বাংলাদেশের ভবিষ্যত গণতন্ত্রের উপর নির্ভরশীল: যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলাদেশের ভবিষ্যত গণতন্ত্রের উপর নির্ভরশীল: যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী

লন্ডন থেকে বিশেষ সংবাদদাতা

গণতন্ত্রের মধ্যেই বাংলাদেশের ভবিষ্যত উত্তরণ নির্ভর করছে বলে জানিয়েছেন সদ্য ঢাকা সফর করে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন ই বিগান। স্বাধীনতা পরবর্তী ৫০ বছরে নানান চড়াই-উতরাই পেরিয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের বিকাশ এখনো নাজুক পর্যায়ে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মঙ্গলবার সদ্য সমাপ্ত বাংলাদেশ এবং ভারত সফর নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক টেলিকনফারেন্সের আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট। বাংলাদেশের ভঙ্গুর গণতান্ত্রিক অবস্থা, মতপ্রকাশ-মানবাধিকার দলন এবং ভোটাধিকার হরণের অব্যাহত ক্রমধারা প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তোলে ধরে এমন অভিমত প্রকাশ করেন উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিগান।

সাংবাদিক মুশফিকুল ফজল আনসারী টেলিকনফারেন্সে যোগ দিয়ে জানতে চান "বাংলাদেশ সফরের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি মনে করি সফরকালে বাংলাদেশ পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের সুযোগ আপনার হয়েছে।গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার খুবি ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে আছে যেমনটা উঠে এসেছে স্টেট ডিপার্টমেন্টেরসর্বশেষ বার্ষিক রিপোর্টেও। এটা এখন বিশদভাবে প্রমাণিত যে সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনের ফলাফল কারচুপি করা হয়েছে। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকেও সেখানে যাবার সুযোগ দেয়া হয়নি। নির্বাচনের পরপরই যুক্তরাষ্ট্র তার হতাশা ব্যক্ত করেছে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের পরিস্থিতির উপর আপনার বর্তমান অবস্থান কি? ক্ষমতাসীন সরকার মুক্তমত প্রকাশের উপর জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করেছে। সরকারকে গণতন্ত্রে ফিরে যেতে এবং একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করতে আপনার আহবানট কি? কারণ আমরা জানি যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের উন্নয়নের বড় অংশীদার।"

জবাবে স্টিফেন ই বিগান বলেন, বাংলাদেশ চলমান পরিস্থিতি কেমন সেটা আঁচ করতে সরকার প্রতিনিধি, সুশীল সমাজ, এবং গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে বিশদ কথা-বার্তা বলেছি।

তিনি বলেন, "আমি সুনিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করি এবং এটা একিসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রেরও অভিমত যে- যে পথ বাংলাদেশের ভবিষ্যত উত্তরণ নির্ধারণ করে দিবে, সে পথ গণতন্ত্রের পথ।স্বাধীনতার পর ৫০ বছর পাড়ি দিয়েছে দেশটি। অভুত্থানসহ নানা প্রতিবন্ধতা মোকাবিলা করতে হয়েছে। কিন্তু একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দেখা পেতে গণতন্ত্রের পরিপূর্ণতার বিষয়টি এখনো নাজুক পর্যায়ে।"

বিগান জোর দিয়ে বলেন, গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রার জন্য সকল ধরনের সহযোগিতা এবং উৎসাহ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র পাশে এসে দাঁড়াতে চায়।

গণতন্ত্রের প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান সবসময় একিরকম এমনটা ইঙ্গিত করে উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিগান বলেন, " নিশ্চিত করে বলবো- এটা নিয়ে (গণতন্ত্র) আমাদের বার্তাটা এক। যা আমার বক্তব্যে পুনরাবৃত্তি করলাম। কিছু বৈঠকেও আমি এই প্রসঙ্গ নিয়ে কথা বলেছি।"

তিনি বলেন, "এ বিষয়টা আমরা সম্পূর্ণ অবগত যে, বাংলাদেশে অবস্থান এমন এক অঞ্চলে যেখানে গণতন্ত্রের যাত্রাটা সুগম নয়। সেখানে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি বিকাশ ঘটানো, আবার তার অবনমন ঘটছে চোখের সামনে তা দেখা এবং নির্বাচন থেকে নির্বাচনে তার প্রভাব স্থায়িত্ব লাভ করা- একটা জাতির জন্য চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। অনেক জাতিকেই এর সম্মুখীন হতে হয়।একিদশা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও ঘটেছে।"

বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চিন্তা বিস্তৃত পরিসরের এমন অভিমত প্রকাশ করে উপ-পররাষ্ট্র মন্ত্রী স্টিফেন বিগান জানান, "আমি যেটা বলবো- বর্তমান সময়টাতে বাংলাদেশ নিয়ে তড়িঘরি করে কোনো গড়পরতা মূল্যায়ন করতে চাইনা।তার চাইতে বিস্তৃত পরিসরে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ নিয়ে কি ভাবে এবং বাংলাদেশের জনগণ নিজ দেশে কি প্রত্যাশা করে সেটা নিয়ে কথা বলবো। এটা আমার বিশ্বাস যে, দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক গভীরতর করে, যুক্তরাষ্ট্রের মত এবং নীতির উদাহরণ তোলে ধরে, বাংলাদেশের সরকার এবং সুশীল সমাজের কাজের গভীর অবলোকন করে একটা ভালো ফলাফল আশা করতে পারি।"

রিগান বলেন, গণতন্ত্রের পথে সফল উত্তরণের জন্য বাংলাদেশের জনগণ এবং সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা এবং পথচলা অব্যাহত থাকবে।

রোহিঙ্গা সংকট সমাধান প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "পুঞ্জিভূত রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত ও স্থায়ী সমাধান জরুরি। আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার দিক বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র এর টেকসই সমাধান চায়।"

সংকট সমাধানে চীনের আরও ভাল ভূমিকা রাখার সুযোগ আছে বলেও মন্তব্য করেন বিগান।

তিনি বলেন, "রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত উদার এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গীর পরিচয় দিয়েছেন, যেটা বাংলাদেশের জনগণেরই মনোভাবের প্রতিফলন।"

এই সংকটের সূচনা থেকে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে আছে জানিয়ে বিগান বলেন, "সংকট প্রলম্বিত হলে তা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার হুমকি হতে পারে, আলামত সে দিকেই ইঙ্গিত করছে। সেই বিবেচনায় সংকটটির দ্রুত ও স্থায়ী সমাধানে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্ব দিচ্ছে। ওয়াশিংটন মনে করে সমাধানের জন্য মিয়ানমার সরকারকে এ বিষয়ে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে।"

বাকস্বাধীনতা এবং মানবাধিকার প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, "বিশ্বজুড়ে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, বাকস্বাধীনতা, মানবাধিকারেরর সুরক্ষা এবং সুশাসনকে উৎসাহিত করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে প্রত্যেক দেশের জনগণ তাদের শাসন ক্ষমতার পরিবর্তন এবং উন্নয়ন নির্ধারণের জন্য যথেষ্ট এবং এটাই হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র অভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী পোষণ করে।"

জিএস/