অবস্থানের একটা ব্যাখ্যা দিয়েছেন বোল্টন। ওয়াশিংটন পোস্টকে তিনি বলেন, "বিষয়টা স্পষ্ট করা দরকার। আমাকে গতকাল রাতে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছিলো, কথামতো তাই করেছি।"

বোল্টন বলেন, "যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তাই আমার কাছে বড় বিষয়।"

প্রেসিডেন্টের টুইট প্রসঙ্গে বোল্টন বলেন, "গতকাল রাতে আমাকে পদত্যাগ করতে হবে এমনটা জানানো হয়েছিলো। আর প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, "বিষয়টা নিয়ে আমরা আগামীকাল (মঙ্গলবার) কথা বলবো।"

কয়েক মাস ধরে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এর সঙ্গেও বিবাদে জড়িয়ে পড়েছেন বোল্টন। পম্পেও তার দায়িত্ব বাদ দিয়ে রাজনৈতিক অভিলাষ চরিতার্থ করছেন এমনটা অভিযোগ এই নিরাপত্তা উপদেষ্টার। আর অন্যদিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বোল্টনের অনমীনয়তা আর কঠোরতার কড়া সমালোচনা করেছেন।

বোল্টনকে দায়িত্ব থেকে অপসারণ করা হতে পারে এমন একটা গুজব চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিলো বেশ কয়েক মাস ধরেই। বছরের শুরুর দিকে হাসির ছলে ট্রাম্প বলেছিলেন, "বোল্টনের অনেক বিষয়ই আমার পছন্দ না। কিন্তু তার কথা শুনতে পছন্দ করি!"

আফগানিস্তানের তালেবানদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি চুক্তি নিয়ে বেশ অগ্রসর হয়েছিলেন পম্পেও। কিন্তু তাতে বাধ সাধেন নিরাপত্তা উপদেষ্টা। বোল্টনের অবস্থান হলো- মাসের পর মাস ধরে তালেবানদের সঙ্গে চুক্তির জন্য যে দফা-রফা চলছে তা নিয়ে তালেবানদের বিশ্বাস করাটা ঠিক হবেনা। কোনো চুক্তি ছাড়াই আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নিয়ে আসলেই দেশটিতে ট্রাম্পের লক্ষ্য অর্জিত হবে।

ট্রাম্প যখন তালেবানদের সঙ্গে আলোচনাকে "মৃত" ঘোষণা করলেন। বিষয়টা বোল্টনকে তাৎক্ষণিক খুশি করলেও তার অপসারণটা একরকমের চপেটাঘাতই বলা যায়।

জিএস/