কম্বোডিয়ায় সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা, বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা পুর্নব্যক্ত

কম্বোডিয়ায় সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা, বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা পুর্নব্যক্ত

মুশফিকুল ফজল আনসারী, স্টেট ডিপার্টমেন্ট সংবাদদাতা

কম্বোডিয়ায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন না হওয়ায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ব্যক্তিদের নামের তালিকা প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রধান মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, দেশটির কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কিন্তু ভিসা পলিসির কারণে সেসব ব্যক্তির নাম প্রকাশ করা হচ্ছেনা।

সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে বাংলাদেশে বিরোধী দলের বিক্ষোভে হামলা, ধর-পাকড় এবং সমাবেশে বাধা দেওয়ার কারণে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে কীনা এমন প্রশ্নের জবাবে এই মুখপাত্র বলেন, যেমনটি অন্য দেশের ক্ষেত্রে জানিয়েছি, ঠিক একই কারণে  ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ অন্য যেকোনো ধরনের নিষেধাজ্ঞা আরোপের তথ্য যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ করেনা। তবে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতাগুলো তিনি ফের উল্লেখ করেন।

সোমবার স্টেট ডিপার্টমেন্টের নিয়মিত ব্রিফ্রিংয়ে কম্বোডিয়ায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে করা একাধিক প্রশ্নের জবাবে এই মন্তব্য করেন মুখপাত্র মিলার।

বাংলাদেশে মানবাধিকার কর্মীদের হুমকি, হয়রানি এবং নির্যাতন প্রসঙ্গে মিলার বলেন, মানবাধিকারের চর্চায় যেকোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান। 

কম্বোডিয়ার নির্বাচন প্রসঙ্গে ব্রিফ্রিংয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট সংবাদদাতা মুশফিকুল ফজল আনসারী জানতে চান, “কম্বোডিয়ার নির্বাচন প্রসঙ্গে আপনি রবিবার বলেছেন- দেশটিতে নির্বাচন অবাধ কিংবা  সুষ্ঠু এর কোনোটাই হয়নি। যুক্তরাষ্ট্র এ জন্য দেশটির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা কাদের ওপর আরোপ করা হয়েছে একটু বিস্তারিত জানাবেন? কারণ দেশটিতে নির্বাচন হয়নি বরং সিলেকশন (বাছাই) হয়েছে। আমি জানতে চাচ্ছিলাম কম্বোডিয়ান সরকার এবং নেতাদের মধ্যে কারা এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে?”

জবাবে মিলার বলেন, “আমরা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ঐসব ব্যক্তিদের নাম জনসম্মুখে প্রকাশ করিনা। আমরা দেশটির কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছি কিন্তু পলিসির  অংশ হিসেবে সেসব নাম আমরা প্রকাশ করছিনা।”

বাংলাদেশ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর অব্যাহত নিপীড়ন প্রসঙ্গে মুশফিক জানতে চান, “সারা বাংলাদেশে বিরোধী দলের লাখো লাখো কর্মী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছে। তাদের সেসব শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে হামলা করছে সরকার। বিরোধী দলের সমাবেশ চলাকালে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে, পুলিশ বিরোধী কর্মীদের মোবাইল ফোন তল্লাশি করছে, হাজারো নেতা-কর্মীর নামে মামলা হচ্ছে এবং গ্রেফতার করা হচ্ছে, এমনকি মামলায় বিরোধী দলের মৃত কর্মীদেরকেও আসামী করা হচ্ছে। যারা এভাবে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বাধা প্রদান করছে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে যুক্তরাষ্ট্র কী তাদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে?”

জবাবে স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র বলেন, “পলিসির অংশ হিসেবে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিস্তারিততথ্য আমরা কখনো প্রকাশ করিনা যেমনটা আপনার আগের প্রশ্নের উত্তরে অন্যদেশের ক্ষেত্রে বলেছি। তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন ২৪ মে ভিসা বিধিনিষেধ ঘোষণার সময় এটা স্পষ্ট করে বলে দিয়েছেন যে, যেকোনো ব্যক্তি বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অন্তরায় সৃষ্টিকারী মনে হলে তার বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়ায় বাধা দেওয়া, ভোট কারচুপি, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন, জনগণকে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ আয়োজনে বাধা প্রদান এবং সভা-সামবেশ ও সাংগাঠনিক কার্যক্রমে বাধা দেওয়া- এসকল কাজকে গণতান্ত্রিক নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধা হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এপদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে রাজনৈতিক দল, ভোটার, সুশীল সমাজ, মিডিয়া এবং বিরোধী মতের কথা চিন্তা করে।”

মানবাধিকার পরিস্থিতির ক্রমাবনতি নিয়ে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের এক রিপোর্টের প্রসঙ্গে উল্লেখ করে এই সংবাদদাতা জানতে চান, “সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টের তথ্যমতে বাংলাদেশে ৮৬ শতাংশ মানবাধিকার কর্মীরা রাষ্ট্র এবং ব্যক্তি দ্বারা হুমকি, হয়রানি এবং নির্যাতনের শিকার। তহবিল নিয়ন্ত্রণকে সরকার মানবাধিকার কর্মীদেরকে বিরুদ্ধে একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। কারণ এনজিও বিষয়ক ব্যুরো অফিস  প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের নিয়ন্ত্রণে। একারণে অনেক এনজিওর অনুদান পেতে সমস্যা হচ্ছে। কর্মীরা বেতন পর্যন্ত পাচ্ছেনা বলে আমরা শুনতে পাচ্ছি। বাংলাদেশের উন্নয়নে বড় অংশীদার দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বিষয়টি কী উদ্বেগের নয়?”

জবাবে মিলার বলেন, “আমরা এটা সমর্থন করি যে, সবাই যেনো গণতান্ত্রিক সমাজে মুক্তভাবে তাদের অধিকারের চর্চা করতে পারে।মানবাধিকারের চর্চায় যেকোনো নিয়ন্ত্রণ আরোপের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান।”

এনআর/