বিশেষ সংবাদদাতা
বাংলাদেশে চরম মানবাধিকার লংঘনের দায়ে পুলিশের বর্তমান আইজিপি এবং র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) সাবেক মহাপরিচালক বেনজির আহমদসহ ৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। শীর্ষ কর্মকর্তা ছাড়াও অব্যাহত মানবাধিকার লংঘনের দায়ে র্যাব বাহিনীর উপরও একি নিষেধাজ্ঞা নেমে এসেছে।
শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রেজারি এক বিবৃতিতে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি ঘোষণা করেছে।
বেনজীর আহমেদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তর। র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক হিসেবে নিষেধাজ্ঞার আওতায় এসেছেন তিনি। এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকাকালে দেশটিতে প্রবেশ করতে পারবেন না তিনি৷
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ছয় জন কর্মকর্তা হচ্ছেন: চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন (র্যাবের বর্তমান মহাপরিচালক), বেনজির আহমেদ (সাবেক র্যাব মহাপরিচালক, জানুয়ারি ২০১৫-এপ্রিল ২০২০), খান মোহাম্মদ আজাদ (বর্তমান অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স), তোফায়েল মুস্তাফা সরওয়ার (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, জুন ২০১৯-মার্চ ২০২১), মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, সেপ্টেম্বর ২০১৮-জুন২০১৯), এবং মোহাম্মদ আনোয়ার লতিফ খান (সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক-অপারেশন্স, এপ্রিল-২০১৬-সেপ্টেম্বর ২০১৮)।
বিবৃতিতে বলা হয়, "গুরুতর মানবাধিকার লংঘনে জড়িত থাকার জন্য আজ বেনজির আহমেদের ওপর ভিসা বিধিনিষেধ আরোপ করার কথা ঘোষণা করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর - যার ফলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য হবেন।"
বিবৃতিতে বলা হয়, "বাংলাদেশের বেসরকারি সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে যে র্যাব এবং অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ৬০০টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ৬০০-রও বেশি লোকের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, এবং নির্যাতনের জন্য দায়ী।"
এসব ঘটনায় বিরোধীদলীয় সদস্য,সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের টার্গেট করা হয়েছে - বলা হয় বিবৃতিতে।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র নির্বাহী আদেশ ১৩৮১৮ এর অধীনে বিদেশি সংস্থা হিসাবে ব়্যাবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব ট্রেজারি৷ এছাড়াও একই নির্বাহী আদেশের অধীনে নিষেধাজ্ঞায় বাহিনীটির সাবেক ও বর্তমান ছয় জন শীর্ষ কর্মকর্তার নামও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে৷
এতে বলা হয়, "বাংলাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানের সময় র্যাবের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের ব্যাপক অভিযোগ - আইনের শাসন, মানবাধিকার, মৌলিক স্বাধীনতা, ও বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে হেয় করার মাধ্যমে - যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলছে।"
যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে র্যাবের দিক থেকে এখনও কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায় নি।
এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, তারা এখনো বিবৃতিটি দেখেননি, এবং দেখার পর প্রতিক্রিয়া জানানো হবে।
২০১৭ সালে নির্বাহী আদেশ ১৩৮১৮ জারি করেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এই আদেশের অধীনে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং দুর্নীতির অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা, পররাষ্ট্রনীতি এবং অর্থনীতি হুমকিতে পড়লে বিদেশি সংস্থা বা ব্যক্তির সম্পদ, সম্পত্তি, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়৷
এই বিবৃতিতে মিয়ানমার, চীন এবং উত্তর কোরিয়ার বেশ কিছু সংস্থা এবং ব্যক্তির বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে৷
কেএম/