শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাইডেনকে ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠি

শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাইডেনকে ৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠি

ওয়াশিংটন থেকে মুশফিকুল ফজল আনসারী

সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত কংগ্রেসের ৬ কংগ্রেসম্যান। একইসঙ্গে বাংলাদেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী আইনশৃঙ্খলা ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে নিষিদ্ধ করার কথাও বলেছেন তারা।

বাংলাদেশে অবাধ ও  সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন এবং দক্ষিণ এশিয়ায় শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের মতো স্বৈরতান্ত্রিকতা বন্ধে গত ১৭ মে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে লেখা এক চিঠিতে এই আহবান জানান রিপাবলিকান দলীয় কংগ্রেসের সদস্য--স্কট পেরি, বেরি মুরে, ওয়ারেন ডেভিডসন, বব গুড, টিম বারচেট এবং কেইথ সেলফ। চিঠির একটি কপি এই প্রতিবেদকের কাছে প্রেরণ করেছেন চিঠির নেতৃত্ব নেয়া হাউস ফ্রিডম ককাসের চেয়ারম্যান কংগ্রেসম্যান স্কট পেরির কমিউনিকেশন ডাইরেক্টর জে অস্ট্রিচ।

চিঠিতে মানবাধিকার লংঘনের দায়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন এই কংগ্রেস সদস্যরা। বাংলাদেশের জনগণ যাতে অবাধ এবং সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পায় সেজন্য এ দ্রুত ব্যবস্থা প্রয়োজন বলে তারা চিঠিতে উল্লেখ করেন।

বাংলাদেশে বিরোধীমতের ওপর দমন-নিপীড়ন প্রসঙ্গে চিঠিতে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে দেশটির লাখো মানুষ। এই সুষ্ঠু নির্বাচনই হাসিনার সরকার পরিবর্তনে তাদের একমাত্র আশা। এই আন্দোলন দমাতে নির্যাতন, গুম এবং বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডের অন্যতম হাতিয়ার র‍্যাবকে ব্যবহার করে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের গ্রেফতার, ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছে, এমনকি হত্যা পর্যন্ত করা হয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচসহ বিভিন্ন সংস্থা র‍্যাবকে সরকারের 'ডেথ স্কোয়াড' হিসেবে উল্লেখ করেছে।

এতে আরও বলা হয়, জার্মানভিত্তিক ডয়েচে ভেলে এবং সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজের এক সাম্প্রতিক অনুসন্ধানী রিপোর্টে র‍্যাবের দুই হুইসেল ব্লোয়ার জানিয়েছে, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমতি ছাড়া এসব বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড এবং গুম করার সুযোগ নেই।

চিঠিতে বলা হয়েছে, এক বছেররও বেশী সময় আগে গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের দায়ে র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র। এই নিষেধাজ্ঞার পরও হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশের জনগণের ওপর নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই নিষেধাজ্ঞা শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের জঘণ্য মানবাধিকার লংঘন এবং গণতন্ত্রের অবক্ষয় রোধে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারেনি।

হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের সমালোচনা করে চিঠিতে বলা হয়েছে, হাসিনা একদিকে যেমন দেশের জনগণের ওপর অন্যায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে, অন্যদিকে তা দক্ষিণ এশিয়ায় তার মতো মিত্রদের উৎসাহ যুগাচ্ছে। এটা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয়  নিরাপত্তার স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর। কারণ এই অপরাধীরা চীন এবং রাশিয়ার ঘনিষ্ট হতে যাচ্ছে।

চিঠিতে কংগ্রেসের সদস্যরা যথাযথ পদক্ষেপ নেবার আহবান জানিয়ে লিখেছেন, “নিরপক্ষে নির্বাচন আয়োজনের স্বার্থে বাংলাদেশের সুনির্দিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হোক এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী আইনশৃঙ্খলা ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে নিষিদ্ধ করা হোক।”

চিঠিতে বলা হয়েছে, “২০০৯ সালে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় বসার পর থেকে হাজারো মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে যার  বর্ণনা জাতিসংঘ এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ফ্রিডম হাউসসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার রিপোর্টে উঠে এসেছে। রিপোর্টগুলোতে বলা হয়েছে-  হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে প্রত্যাখান করেছে, ব্যাপকভাবে নাগরিকদের মানবাধিকার লংঘন করেছে, নির্যাতন এবং বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে, সাংবাদিকদের জেলে পাঠিয়েছে, বিরোধীদলের লোকদের গুম করেছে এবং শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীদের ওপর হামলা চালিয়েছে এবং হত্যা করেছে।”

এতে বলা হয়েছে, “হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের এসব পরিকল্পিত মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা শুধু যে রাজনৈতিক বিরোধী মতের সঙ্গে ঘটেছে তা নয় বরং নৃগোষ্ঠী এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুরাও এ সরকারের হাতে নির্যাতিত হয়েছে।”

এতে বলা হয়,  “শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটিতে হিন্দু জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অর্ধেক কমেছে। লটুপাট, ঘরে আগুন দেওয়া, মন্দির এবং মূর্তি ভাঙচুর, খুন, ধর্ষণ এবং জোর করে ধর্মান্তরিতসহ নানা নির্যাতনের কারণে হিন্দুরা বাংলাদেশ ত্যাগ করছে। শেখ হাসিনার সরকারের শাসনামলে সংখ্যালঘু খ্রিস্টানরাও নির্যাতিত হয়েছে। খ্রিস্টানদের গির্জা লুটপাট, আগুন এবং যাজকদের কারাগারে পাঠানোর মতো ঘটনা ঘটেছে।  এবং ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ রয়েছে।”

এনআর/