মুশফিকুল ফজল আনসারী
বাংলাদেশীরা কীভাবে জীবন ধারণ করবে তা দেশটির নিজস্ব সিদ্ধান্তের বিষয়। এবিষয়ে কোনো কিছু বলে দেয়া ঠিক হবেনা বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্র সফররত কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী।
বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় প্রেসক্লাবে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে মতবিনিময়কালে বাংলাদেশ পরিস্থিতি সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন ভারতের কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। কংগ্রেস নেতা জওহর লাল নেহেরু, ইন্দিরা গান্ধী এমনকি তার বাবা রাজিব গান্ধীও এই প্রেসক্লাবে এসে মতবিনিময় করেছিলেন।
মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তার বিরুদ্ধে করা মামলা, ভারতের চলমান পরিস্থিতি, গণমাধ্যম, ভূ-রাজনীতিসহ নানান বিষয় নিয়ে কথা বলেন রাহুল গান্ধী।
বাংলাদেশ পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তার কাছে জানতে চাওয়া হয়, “গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের জন্য বাংলাদেশে মানুষকে লড়তে হচ্ছে। আপনি কী বিষয়টি সম্পর্কে অবগত?”
জবাবে রাহুল বলেন, “বাংলাদেশ ভারতের বন্ধু। তবে বাংলাদেশের মানুষকেই তাদের চলার পথ ঠিক করতে হবে। এক্ষেত্রে আমার বলে দেয়া উচিত হবেনা।”
আগামী বছরই ভারতে লোকসভার নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশটির বিরোধীদলের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে এই কংগ্রেস নেতা বলেন, “বিরোধীদলগুলো দারুণভাবে ঐক্যবদ্ধ। এবং এই ঐক্যবদ্ধ সম্পর্ক সামনের দিনগুলোতে আরও মজবুত হবে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমরা সংলাপ করছি। বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে এই সংলাপটা একটু জটিলই বলা যায় কারণ এখানে দেয়া এবং নেয়ার একটা বিষয় থাকে। তবে আমি মনে করি এ কাজটা আমরা পারবো (বিজেপি বিরোধী বিরোধীদলগুলোর জোট)।”
তিনি বলেন, “আগামী নির্বাচনে কংগ্রেস খুব ভালো করবে। এটা মানুষকে চমকে দেবে।”
প্রধানমন্ত্রীকে অবমাননা করার অভিযোগে করা মামলা প্রসঙ্গে কংগ্রেসের এই শীর্ষ নেতা বলেন, “আমাকে রাজনীতিতে অযোগ্য ঘোষণা করাটা বরং সুবিধাই এনে দিয়েছে।”
তিনি বলেন, “এই মামলার মাধ্যমে আমি নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করার সুযোগ পেলাম। যদি সত্যি কথা বলি তাহলে বলতে হয়, তারা (সরকার) আমাকে একটা উপহার দিয়েছে। তারা নিজেরাও এটা বুঝেনি কিন্তু তারা এটা করেছে।”
রাহুল বলেন, “লাখো লাখো মানুষের কন্ঠকে ভয় দেখিয়ে দমানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।”
ভারতের গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং চলমান দলন-নিপীড়ন প্রসঙ্গে রাহুল বলেন, “গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্রমেই দুর্বল হচ্ছে, এটা লুকানোর কিছু নেই। সবাই জানে- ভারতে এ বিষয়টা এখন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। পৃথিবীর অন্য দেশের সবাই এটা দেখতে পাচ্ছে। আমি মনে করি একটি দেশের গণতন্ত্রের জন্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা খুবি গুরুত্বপূর্ণ। একজনকে স্বাধীনভাবে সমালোচনার সুযোগ দিতে এবং অপরজনকে সে সমালোচনা শুনতে হবে। আর এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই গণতন্ত্র মজবুত হয়। অবশ্যই ভারতে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দুর্বল হচ্ছে।”
তিনি বলেন, “শুধু গণমাধ্যম নয় বরং আরও নানাবিধ ক্ষেত্রে স্বাধীনতা খর্ব হচ্ছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেগুলো সমালোচনা করতে পারে এবং যে প্রতিষ্ঠানগুলো ভারতের জনগণকে সমাঝোতার ক্ষেত্রে সহায়তা করে- সেসকল প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হচ্ছে।”
রাহুল মতবিনিময়ের সময় কৌতুক করে উপস্থাপককে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বাধাগ্রস্থ হবার বিষয়টি নিয়ে মােদীকে প্রশ্ন করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এটা খুব সঠিক কাজ হবে। আমি জানিনা মিডিয়ায় এটার উত্তর শুনতে পাবো কীনা। তবে তাকে সরাসরি এ নিয়ে প্রশ্ন করাটাই খুব ভালো হবে।
ভারতের নাগরিকত্ব আইন এবং এ আইনের কারণে যেসকল মুসলিম সে দেশে বাস করছেন তাদের নাগরিকত্ব বাতিল হওয়া প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে রাহুল বলেন, “আমি মনে করি ভারতের সকল নাগরিকের মত প্রকাশের অধিকার রয়েছে, প্রত্যেকের ধর্মীয় স্বাধীনতা পাবার অধিকার রয়েছে, ভারতের সকল গোষ্ঠীর স্বাধীনভাবে চলার অধিকার রয়েছে। আমি কোনো গোষ্ঠী কিংবা সমাজের মধ্যে পার্থক্য করিনা। আমি যেটা এখানে বলেছি- যতটা স্বাধীন এবং মুক্তভাবে আলোচনার ক্ষেত্র তৈরি হবে ভারত ততটা শক্তিশালী হবে।”
বিজেপি সরকারের শাসনের সমালোচনা করে বিরোধী দলীয় নেতা রাহুল বলেন, “তারা (সরকার) সমাজে ঘৃণা ছড়িয়েছে। সমাজে মেরুকরণ করেছে। তারা জনবান্ধব নয়, সবার সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে চায়না। সমাজকে তারা বিভক্ত করে ফেলেছে।”
এনআর/