কংগ্রেসম্যানের তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানে বক্তব্য নিয়ে সরকারের বিভ্রান্তিকর প্রচারনা

বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে, নিষেধাজ্ঞার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্টের, নির্বাচন হতে হবে গ্রহণযোগ্য: গ্রেগরি মিকস

বাংলাদেশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে, নিষেধাজ্ঞার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রেসিডেন্টের, নির্বাচন হতে হবে গ্রহণযোগ্য: গ্রেগরি মিকস

বিশেষ সংবাদদাতা

বাংলাদেশে যা ঘটছে সে পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্র পর্যবেক্ষেণে রেখেছে উল্লেখ করে কংগ্রেস সদস্য এবং পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত কংগ্রেশনাল কমিটির চেয়ারম্যান গ্রেগোরি ডব্লিউ মিকস বলেছেন, বাংলাদেশে শীঘ্রই যুক্তরাষ্ট্রের নতুন রাষ্ট্রদূত দায়িত্ব নিবেন। তিনি সরেজমিন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন এবং মতামত জানাবেন। নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

সোমবার নিউইয়র্কের কুইন্স এলাকায় কংগ্রেসম্যান গ্রেগরি মিকসের জন্য একটি তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমর্থকরা। আর সেখানে বাংলাদেশের চলমান ইস্যুতে আয়োজকদের জবাবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির বর্তমান অবস্থান আর সাম্প্রতিক সময়ে আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা নিয়ে এভাবেই মন্তব্য করেন তিনি।

কংগ্রেসম্যান মিকসের ওই অনুষ্ঠানের বক্তব্য নিয়ে সরকারি মদদে বিভ্রান্তিকর সংবাদ পরিবেশন হয়েছে বাংলাদেশের বেশ কিছু মিডিয়ায়। সেখানে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কোনো নিষেধাজ্ঞা দিতে চায় না এবং কথিত "সুবিধাবাদী মহল" দেশের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেয়ার লবিং করছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের এই কংগ্রেসম্যানের বক্তব্য হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। মনগড়া বক্তব্য দিয়ে সাজানো একটি প্রেস রিলিজ গণমাধ্যমে সরবরাহ করেছে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস। যদিও কমিউনিটির ফান্ড রেইজিং বা তহবিল অনুষ্ঠানে দূতাবাসের কেনো প্রতিনিধিত্ব ছিলোনা এবং প্রতিনিধিত্ব যুক্তরাষ্ট্রের আইনে রীতিমতো বেআইনি।

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসম্যানের ঐ অনুষ্ঠানের ভিডিও রেকর্ডিং রয়েছে জাস্ট নিউজের হাতে। সেখানে তিনি যা বলেছেন সেটাকে সঠিকভাবে অনেক গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ করতে দেখা যায়নি।

কংগ্রেসম্যান মিকস তার বক্তব্যে ২০১৮ সালের বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, “২০১৮ সালের নির্বাচন স্বচ্ছ হওয়া প্রয়োজন ছিলো, যা হয়নি।” আগামী ২০২৩ সালের নির্বাচনকে যুক্তরাষ্ট্রের ফোকাসে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন. “ আগামী নির্বাচন অবশ্যই অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হতে হবে। যাতে জনগণ তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে সক্ষম হয়।”

বাংলাদেশ কে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ বাংলাদেশের জনগণ কর্মউদ্যোমি এবং অভূতপূর্ব উন্নতি করতে পেরেছে।” এর পেছনে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত বাংলাদেশিদের অবদান রয়েছে বলে যোগ করেন মিকস।

তিনি বলেন, "আমরা একজন নতুন রাষ্ট্রদূত পেয়েছি যাকে বাংলাদেশে পাঠানো হবে। যখন তাকে বাংলাদেশে পাঠানো হবে, তখন যে সমস্যাটা এখন তৈরি হয়েছে সেটা নিয়ে কাজ করা যাবে। তিনি তখন আলোচনা বা সংলাপ করে বলতে পারবেন সেখানকার (বাংলাদেশের) পরিস্থিতি কী, কী দাঁড়াতে পারে। আর সে বিষয়ে তিনি প্রস্তাবনা উত্থাপন করার একটা সুযোগ পাবেন। কার্যত কী করবেন সেটা প্রেসিডেন্টের সিদ্ধান্ত। কী করতে হবে বা হবেনা সেটা উনি সিদ্ধান্ত নেবেন।"

"যে প্রতিশ্রুতিটা আমি দিতে পারি তা হল- যুক্তরাষ্ট্রের দূত সেখানে (বাংলাদেশে) দায়িত্বভার নেয়ার পরই আমি তার সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাবো"

তিনি আরও বলেন, "এ বছরের যেকোন সময় সফর করা যেতে পারে দেশটিতে। আমি সরকারে যারা আছে তাদের সাথে যেমন কথা বলতে চাই, আর যারা নেই তাদের সঙ্গেও কথা বলতে চাই। বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন বিভিন্ন মত আছে, সেটি কংগ্রেসকে জানানো যাবে। আপনারা যারা এখানে তাদের ভিন্ন মতও রয়েছে। বেশী মানুষের উপর নিষেধাজ্ঞা চাওয়া মাত্র দিয়ে দেয়া বিষয়টা এমন নয়। আমি উভয় পক্ষের কথা শুনতে চাচ্ছি। আমি নিয়োগ দেয়া রাষ্ট্রদূতের কথা শুনবো, স্টেট ডিপার্টমেন্টে যারা মাঠে থেকে সরাসরি পরিস্থিতি দেখেছেন সেসব দায়িত্বরতদের সঙ্গে যোগাযোগ করবো। আমরা তাদের মতামত শুনবো এবং মূল্যায়ন করবো।"

মিকস বলেন, "আমরা এশিয়া-প্যাসিফিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাবকমিটি চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলবো এবং এ বিষয়ে শুনানি করা যেতে পারে। সেখানে তথ্য-প্রমাণ জড়ো করা হবে। যারা সরাসরি পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছে তাদের কথা শুনবো। তারপর কংগ্রেসের সদস্য হিসেবে আমরা প্রেসিডেন্টকে পরামর্শ দিতে পারবো কোন পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন আর কোনটির প্রয়েজনীয়তা নেই।এটাই হচ্ছে কাজের সঠিক পন্থা।"

বাংলাদেশের কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা সে বিষয়ের রেশ টেনে তিনি বলেন, "যে নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে সেটা বাংলাদেশের জনগনের উপর নয়। বাংলাদেশ ও দেশটির জনগণ সাথে কাজ করে যাচ্ছি। দেশ হিসাবে বাংলাদেশের উপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নয়। এটা বলা ভুল। দেশটির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। আজকে এখানে আপনারা যেমন পক্ষে বলছেন আবার আমার আরও একটি সভা হয়েছে যেখানে আমি পুরোপুরি বিপরিত মুখি তথ্য পেয়েছি। আমাকে সকল মতামত শুনতে হয়”।

কংগ্রেসম্যান মিকস বলেন, "আমাকে সব বিষয় পর্যালোচনা করেই মূল্যায়ন করতে হবে।"

এনকে/